Advertisement
০২ মে ২০২৪

আকাল খুচরোর, অবশেষে দু’দিন টোল রেহাই কেন্দ্রের

একে তো খুচরোর আকাল। তার উপরে পাঁচশো আর হাজার টাকার নোট বাতিলের জেরে একশো টাকার নোট প্রায় দুষ্প্রাপ্য। এই অবস্থায় ৪৫, ৯০ বা ২০০ টাকার টোল ট্যাক্স নিয়ে বুধবার বিকেল পর্যন্ত টানাপড়েন চলে টোলকর্মী আর গাড়িচালকদের মধ্যে।

গাড়ির সারি। বুধবার বালি টোল প্লাজায়। — নিজস্ব চিত্র।

গাড়ির সারি। বুধবার বালি টোল প্লাজায়। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৮
Share: Save:

একে তো খুচরোর আকাল। তার উপরে পাঁচশো আর হাজার টাকার নোট বাতিলের জেরে একশো টাকার নোট প্রায় দুষ্প্রাপ্য। এই অবস্থায় ৪৫, ৯০ বা ২০০ টাকার টোল ট্যাক্স নিয়ে বুধবার বিকেল পর্যন্ত টানাপড়েন চলে টোলকর্মী আর গাড়িচালকদের মধ্যে।

শেষ বিকেলে মুশকিল আসান হয়ে এল কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর আশ্বাস। তিনি জানিয়ে দেন, খুচরো-সমস্যার দরুন ১১ নভেম্বর অর্থাৎ কাল, শুক্রবার মাঝরাত পর্যন্ত দেশের কোনও টোল প্লাজায় টোল ট্যাক্স না-দিয়েই যানবাহন যাতায়াত করতে পারবে। এই ঘোষণার পরে স্বস্তির শ্বাস ফেলেন সব টোল প্লাজার কর্তৃপক্ষই। একটি টোল প্লাজার এক কর্তা বলেন, ‘‘খুচরো নিয়ে বিস্তর সমস্যা হচ্ছিল। কত ক্ষণ টানা যাবে, বোঝা যাচ্ছিল না। ভয় হচ্ছিল, আইনশৃঙ্খলার অবনতি না-হয়!’’

টোল নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল কেন?

এক কথায় জবাব, খুচরোর অভাব এবং পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিলের ধাক্কা। জোড়া সমস্যায় অনেক গাড়িচালকই টোল প্লাজায় পৌঁছে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। যেমন বালির রাজচন্দ্রপুরে নিবেদিতা সেতু টোল গেট পেরোনোর জন্য দেওয়ার কথা মাত্র ৪৩ টাকা। কিন্তু টোল প্লাজার কাউন্টারের সামনে এসে এক গাড়িচালক বাড়িয়ে দিলেন হাজার টাকার নোট! টোলকর্মী প্রথমে তা নিতে রাজি হননি। কিন্তু চালক নাছোড়। খুচরো দিতেই হবে। অগত্যা টোলকর্মী ৫০০ টাকার একটি নোট-সহ বাকি টাকা ফেরত দিতে চাইলেন।

গাড়িচালক ৫০০ টাকার নোট নিতে নারাজ। তাঁর দাবি, ১০০ বা ৫০ টাকার নোট দিতে হবে। ফের কথা কাটাকাটি। টোলকর্মী শেষ পর্যন্ত চালকের দাবিই মেনে নিলেন। কেননা, এক-একটি গাড়ির সঙ্গে খুচরো নিয়ে বচসার জেরে টোল প্লাজায় গাড়ির লম্বা লাইন পড়ছে।

মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত কমবেশি এই ছবি দেখা গিয়েছে রাজ্যের সব টোল প্লাজায়। যদিও এ দিন সকালে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কলকাতার প্রজেক্ট ডিরেক্টর এস কে কুশওয়াহা বলেছিলেন, ‘‘সব টোল প্লাজাকেই নির্দেশ দিয়েছি, ১১ নভেম্বর রাত পর্যন্ত পাঁচশো আর হাজার টাকার নোট নিতে হবে। গাড়িচালকদের যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, সেটা দেখাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’’

অনেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশকেই কাজে লাগিয়েছেন বলে মনে করছেন টোলকর্তারা। ১১ নভেম্বর পর্যন্ত টোল প্লাজায় বড় নোট নেওয়া হবে জেনে অধিকাংশ গাড়িচালকই টোল প্লাজা পেরোনোর সময় নোট ভাঙিয়ে নিয়েছেন।

কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা থেকে গঙ্গা পেরিয়ে দুই ও ছয় নম্বর জাতীয় সড়কে যাতায়াত করতে হলে নিবেদিতা সেতু পেরোতে হয়। বালির রাজচন্দ্রপুরে ওই সেতুর টোল প্লাজায় মঙ্গলবার রাত থেকেই গাড়ির লম্বা লাইন পড়তে শুরু করে। রাতে কলকাতার দিকে আসার লেনে লরি এবং অন্যান্য গাড়ি সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সমস্যা বাড়ে ভোরের আলো ফুটতেই। সেই সময় কলকাতার দিক থেকে জাতীয় সড়কে যাওয়ার রাস্তায় গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে। বালি হল্ট ছাড়িয়ে চলে যায় লরি, চার চাকার ছোট গাড়ি, দূরপাল্লার বাসের সারি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে টোল প্লাজায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

অধিকাংশ গাড়িচালকই পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট বাড়িয়ে দেওয়ায় বাকি টাকা ফেরত দিতে হিমশিম খেয়ে যান টোলকর্মীরা। নিবেদিতা সেতু টোল প্লাজার চিফ অপারেশন্স অফিসার প্রবীণ বসন্ত বলেন, ‘‘খুচরো দেওয়ার চেষ্টা চলছে। খুচরো দিয়ে সহযোগিতার জন্য মাইকে ঘোষণা করে এবং পোস্টার সেঁটে অনুরোধও করা হচ্ছে।’’ বিদ্যাসাগর সেতুতেও একই সমস্যা দেখা দেয়।

খুচরো নিয়ে ঝামেলা ছ’নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে ধুলাগড় টোল প্লাজাতেও। যাওয়া ও ফেরার জন্য সেখানে এক বারে টোল-টিকিট কাটার সুবিধা রয়েছে। এ দিন সকালে দেখা যায়, কলকাতার দিক থেকে এক বার খড়্গপুরের দিকে যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ২৯০ টাকার টোল দিতেও লরিচালকেরা হাজার টাকার নোট বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ধুলাগড় টোল প্লাজার ম্যানেজার রবি মিশ্র দুপুরে বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক, এটিএম কোনও জায়গা থেকেই আমরা খুচরো পাচ্ছি না। তহবিলে থাকা খুচরো শেষ হয়ে গেলে কী হবে, সেটাই চিন্তার।’’

সামান্য টোল মেটাতে পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট দিচ্ছেন কেন?

‘‘কী করব বলুন! অনেক দূর যেতে হবে। রাস্তায় চা কিংবা খাবার খেতে হলে তো খুচরো দিতে হবে। তাই এখানে ভাঙিয়ে নিচ্ছি,’’ সহাস্য জবাব ওই টোল প্লাজায় গাড়ির দীর্ঘ লাইনে থাকা এক গাড়িচালকের।

দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে পালশিট টোল প্লাজায় দূরপাল্লার বড় গাড়ির কাছ থেকে পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট নিলেও যাত্র্রিবাহী ছোট গাড়ি বা মালবাহী গাড়ির কাছ থেকে তা নিতে চাননি টোলকর্মীরা। ওই সব গাড়ির চালকদের ১০০ টাকা দিতে অনুরোধ করেন টোলকর্মীরা। কিন্তু যাঁরা তা শুনতে চাননি, তাঁদের খুচরো ফেরত দেওয়ার সময় টোলের কর্মীরা ১০ টাকার মুদ্রা দিতে শুরু করেন। তাতে অনেকটা কাজ হয়েছে বলে জানান এক শ্রেণির টোলকর্মী। তাঁদের কথায়, ‘‘সামনের গাড়িকে ১০ টাকার কয়েন দিতে দেখে পিছনের অনেক গাড়িই ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বার করেও পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছেন।’’ ওই রাস্তার উপরে রয়েছে ডানকুনি টোল প্লাজা। সেখানে গাড়িচালকদের খুচরো টাকা ফেরত দিতে তেমন কোনও সমস্যা হয়নি।

কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কলকাতা ডিভিশনের অধীনে থাকা বেলিয়াড টোল প্লাজা রয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মধ্যে। এ দিন সেই প্লাজায় খুচরো নিয়ে সমস্যা হয় এবং গাড়ির বিশাল লাইন পড়ে যায়। ওই রাজ্যের তরফে বিষয়টি জানানো হয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে। সেখানে পৌঁছে যান জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আধিকারিকেরা। পরে তাঁরা জানান, সেখানে তেমন কোনও সমস্যা হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন টোল প্লাজায় খুচরো আর বড় নোট নিয়ে দিনভর টানাপড়েনও শেষ হয় শেষ বিকেলে কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রীর আশ্বাসে। দু’দিন টোল রেহাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

centre toll tax
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE