আধুনিক বিশ্বে দুই দেশের দ্বন্দ্বে ‘সাইবার যুদ্ধ’ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা বোঝাতে গিয়ে বিশেষজ্ঞেরা নানা সময়ে পরমাণু যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা টেনেছেন। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষে সাইবার যুদ্ধের ব্যবহার হয়। কৃত্রিম মেধা এবং প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শত্রুপক্ষকে নাকানি-চোবানি খাওয়ানো থেকে শুরু করে সামরিক তথ্য চুরি— কিছুই কার্যত বাদ ছিল না। ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের মধ্যে শনিবার থেকে সংঘর্ষ বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দেশ। তবে ইতিমধ্যেই তা পাকিস্তান লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের আপাতত চোখ-কান খোলা রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন সাইবার বিশেষজ্ঞেরা।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই শুক্রবার তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে নিজস্ব এক্স হ্যান্ডেলে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের। কোনও ফাঁদে পা না দিয়ে অনলাইন নিরাপত্তা ও সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। শনিবার বিকেল ৫টার পরে সংঘর্ষ বিরতিতে সম্মত হয় ভারত-পাকিস্তান। তবে সীমান্তের ও-পার থেকে সাইবার আক্রমণের আশঙ্কা এখনও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞেরা।
শহরের সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি বা দু’টি দেশের সম্পর্কের অবনতি হলে সাইবার আক্রমণের চেষ্টা করা হয়। সামরিক শক্তিতে টক্কর দেওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শত্রু দেশের সামরিক তথ্য হাতানোর চেষ্টা চলে। ইন্টারনেট, ব্যাঙ্কিং, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা সাইবার হামলার মাধ্যমে নাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এই ‘সাইবার যুদ্ধ’ দেখা গিয়েছিল। ইন্টারনেট ‘জ্যাম’ করে দিয়ে শত্রু দেশের জনগণ যাতে কোনও ভাবে তার সুবিধা না নিতে পারে, সেই চেষ্টা করা হয়েছিল। ফলে আপাতত ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি হলেও সাইবার হামলার আশঙ্কা থাকছেই। ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, সংঘর্ষ বিরতির সঙ্গে সাইবার-যুদ্ধ বা আক্রমণ বন্ধ হবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা বিশেষ থাকে না। তাঁর কথায়, ‘‘প্রযুক্তির যুগে শত্রুপক্ষকে সামরিক দিক দিয়ে আক্রমণ করার পাশাপাশি তাদের সাইবার স্পেসকেও লক্ষ্যবস্তু করে তোলা হয়। হানাদারেরা মূলত সামরিক তথ্য হাতানোর সঙ্গে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা করে।’’ তিনি সতর্ক করে আরও বলেন, ‘‘এই ধরনের হানাদারদের জামতাড়া বা ওই ধরনের সাময়িক কারবারিদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং কৌশলে হানা দেয় এরা, যা সাধারণের পক্ষে যাচাই করা কষ্টকর।’’
শহরের আর এক সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় সতর্ক করে জানাচ্ছেন, আধুনিক যুদ্ধে ব্যবহৃত মিসাইল থেকে শুরু করে ড্রোন— সবই ডেটা নির্ভর। নির্দিষ্ট সময়ে সিগন্যাল পাওয়ার পরেই সেটি শত্রুপক্ষের দিকে ছুটতে শুরু করে। এই ‘সিগন্যালিং’ও এক ধরনের ডেটা। ফলে সাইবার হামলা করে এই ডেটা নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। শুধু তা-ই নয়, এই ডেটার সাহায্যে সরকারি তথ্য থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার তথ্য হাতানোর চেষ্টা করা হয়। সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে এই আশঙ্কা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। দেশের বাইরের এই হানাদারদের থেকে সতর্ক থাকতে এই সময়ে অচেনা লিঙ্কে ক্লিক বা অচেনা জায়গা থেকে আসা মিম, ভিডিয়ো শেয়ার না করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিভাস। কোনও ফাইল, গান বা ভিডিয়ো ডাউনলোড করার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। বিভাসের কথায়, ‘‘সীমান্তে জওয়ানেরা শত্রুপক্ষের মোকাবিলায় লড়ে চলেছেন। সাইবার হানা রুখতেও বিশেষজ্ঞেরা কাজ করছেন। আমরা যাতে এই সময়ে কোনও ভুল না করি, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ২০০৭ থেকে পাকিস্তান বিভিন্ন সময়ে ভারতে সাইবার আক্রমণের চেষ্টা করেছে। একাধিক বার সফলও হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের অসতর্ক হওয়ার অবকাশ নেই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)