E-Paper

বিএলও-র কাজে শিক্ষকদের আরও এক মাস, স্কুল চালানো নিয়ে সংশয়

যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার জানান, তাঁদের প্রাথমিক বিভাগের চার জন শিক্ষক বিএলও-র কাজে গিয়েছেন।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫১
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজে বিএলও হিসাবে গিয়েছেন যে শিক্ষকেরা, তাঁরা ১৫ ডিসেম্বরের পরে স্কুলে ফিরবেন বলে ভেবেছিলেন প্রধান শিক্ষকেরা। কারণ, পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, ওইতারিখ থেকেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের স্কুলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সেই মতো বেশ কিছু শিক্ষক স্কুলে ফিরেওছিলেন। কিন্তু তাঁদের আবার অব্যাহতি নিয়ে বিএলও-র কাজে চলে যেতে হচ্ছে। কারণ, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আরও এক মাস, অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁদের বিএলও-র দায়িত্ব সামলাতে হবে।মঙ্গলবার প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় নামের ভুল-সহ বিভিন্ন ধরনের ভ্রান্তি থাকলে সেগুলি সংশোধনের কাজ করতে হবে তাঁদের। আর এতেই মাথায় হাত পড়েছে বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগামী একমাসের মধ্যে শুধু ফল প্রকাশ করা নয়, শুরু হয়ে যাবে নতুন শিক্ষাবর্ষও। যার শুরুতেই প্রবল ভাবে হোঁচট খাবে পঠনপাঠন।

প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষার ফল বেরোনোর পরে শ্রেণি শিক্ষকদের নিজেদের আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে সেই তথ্য বাংলার শিক্ষা পোর্টালে তুলতে হয়। তার পরেই এক জন পড়ুয়ার ফলডাউনলোড করা যায়। বাঙুরের নারায়ণ দাস মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের ১২ জন শিক্ষক বিএলও-র কাজে গিয়েছেন। ভেবেছিলাম, দু’-এক দিনের মধ্যে সবাই ফিরে আসবেন। কিন্তু আগামী এক মাসের মধ্যে তাঁরা আসছেন না। ওই শিক্ষকেরা কী ভাবে ফল আপলোড করবেন?’’

যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার জানান, তাঁদের প্রাথমিক বিভাগের চার জন শিক্ষক বিএলও-র কাজে গিয়েছেন। অমিত বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে সাড়ে ছ’শো পড়ুয়া। যে শিক্ষকেরা বিএলও হয়েছেন, তাঁদের তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষার খাতা দেখার কথা ছিল। সেই খাতা দেখছেন অন্য শিক্ষকেরা। কিন্তু সমস্যা হবে পড়ুয়াদের হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড তৈরি করা নিয়ে। কারণ, সেই রিপোর্ট কার্ড তৈরি করতে পারেন শুধুমাত্র শ্রেণি শিক্ষকেরা। যে হেতু তাঁরা সারা বছর ধরে ওই পড়ুয়াদেরপড়াশোনা ছাড়াও খেলাধুলো থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যকলাপের মূল্যায়ন করেছেন। তা হলে কি হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড তৈরি থমকে যাবে?’’

আগামী ২ জানুয়ারি নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হচ্ছে। মিত্র ইনস্টিটিউশন, ভবানীপুরের প্রধান শিক্ষক রাজা দে জানান, তাঁদের স্কুলের ১১ জন শিক্ষক বিএলও-রকাজে চলে গিয়েছেন। রাজা বলেন, ‘‘২ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে পড়ুয়া-সপ্তাহ বা স্টুডেন্টস উইক। ২ জানুয়ারি নতুন পাঠ্যবই দেওয়া হবে ছাত্রছাত্রীদের। ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে বইমেলা, স্কুলের নবীনবরণ-সহ একাধিক অনুষ্ঠান। যা পরিস্থিতি, তাতে তো শুরু হওয়ার আগেই স্কুল হোঁচট খাবে।’’

শুধু পড়াশোনা নয়, প্রাথমিকের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কী ভাবে হবে, উঠছে সেই প্রশ্নও। ‘বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতরের নির্দেশ মতো ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারির মধ্যে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করতে হবে। প্রাথমিকে বহু স্কুলে এক জন বা দু’জন শিক্ষক আছেন। তাঁরা না থাকলে প্রতিযোগিতা করাবেন কারা? এ ছাড়া, নতুন ক্লাসে ভর্তির সমস্যা তো আছেই। আসলে পরিকল্পিত ভাবে সরকারি শিক্ষার পরিকাঠামো ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।’’

বিএলও-র কাজে যাওয়া শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, ‘‘এসআইআর-এর কাজে ভীষণ পরিশ্রম হয়েছে। ভেবেছিলাম, কিছু দিন বিশ্রাম নিয়ে নতুন উদ্যমে স্কুলে ফিরব। কিন্তু ফের ওই কাজে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকতে হবে। স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য মন পড়ে আছে। অথচ, কিছু করার নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SIR

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy