Advertisement
১১ জুন ২০২৪
Cyclone Yaas

Cyclone Yaas: দিনভর গোটা দ্বীপ অনাহারে

বুধবার সকাল থেকেই দু’টি দ্বীপে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করে। আমরাও স্টেশন গুটিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিই।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অরুণাভ দে
ঘোড়ামারা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২১ ০৬:০১
Share: Save:

ইয়াসের দাপটের কথা ভেবে অ্যান্টেনা নামিয়ে রাখতে হয়েছিল মঙ্গলবার রাত থেকেই। মোবাইল ফোনের সংযোগ নেই, বিদ্যুৎও নেই। ভরসা হ্যাম রেডিয়ো। কিন্তু এলোমেলো ঝোড়ো হাওয়া সেই যোগাযোগ ব্যবস্থাও আটকে দিয়েছে। তিন জন করে ছ’জনের দু’টি দল ঘোড়ামারা এবং মৌসুনি দ্বীপে রেডিয়ো স্টেশন তৈরি করে কাকদ্বীপ বেস স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলাম।

বুধবার সকাল থেকেই দু’টি দ্বীপে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করে। আমরাও স্টেশন গুটিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিই। ইতিমধ্যে খবর আসে, ঘোড়ামারার হাটখোলা বাঁধে বেশ কয়েকজন আটকে আছেন। অথচ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কোনও সদস্যই তখন ঘোড়ামারায় নেই। আমি আর সোমজিৎ সাহারায় জল ভেঙে বাঁধের দিকে যাই। আমাদের আরেক সঙ্গী সুফল মজুমদার তখন স্টেশন চালু করার চেষ্টা করছেন। বাঁধে উঠে পাঁচ-সাতটি পরিবারকে নিয়ে ফ্লাড শেল্টারের দিকে ফিরতে যাব, বাঁধের একটা অংশ ভেঙে গেল। জলের তোড়ে আমাদের ভেসে যাওয়ার অবস্থা। মোবাইল, ম্যানপ্যাক সব জলের তলায়। গলা সমান জলে হাবুডুবু খাচ্ছি আমরা। যাঁদের উদ্ধার করতে এসেছিলাম, তাঁরা চোখের সামনে ভেসে গেলেন কেউ কেউ। কয়েকজনকে টেনে নিয়ে কাছাকাছি দু’-তিনটে গাছের ডাল ধরে ঝুলে রইলাম। জল ক্রমশ বাড়ছিল। বুঝতে পারছিলাম না আর ফিরে আসা হবে কিনা! অনেকক্ষণ ওই ভাবে থাকার পরে সাহস করে জলে নেমে পড়েছিলাম ওই পরিবারগুলিকে নিয়ে। শিশুদের মাথার উপরে তুলে পরস্পরকে ধরাধরি করে কোনও রকমে যখন ফ্লাড শেল্টারে পৌঁছই, মনে হল প্রাণ ফিরে পেলাম।

দিনভরই বৃষ্টি চলল। একের পর এক বাঁধে ধস নামল। আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে রইলাম সবার থেকে। প্রত্যেকের ঘরে জল। কে কোথায় ভেসে গিয়েছে, কোনও হদিশ নেই। যাঁরা একটু উঁচু জায়গায় উঠতে পেরেছিলেন, তাঁদের কাছে খাবার নেই, পানীয় জল নেই। যেটুকু খাবার মজুত করা ছিল বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর গুদামে, সেটাও জলে ভেসে গিয়েছে ততক্ষণে। দোকান, বাজার সব জলের তলায়। সুফল ততক্ষণে রেডিয়ো সংযোগ তৈরি করতে পেরেছিলেন বেস স্টেশনের সঙ্গে। সেখান থেকে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা জানান, কোনও ভাবেই উদ্ধারকারী দল পাঠানো সম্ভব নয়। খাবারও পাঠানো সম্ভব নয়। আমাদের সঙ্গে থাকা বিস্কুট আর মুড়ির কৌটো খুলতে গিয়ে মনে হল, ফ্লাড শেল্টারে অভুক্ত শিশু, অসুস্থ বৃদ্ধেরা আছেন।

রাতে আবার ঝেঁপে বৃষ্টি নামে সাগরে। তখনই খবর আসে মৌসুনি দ্বীপে সাপ কামড়েছে রাহুল মান্না নােম এক কিশোরকে। আমরা বাহিনী, নামখানার বিডিও, কাকদ্বীপের এসডিও-র কাছে সাহায্য চাই। রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

(প্রতিবেদক হ্যাম রেডিয়োর সদস্য)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE