Advertisement
০২ মে ২০২৪
CPM TMC BJP

নেতারা মুখে আনবেন না, তবে ‘অভিষেকসূত্রে’ ফের ‘বিজেমূল’ শব্দবন্ধ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় সিপিএম

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিপিএম ‘বিজেমূল’ বলে প্রচার করেছিল। কিন্তু ভোটের পর কেন্দ্রীয় কমিটি বলে, বিজেপি-তৃণমূলকে এক করে দেখানো একেবারেই দলবিরোধী কাজ হয়েছে।

CPM TMC BJP

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:০০
Share: Save:

বিজেপি-তৃণমূলকে আবার ‘এক’ করে দেখানোর প্রক্রিয়ার সলতে পাকানো শুরু করছে সিপিএম। তবে সরাসরি নয়, চোরাগোপ্তা ভাবে। খানিকটা আড়াল রেখে। খানিকটা পিছন থেকে। তাদের পুরনো শব্দবন্ধ ‘বিজেমূল’, যা খারিজ করে দিয়েছিল দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, এখন তা ‘মানুষের’ নামে চালাতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তবে সিপিএমের রাজ্য দফতরের নেতাদের অবস্থা অনেকটা সেই জনপ্রিয় গানের মতো— ‘বলব বলব করছি, কিন্তু বলতে পারছি না’! কারণ, বললেই দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার অভিযোগে বিদ্ধ হতে হবে।

বেছে বেছে বড় রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনেই তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তলব নিয়ে ইতিমধ্যেই এই আলোচনা শুরু হয়েছে, ইডি বা সিবিআই কি সচেতন ভাবেই অভিষেকের রাজনৈতিক ‘গুরুত্ব’ বাড়িয়ে দিতে চাইছে? বাংলার প্রধান বিরোধীদল বিজেপির নেতাদের একটি অংশও ঘরোয়া আলোচনায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উপর ‘বিরক্তি’ গোপন করছেন না। ‘বিদ্রোহী’ বিজেপি নেতা তথাগত রায়ও কেন্দ্রীয় বিজেপির সঙ্গে বাংলার শাসকদলের ‘সেটিং’ তত্ত্ব নিয়ে সরব হয়েছেন। সিপিএম ‘সেটিং’ বা ‘বোঝাপড়া’র কথা খোলাখুলি বললেও ‘বিজেমূল’ শব্দটা আর বলছে না। তবে ভিতরে ভিতরে বলানোর চেষ্টা জারি রেখেছে। বিভিন্ন ফেসবুক পেজে, বিভিন্ন পোস্টের কমেন্টে ‘হ্যাশট্যাগ’ দিয়ে ফের ‘বিজেমূল’ লেখা শুরু করেছে সিপিএমের সামাজিক মাধ্যমের বাহিনী।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে যে সেটিং রয়েছে, তা না বোঝার কোনও কারণ নেই। গোয়ার নির্বাচনে তৃণমূলের লড়তে যাওয়া, ১০ লক্ষ লোককে নিয়ে দিল্লি যাওয়ার ঘোষণার পর যখন তা দানা বাঁধছে না, তখন ট্রেন বাতিল করে বিতর্ক তৈরি করে দেওয়া— এ সবই সেই সেটিংয়ের অংশ। কিন্তু ‘বিজেমূল’ কোনও রাজনৈতিক স্লোগান নয়। যেহেতু তৃণমূল থেকে বিজেপি, বিজেপি থেকে তৃণমূলে নেতাদের যাতায়াত চলছে, সেহেতু মানুষ এই স্লোগানটা দিচ্ছেন।’’

আবার তরুণ নেতা সৃজন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘পার্টি ওই শব্দবন্ধকে মান্যতা দেয় না। কারণ, আমরা মনে করি, বিজেপির সঙ্গে আর কোনও রাজনৈতিক দলকেই এক করে দেখা যায় না। সমান-সমানও বলা যায় না।’’

প্রকাশ্যে এই নেতারা যা-ই বলুন, অনেক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় এমনও বলতে শুরু করেছেন যে, এই পরিস্থিতিতেও যদি ‘বিজেমূল’ না বলা যায়, তা হলে তো বিজেপির বিরুদ্ধে গঠিত জোট ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটিতেও তৃণমূলের সঙ্গে যেতে সিপিএমের আপত্তি থাকার কথা নয়! বস্তুত, সিপিএমের একটি অংশ চাইছে, প্রকাশ্যেই আবার ‘বিজেমূল’ বলা শুরু হোক। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত ভেঙে আলিমুদ্দিনের ‘বিড়ম্বনা’ বাড়াতে চাইছেন না নেতারা। তাই এখন তাঁরা মানুষের নামে ‘বিজেমূল’কে চালাতে চাইছেন। সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘নেতারা না বলে যদি কর্মী-সমর্থকেরা ‘বিজেমূল’ বলেন, তা হলে তাঁদের কেউ দলের কর্মসূচি পড়াতে যাবেন না। সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না।’’ যার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলছেন, ‘‘সিপিএম চিরকাল এই বিভ্রান্তি ছড়ানোর রাজনীতি করে এসেছে। তার পরে নিজেরাই বিভ্রান্তির চক্রব্যূহে আটকে গিয়ে শূন্য হয়ে গিয়েছে। এ বারও তা-ই হবে।’’

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিপিএমের সব নেতা ‘বিজেমূল’ বলে প্রচার করেছিলেন। ‘টুম্পাসোনা’ গানের প্যারোডিতেও ওই শব্দ ব্যবহার করে প্রচার করেছিল সিপিএম। কিন্তু ভোটের পর কেন্দ্রীয় কমিটি স্পষ্ট বলে দেয়, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলকে এক করে দেখানো দলকে কোনও সাহায্য করেনি। বরং তা ক্ষতিই করেছে। পরে যা ভিডিওবার্তায় স্বীকারও করে নিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তার পর থেকে ‘বিজেমূল’ শব্দের দিকে আর ঘেঁষেননি ‘কমরেড’রা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষিত এবং আবহে নতুন করে তা ফেরাতেই নেমেছে সিপিএম। তবে দলগত ভাবে নয়। ‘মানুষের স্লোগান’এর মোড়কে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM TMC BJP Abhishek Banerjee ED CGO Complex
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE