Advertisement
E-Paper

হিসেব না-কষেই ভাঙা গাছ বিক্রি, প্রশ্নে নেতা

বেআইনি ভাবে ওই গাছ বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন হরিপাল থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য শম্পা দাস।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২০ ০৩:৫৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বন দফতরের পরিভাষায় মেহগনি ‘স্পেশাল ক্যাটেগরি’র গাছ। যার প্রতি কিউবিক মিটারের দাম ১৩-১৬ হাজার টাকা। ফলে, প্রায় ৫০ বছরের পুরনো একটি মেহগনির (উচ্চতা, মাপ, গাছের মান ইত্যাদি নিয়ে) বর্তমান বাজারদর অন্তত ৬০ হাজার টাকা।

প্রতি কিউবিক মিটার অর্জুন গাছের দাম ৭-১০ হাজার টাকা। বন দফতরই বলছে, এখন ৪০-৫০ বছরের একটি অর্জুন গাছের দাম পড়বে অন্তত ২৫ হাজার টাকা।

তা হলে প্রশ্ন, কিসের ভিত্তিতে মাত্র ৭৫ হাজার টাকায় হুগলির হরিপালের আশুতোষ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সুমিত সরকার এলাকার গ্রামীণ হাসপাতালে আমপানে ভেঙে পড়া মেহগনি, অর্জুন, শিরীষ-সহ অন্তত ১৭টি গাছ বিক্রি করলেন? বেআইনি ভাবে ওই গাছ বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন হরিপাল থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য শম্পা দাস। এ জন্য তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

সুমিতের দাবি, ‘‘বিএমওএইচের নির্দেশমতো স্পট-টেন্ডার করে গাছ বিক্রি করি। সব কিছু বিধি অনুযায়ীই করেছি। বিডিও-কেও জানিয়ে ছিলাম।’’ কিন্তু হরিপালের বিএমওএইচ কৌস্তভ ঘোষ বলেন, ‘‘আমপানের পরে রোগীদের হাসপাতালে ঢুকতে অসুবিধা হওয়ায় প্রধানকে গাছ সরাতে বলেছিলাম। বিক্রি করতে নয়। বন দফতরের বিট অফিসার গাছের তালিকা চেয়েছেন। আমি তা জোগাড়ের চেষ্টা করছি।’’ বিডিও তপন হালদার বলেন, ‘‘প্রধান গাছ বিক্রির পরে বিষয়টি আমাকে লিখিত ভাবে জানান।’’

আরও পড়ুন: ভাড়া না বাড়লে বাসও বন্ধ, কড়া হবে কি নবান্ন?

বন দফতর বলছে, ‘স্পট টেন্ডার’ (গাছ কিনতে আগ্রহী কয়েক জনকে ডেকে যিনি বেশি দাম দেবেন, তাঁকে বিক্রি। যদিও সরকারি ভাবে এমন টেন্ডার হয় না। নোটিস দিতে হয়) বলে তাদের কোনও বিধিই নেই। সরকারি জায়গার কোনও গাছ কেউ নিজের ইচ্ছে মতো কেটে বিক্রি করে দিতে পারেন না।

নিয়মটা কী? জেলা বন দফতরের এক কর্তা জানান, সরকারি জায়গায় গাছ কোনও ভাবে পড়ে গেলে তা সরকারি জায়গাতেই প্রথমে সরিয়ে রাখতে হয়। বন দফতরকে জানাতে হয়। দফতরের অফিসারেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সেই গাছের বয়স এবং দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মেপে দাম নির্ধারণ করেন। তার পরে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করাটাই বিধি। যিনি গাছের সবচেয়ে বেশি দাম দেবেন, তিনিই গাছ কেনার অধিকারী। সেই টাকা অনলাইনে সরকারি কোষাগারে জমা করাটাই নিয়ম।

আরও পড়ুন: নালীতে রক্ত জমে গিয়ে বাড়ছে বিপদ

সোমবারের মধ্যে ওই ৭৫ হাজার টাকা সুমিতকে সরকারি কোষাগারে জমা করতে নির্দেশ দিয়েছিল জেলা বন দফতর। কিন্তু এ দিনও সেই টাকা জমা পড়েনি জানিয়ে দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আশুতোষ পঞ্চায়েত থেকে আমাদের চিঠি দিয়ে ৭৫ হাজার টাকায় করাত-কলে গাছ বিক্রির কথা জানানো হয় সম্প্রতি। আমরা সোমবারের মধ্যে ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে সময় দিয়েছিলাম। তা জমা পড়েনি। পড়লে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

সুমিত অবশ্য দাবি করেছেন, ওই টাকা পঞ্চায়েতের তহবিলে রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই তা তিনি সরকারি কোষাগারে জমা করে দেবেন।

হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে ওই সব গাছ তাঁর বাবা-দাদু লাগিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন শম্পা। হাসপাতালের জমির একাংশও তাঁর বাবার দান করা। শম্পা বলেন, ‘‘বাবা-দাদুর ৪০-৫০ বছরের স্মৃতি জড়িত বলেই আমার আবেগ রয়েছে। তাই নামমাত্র দামে অত গাছ বেআইনি ভাবে বিক্রি করা হল বলেই প্রতিবাদ করেছি।’’

Cyclone Amphan TMC Scam Panchayat Head Haripal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy