Advertisement
E-Paper

সন্দেহের বশে গাছে বেঁধে মার, রেললাইনের ধারে ছাত্রের দেহ

সতেরো বছরের ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল পড়শির শিশুকন্যার সঙ্গে ‘অসভ্য আচরণ’ করার। পুলিশ পর্যন্ত সে অভিযোগ যায়নি। ছেলেটির পরিবারের দাবি, স্রেফ সন্দেহের বশে গাছে বেঁধে পেটানো হয় ওই স্কুলছাত্রকে। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য ও তাঁর স্বামীর উপস্থিতিতে বসে সালিশিসভা। সেখানে ক্ষমা চেয়েও মেলেনি নিষ্কৃতি। পুড়িয়ে মারা, বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ১ লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয় তার পরিবারকে। বুধবার রেললাইনের ধারে ছেলেটির খণ্ড-বিখণ্ড দেহ উদ্ধার হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২৭
এখানেই মারা হয় ছাত্রটিকে। —নিজস্ব চিত্র।

এখানেই মারা হয় ছাত্রটিকে। —নিজস্ব চিত্র।

সতেরো বছরের ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল পড়শির শিশুকন্যার সঙ্গে ‘অসভ্য আচরণ’ করার। পুলিশ পর্যন্ত সে অভিযোগ যায়নি। ছেলেটির পরিবারের দাবি, স্রেফ সন্দেহের বশে গাছে বেঁধে পেটানো হয় ওই স্কুলছাত্রকে। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য ও তাঁর স্বামীর উপস্থিতিতে বসে সালিশিসভা। সেখানে ক্ষমা চেয়েও মেলেনি নিষ্কৃতি। পুড়িয়ে মারা, বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ১ লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয় তার পরিবারকে। বুধবার রেললাইনের ধারে ছেলেটির খণ্ড-বিখণ্ড দেহ উদ্ধার হয়।

রেল পুলিশের অনুমান, উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার সানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। বুধবার রাতে পুলিশের কাছে পঞ্চায়েত সদস্য, তাঁর স্বামী, ওই শিশুর বাবা-মা-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে ছেলেটিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা, মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন তার মা। জেলার এসপি তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ অভিযুক্তেরা পলাতক।

চাঁদপাড়ার একটি স্কুলের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রেরা চার ভাই। দু’ভাই প্রতিবন্ধী। অভাবের সংসার। বাবা ভিন্-রাজ্যে কাজ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি পরিবহণ সংস্থায় কাজ করে সামান্য টাকা রোজগার করত ওই ছাত্রটি। পড়শির তিন বছরের শিশুকন্যাটি তাদের বাড়িতে নিয়মিত গিয়ে খেলাধূলা করত। গত ২ অক্টোবরও বাচ্চাটির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিল ওই ছাত্র।

তার মায়ের দাবি, সে সময় সেখানে হাজির ছিলেন ছাত্রটির দিদিমাও। বাচ্চা মেয়েটি আচমকা বলে, তার প্যান্টের ভিতরে পিঁপড়ে কামড়েছে। প্যান্ট সরিয়ে পিঁপড়ে ছাড়িয়ে দেয় ছাত্রটি। সে যখন ফের প্যান্ট পরাচ্ছে, তখন বাচ্চাটির মা সেখানে হাজির হয়ে চেঁচামেচি জোড়েন। দাবি করতে থাকেন, ছেলেটি তাঁর মেয়ের সঙ্গে ‘অসভ্য আচরণ’ করেছে।

ছেলেটির পরিবারের অভিযোগ, ২ অক্টোবরই মেয়ের মা-বাবার সঙ্গে চাঁদপাড়া পঞ্চায়েতের বাম সমর্থিত নির্দল সদস্য শিউলি মণ্ডল, তাঁর স্বামী নেপাল মণ্ডল ও তাঁদের সঙ্গীরা ছাত্রটিকে মারধর করে। মঙ্গলবার ফের দফায় দফায় মারধরের পরে তারা সালিশিসভা বসায়। সভায় ঠিক হয়, মেয়ের বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে হবে ছেলেটিকে। তা মেনে নেয় ছেলেটি। ছাত্রটির মা জানান, মঙ্গলবার রাতের দিকে ছাড়া পেয়ে ভয়ে আর বাড়িতে থাকতে চায়নি তাঁর ছেলে। কাজে যাবে বলে ভোরে বেরিয়ে পড়ে। বুধবার সকালে খবর আসে, তার ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ পড়ে আছে রেললাইনে। মহিলার আক্ষেপ, ‘‘কত বার ওদের বললাম, ‘আমার ছেলে কোনও অপরাধ করেনি’। পুলিশে খবর দাও। পুলিশ এসে খোঁজ নিলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। কেউ সে কথা শুনল না!’’ সালিশিসভায় রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ‘সক্রিয় উপস্থিতি’র অভিযোগ এ রাজ্যে আগেও উঠেছে। তবে সিপিএমের বনগাঁ-গাইঘাটা জোনাল কমিটির সম্পাদক রমেন আঢ্যের দাবি, পঞ্চায়েত সদস্যা শিউলি মণ্ডল সালিশিসভায় হাজির ছিলেন না।

dead body Chand para gaighata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy