Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হেঁশেলে টান, জিনিসের দাম বাড়ছে বসিরহাটে

মাছে-ভাতে বাঙালির প্রিয় জায়গা বসিরহাট। শহরের গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে ইছামতী। নদীর কৃপায় বসিরহাটের লোকের পাতে মাছের জোগানের অভাব হয় না কখনও। সেই বসিরহাটের মানুষ এখন এক টুকরো মাছের জন্য হেদিয়ে মরছেন।

টহল: বসিরহাটে আধাসেনা। শুক্রবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

টহল: বসিরহাটে আধাসেনা। শুক্রবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০৪:৫৮
Share: Save:

কালচে হয়ে যাওয়া এক ঝুড়ি কলা ইছামতীতে ঝুপ করে ফেলে দিলেন বাপ্পা নন্দী।

ফেলে দিলেন কেন? প্রশ্ন শুনে ব্যাজার মুখে বাপ্পা বললেন, ‘‘লোকে সব্জি-মাছ কিনতে পারছে না, ফল খাবে কী করে? সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’

সোমবার থেকে দফায় দফায় যে তাণ্ডব চলছে বসিরহাট শহরে, তার জেরে এ বার গৃহস্থের হেঁশেলে টান পড়েছে। একে তো কাঁচাবাজারের আকাল। যতটুকু যা মিলছে, তার দাম শুনে ভিরমি খাচ্ছেন সকলে। এ দিকে, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসেও কোনও কাজ হচ্ছে না। এটিএমের ঝাঁপ বন্ধ। লোকের হাতে টাকাও নেই। শহরের এক প্রবীণ নাগরিক তো বলেই ফেললেন, ‘‘নোট-বন্দির সময়েও এমন টানাটানির মধ্যে পড়িনি।’’

মাছে-ভাতে বাঙালির প্রিয় জায়গা বসিরহাট। শহরের গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে ইছামতী। নদীর কৃপায় বসিরহাটের লোকের পাতে মাছের জোগানের অভাব হয় না কখনও। সেই বসিরহাটের মানুষ এখন এক টুকরো মাছের জন্য হেদিয়ে মরছেন। বৃহস্পতিবার সকালে টাউন হলের বাজারে দেখা গেল, এক বিক্রেতার ঝুড়িতে হাতে গোনা দু’টো চারাপোনা। এ দিকে, সেখানেই হামলে পড়েছেন বিশ-তিরিশ জন। সেই দু’খানা মাছ কিনে যুদ্ধ জয়ের হাসি হেসে বেরিয়ে এলেন এক যুবক। বললেন, ‘‘এ ক’দিনে ডিম খেতে খেতে তো মুখে চড়া পড়ে গিয়েছে।’’

পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অবশ্য সেই ডিমও আর জুটবে না। পাড়ার অলিগলির ভিতরে দোকানে যে সব জায়গায় ডিম পাওয়া যাচ্ছে, দোকানি যা মুখে আসছে, তেমন দর হাঁকাচ্ছেন। সাড়ে ৪ টাকার ডিম এ ক’দিন বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৮ থেকে
১২ টাকায়।

বাজারে সব জিনিসপত্রের দামই চড়চড় করে বাড়ছে। মাছ, দুধ তো পাওয়াই যাচ্ছে না। ১০-১২ টাকা কেজির কুমড়োর দাম এখন ৪০-৫০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ৪০-৫০ টাকার টম্যাটোর দাম প্রায় দ্বিগুণ। ৬ টাকা-৮ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ১১-১২ টাকায়।

বাধা: বসিরহাট যাওয়ার পথে বিজেপির (বাঁ দিক থেকে) রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, শমীক ভট্টাচার্য, সুভাষ সরকার এবং জয়প্রকাশ মজুমদারকে আটকে দিল পুলিশ। শুক্রবার মধ্যমগ্রামে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

যারা বেশি টাকা গুনে বাজার সারলেন, তাঁরাও যে বাড়ি ফিরে নিশ্চিন্তে রান্না করবেন, তার ঠিক নেই। বাড়িতে গ্যাসও বাড়ন্ত। শহরের বাসিন্দা লিলি দাস জানালেন, গ্যাসের জোগান নেই। তাই কাঠের উনুন বানিয়েছেন উঠোনে।

শহর পেরিয়ে গ্রামের দিকে অবশ্য শাক-সব্জির অভাব নেই। কিন্তু বসিরহাট থেকে চাল-ডাল বা অন্যান্য জিনিসপত্র সেখানে না পৌঁছনোয় সেখানেও সমস্যায় পড়েছেন মানুষ। সন্দেশখালির নিরাপদ সামন্ত জানালেন, জোগান কম থাকায় চালের দাম কেজি-প্রতি ৫-১০ টাকা বেড়ে গিয়েছে।

শহরে অটো, টোটো, ভ্যান সব বন্ধ। রাস্তায় বেরোতেই ভয় পাচ্ছেন লোকজন। টোটো চালক বাবু পাল বলেন, ‘‘নিজের গাড়ি নয়। রোজ মালিককে টাকা দিতে হয়। রোজগার বন্ধ হওয়ায় সেই টাকা দিতে সমস্যা হবে।’’

বসিরহাটের তুলনায় বাদুড়িয়া অবশ্য অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাজার-দোকান সবই খোলা। জিনিসপত্রের দাম মোটামুটি ঠিকই রয়েছে। কিন্তু স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন সমস্যায়। সোমবার এখানে গোলমাল ছড়িয়েছিল। বাজার এখনও খোলেনি। প্রচুর লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষেরও। ব্যবসায়ী অজিত রায় বলেন, ‘‘দোকানপাট খুলতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সকলে আতঙ্কিত। পুলিশ-প্রশাসন পাশে দাঁড়ালে ভাল।’’

পরিস্থিতি এমনই, দু’এক দিনের মধ্যে দোকানপাট না খুললে, শহর কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ স্বাভাবিক না হলে দার্জিলিঙের মতো অবস্থা হবে না তো? মারপিট, হাঙ্গামার পাশাপাশি এই ভয়টাও এখন বাসা বেঁধেছে বসিরহাটবাসীর মনে।

তবে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, আজ শনিবার থেকে খাদ্যসামগ্রী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে বসিরহাটে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE