Advertisement
E-Paper

টাকা না মেলায় ৪ ব্যাঙ্কে তালা গ্রাহকদের

কলকাতায় নতুন পাঁচশো টাকার নোটে কিছু স্বস্তি এসেছে। কিন্তু শহর ছাড়িয়ে মফস্সল বা গ্রামে এখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন শেষে হাতে হয়তো রয়ে যাচ্ছে স্রেফ পেনসিল! ভোর থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পরে সকালে ব্যাঙ্ক খোলার সময় শুনতে হয়েছে, আজ টাকা পাবেন না!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫০
দুর্ভোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ। সোমবার ধূপগুড়ির ডাউকিমারিতে রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

দুর্ভোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ। সোমবার ধূপগুড়ির ডাউকিমারিতে রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

কলকাতায় নতুন পাঁচশো টাকার নোটে কিছু স্বস্তি এসেছে। কিন্তু শহর ছাড়িয়ে মফস্সল বা গ্রামে এখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন শেষে হাতে হয়তো রয়ে যাচ্ছে স্রেফ পেনসিল! ভোর থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পরে সকালে ব্যাঙ্ক খোলার সময় শুনতে হয়েছে, আজ টাকা পাবেন না!

এমন অভিজ্ঞতার জেরে সোমবার রাজ্যের চার জায়গায় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল গ্রাহকদের। খেপে গিয়ে ব্যাঙ্কে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। উত্তরে কোচবিহার জেলায় ভেটাগুড়িতে, জলপাইগুড়ি জেলায় ধূপগুড়ি এলাকার শালবাড়ি জুড়াপানি ও ডাউকিপানিতে এবং দক্ষিণে বাঁকুড়া জেলায় রানিবাঁধে এমন ঘটনা ঘটেছে। চারটি ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের ক্ষোভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কোথাওই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা বিশেষ শোনা যায়নি তাঁদের মুখে।

জেলায় জেলায় ব্যাঙ্ক-এটিএমে আসা মানুষজনের একটা বড় অংশই জানিয়েছেন, পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিল করায় কালোবাজারিরাই বিপাকে পড়ছে বলে তাঁরা মনে করেন। দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে টাকা তুলতে হলেও অনেকেই তাই মোদীর এই পদক্ষেপে এর বিরুদ্ধে সরব নন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হলেও কেউ কেউ বলেছেন, ‘‘কাজটা তো প্রধানমন্ত্রী ভালই করেছেন। শুধু যদি একটু সব দিক দেখেশুনে করতেন, তা হলে আমাদের এই হয়রানিটা হতো না!’’ কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির ওই তিন ব্যাঙ্কের গ্রাহকরাও এ দিন বলেছেন, লাইন দিতে তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু দিনের পর দিন লাইন দিয়েও যদি খালি হাতে ফিরতে হয়, তা হলে সংসার চলে কী করে!

যেমন মজিয়া বিবি। কোচবিহার শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভেটাগুড়ি এলাকায় এ দিন ভোর থেকে আঞ্চলিক ব্যাঙ্কের এক শাখায় লাইন দিয়েছিলেন তিনি। ওই ব্যাঙ্কে তাঁর সাড়ে ১২ হাজার টাকার মতো রয়েছে। তার কিছুটা তুলবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু চার দিন ধরে ঘুরেও টাকা মেলেনি। জানালেন, স্বামী ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। এখানে ন’বছরের মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি। দিনমজুরি করে সংসার চালান। নোট সমস্যা হওয়ার পর থেকে কাজ কমে গিয়েছে। আবার কাজ করেও খুচরোর অভাবে টাকা পাননি। মাজিয়া বিবির কথায়, “ঘরে শুধু চাল রয়েছে। গত রাতে কোনও ভাবে একটু তেল, নুন, সামান্য সব্জি জোগাড় করেছি। তা দিয়ে চলেছে। আজ কী খাব? মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে চোখে জল এসে যাচ্ছে।”

খারিজা বালাডাঙার মর্জিনা বেওয়া জানান, তাঁর ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতেন। কিছু দিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, “দ্রুত ছেলের চিকিৎসা প্রয়োজন। ব্যাঙ্ক টাকা দিচ্ছে না। কী করব বুঝতে পাচ্ছি না।” শুধু এঁরাই নন, গুরুতর সমস্যায় সৌদা বর্মন, রীনা বর্মন, সাহেববুদ্দিন মিয়াঁ, সত্যেন গোপরাও। এর মধ্যে ভোটের জন্য শনিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। আর রবিবার তো ছুটিই।

ধূপগুড়ির ডাউকিমারি গ্রামের বিকাশ বর্মন বললেন, “এখন আলু চাষের মরসুম। যদি রোজ টাকা তোলার জন্য লাইন দিই, তা হলে আলু বীজ ছড়াব কখন?’’ প্রায় একই অভিজ্ঞতা বাঁকুড়ার রানিবাঁধ এলাকার উত্তম কুম্ভকারেরও। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচশো টাকার বেশি টাকা দেওয়া হচ্ছে না। তার জন্য দিনভর লাইন। কাজকর্ম কখন করব? আর দিনের শেষে খাবই বা কী?’’

এঁদের সকলেরই রাগ ব্যাঙ্কের লোকজনের উপরে। বিশেষ করে সোমবার সকালে ব্যাঙ্কের ঢোকার সময় যখন তাঁরা লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকদের বলে দেন, টাকা নেই— তখনই আগুনে ঘি পড়ে। খেপে গিয়ে ভেটাগুড়ির গ্রাহকরা প্রথমে ব্যাঙ্কের দরজায় তালা ঝোলান। পরে পুলিশ ডেকে এনে নালিশ করেন, ব্যাঙ্ক দিনের পর দিন হয়রান করছে। আপনারা ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। তর্কাতর্কির পরে ভেটাগুড়িতে পথ অবরোধও করেন তাঁরা।

ভেটাগুড়ির ব্যাঙ্ক আধিকারিক, শালবাড়ি জুড়াপানি, ডাউকিপানি বা রানিবাঁধের ব্যাঙ্ক ম্যানেজার— সকলেরই বক্তব্য প্রায় এক। তা হল, এই গ্রাহকরাই দিনের পর দিন ধৈর্য ধরে লাইন দিয়েছেন। এক এক জন বড় জোর পাঁচশো-হাজার টাকা পাচ্ছেন। কখনও তা-ও দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা না আসাতেই গ্রামের লোকজনের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। কলকাতায় তা-ও নতুন পাঁচশো টাকার নোট এসে গিয়েছে। লাইন দিলেও সেখানে মানুষ এতটা তিতিবিরক্ত হচ্ছেন না।

ব্যাঙ্ককর্মীদের তাই আশা, আগামী ক’দিনে টাকার জোগান বাড়লেই গ্রাম বা মফস্সলেও আর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবে না মানুষের।

Customers money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy