Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নাকোড়েও বাজল কাড়া-নাকাড়া

ছাপা শাড়িটি পরে খালি পায়ে দু’পা দূরের চার্চে চলে গিয়েছিলেন সেই সকাল বেলাতেই। ভোরবেলাতেই স্নান করে নিয়েছেন। মাদারের মতোই ঘোমটায় ঢাকা মাথা। মুখ নিচু করে প্রার্থনা করলেন প্রাণ ভরে। নিস্পন্দ শরীর। সামনে রাখা মাদারের ছবি। আর সামনে ক্রস বিদ্ধ যিশু।

গ্রামের গির্জায় প্রার্থনায় মনিকা বেসরা। হরিরামপুরের নাকোড়ে রবিবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

গ্রামের গির্জায় প্রার্থনায় মনিকা বেসরা। হরিরামপুরের নাকোড়ে রবিবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

অনুপরতন মোহান্ত
হরিরামপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৬
Share: Save:

ছাপা শাড়িটি পরে খালি পায়ে দু’পা দূরের চার্চে চলে গিয়েছিলেন সেই সকাল বেলাতেই। ভোরবেলাতেই স্নান করে নিয়েছেন। মাদারের মতোই ঘোমটায় ঢাকা মাথা। মুখ নিচু করে প্রার্থনা করলেন প্রাণ ভরে। নিস্পন্দ শরীর। সামনে রাখা মাদারের ছবি। আর সামনে ক্রস বিদ্ধ যিশু।

চোখ ভরে রয়েছে জলে। যখন তাকালেন, বোঝা গেল, মনে মনে চলে গিয়েছেন সেই সুদূর রোমে।

ভ্যাটিকানে রবিবারই সন্ত হলেন মাদার টেরিজা। সেই উপলক্ষেই এ দিন দক্ষিণ দিনাজপুরের নাকোড়ে মনিকা বেসরার গ্রামের চার্চে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন হয়েছিল। মনিকার টিউমার মাদারের ‘অলৌকিক মহিমা’তেই সেরে গিয়েছিল বলে দাবি। সেই মহিমা মাদারকে সন্ত করার পথে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মনিকাকে এক সময় রোমে নিয়েও যাওয়া হয়েছিল। পোপের আশীর্বাদ নিয়ে ফিরে আসার পরে প্রায় এক যুগ কেটে গিয়েছে। সামান্য চাষ জমিতে পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে ১২ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খান। স্বামী সেলকু মুর্মুর সঙ্গে মনিকাকেও এখন অন্যের জমিতে দিনমজুর খাটতে হয়। কিন্তু এ বার মাদারকে সন্ত ঘোষণা করার কথা ছড়িয়ে পড়ার পরে নাকোড় আশা করেছিল, মনিকাও এ দিন উপস্থিত থাকবেন ভ্যাটিকানে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা হয়নি।

কিন্তু তাতে নাকোড়ের উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি। সকাল থেকেই বেলুন, জরি দিয়ে সাজানো হয়েছিল চার্চটি। এসেছিলেন আশপাশের আরও নানা গ্রামের মানুষ। প্রার্থনা করেন তাঁরা। সেখানে ছিল তাঁদের নিজস্ব রীতির প্রকাশ। উপাসনার সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আদিবাসী পুরুষদের হাতে বেজে উঠছিল ডুগডুগি ও কাড়া-নাকাড়া। চার্চটি সাজাতে এবং অনুষ্ঠান শেষে প্রসাদ হিসাবে কদমা ও বিস্কুটের ব্যবস্থা করতে বাসিন্দারা নিজেরাই ৭০০ টাকা চাঁদা তোলেন।

মনিকা চার্চে ঢোকা মাত্রই সবার নজর চলে যায় তাঁর দিকে। মনিকা কিন্তু অন্য মহিলাদের সঙ্গে এক সারিতেই বসেছিলেন। আবার নিয়ম মতো কখনও দাঁড়ালেন। সেই সারির সামনেই রাখা ছিল মাদারের ছবি। প্রণাম করে আর সকলের মতোই মোমবাতি জ্বালালেন মনিকাও। দুপুর ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ পোপ ফ্রান্সিস যখন মাদারকে সন্ত বলে ঘোষণা করেন, তখন এত ক্ষণ ধরে রাখা কান্না নেমে এল গাল বেয়ে।

চার্চের সামনে ধ্বনি উঠল ‘সন্ত মাদার জিন্দাবাদ’। সাঁওতালি ভাষায় প্রার্থনা করলেন সকলে। আবার বেজে উঠল কাড়া-নাকাড়া। সকলকে প্রসাদ বিতরণ করলেন নিজের হাতে। তারপরে বাড়ি ফিরলেন মনিকা। এ দিন আর দিনমজুরি করতে বেরোননি। রবিবার তাঁর পথও মিশেছিল রোমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Monika Besra Mother Teresa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE