Advertisement
E-Paper

ভিড় জানাল দুঃসংবাদ, সংজ্ঞাহীন স্ত্রী

এক বাড়ির উঠোনে জাতীয় পতাকা মোড়া সেনা জওয়ানের দেহ এসে পৌঁছল বৃহস্পতিবার সন্ধেয়। আরেক বাড়ির কান্নাভেজা উঠোন বিএসএফে যোগ দেওয়া ছেলের নিথর দেহের অপেক্ষায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:১৪
দুই মেয়েকে নিয়ে শোকার্ত অঞ্জনাদেবী। ছবি: রাজকুমার মোদক।

দুই মেয়েকে নিয়ে শোকার্ত অঞ্জনাদেবী। ছবি: রাজকুমার মোদক।

এক বাড়ির উঠোনে জাতীয় পতাকা মোড়া সেনা জওয়ানের দেহ এসে পৌঁছল বৃহস্পতিবার সন্ধেয়। আরেক বাড়ির কান্নাভেজা উঠোন বিএসএফে যোগ দেওয়া ছেলের নিথর দেহের অপেক্ষায়।

আজ, শুক্রবার কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত বিএসএফ জওয়ানের দেহ এসে পৌঁছনোর কথা ধূপগুড়ির ডাউকিমারির গ্রামে। অন্য দিকে, এ দিন সন্ধেয় অসমের বঙ্গাইগাঁও জেলার ওদলাগুড়ি গ্রামে মোহন বড়ো (৩৫) নামে এক সেনা জওয়ানের দেহ এসে পৌঁছেছে। গত ৪ অগস্ট শ্রীনগরে অন্য একটি জঙ্গি হামলার ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে সেনা বাহিনীর তরফে পরিবারকে জানানো হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, আজ শুক্রবার বাগডোগরা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছবে ডাউকিমারির বাসিন্দা বিএসএফ জওয়ান শুভেন্দু রায়ের দেহ। বুধবার জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরে বিএসএফের গাড়িতে জঙ্গিদের হামলায় মৃত্যু হয় দু’জনের। শুভেন্দুবাবু তাঁদেরই এক জন।

গ্রামের ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে শুভেন্দুবাবুর বাড়ির সামনে সকাল থেকেই ভিড়। তাঁর মা এবং স্ত্রীর কাছে যাতে মৃত্যুর খবর না পৌঁছয় সে কারণে, গত বুধবার বাড়ির কেবল সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছিল। দু’জনের কাউকেই মোবাইল বা টেলিফোন ধরতে দেওয়া হয়নি। তাঁদের বলা হয়েছিল শুভেন্দুবাবুর পায়ে গুলি লেগেছে। কিন্তু এ দিন নিহত জওয়ানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা ভিড়ই বাড়ির অন্দরে মৃত্যুর খবর পৌঁছে দিল। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছেন দুই নাবালিকা মেয়ের মা অঞ্জনাদেবী। মা ললিতাদেবীও খবর পেয়ে ঘর ছেড়ে বের হননি। শুভেন্দুবাবুর মেয়ে তানিশা ধূপগুড়ির একটি বেসরকারি স্কলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। ভাল ভাবে দুই মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ধূপগুড়িতে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন অঞ্জনাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘বারবার বলতেন দুই মেয়েকে ভাল ভাবে পড়াশোনা করাবেন। নভেম্বরে ছুটি নিয়ে এসে বাড়ি তৈরি করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিছুই তো হল না।’’

শুভেন্দুবাবুর ভাই কৃষ্ণ সিআরপিএফ জওয়ান। দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে বুধবার গ্রামে চলে আসেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘দাদাকে যাঁরা মারল তাঁদের শাস্তি চাই। খুব ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্টে বড় হই আমরা। ছোট থেকেই সেনা বাহিনীতে যেতে চেয়েছিল ও।’’ এ দিন মৃত সৈনিকের পরিবারকে সমবেদনা দিতে ডাউকিমারি গ্রামে যান ধূপগুড়ির বিধায়ক মমতা রায় ও বিডিও শুভঙ্কর রায়। শুভেন্দুবাবুর শ্যালক সত্যমবাবু জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে দেহ দিল্লিতে পৌঁছয়। সেখান থেকে শুক্রবার সকালে বাগডোগরার উদ্দেশে রওনা দেবে বলে বিএসএফ-এর দফতর থেকে জানানো হয়েছে। স্থানীয় যুবক চন্দন রায়ের কথায়, ‘‘শুভেন্দুকে এ ভাবে হারাতে হবে ভাবিনি। তবে ওঁর জন্য আমরা গর্বিত।’’

এ দিকে, চলতি সপ্তাহেই ছুটিতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল মোহন বড়োর। অসমের ওদলাগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা মোহন সেনাবাহিনীর অসম রেজিমেন্টের ৪২ আরআর কোম্পানিতে ছিলেন। বৃহস্পতিবার শ্রীনগরের বিমান বন্দর থেকে এক বিশেষ বিমানে করে ওই জওয়ানের দেহ গুয়াহাটি বরঝাড় বিমান বন্দরে আনা হয়। সেখানে মৃত সেনা জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর সেনার গাড়িতে করে দেহ বঙ্গাইগাঁও জেলার মানিকপুর থানার ওদলাগুরি গ্রামে আনা হয়। সেখানে সেনার পক্ষ থেকে গার্ড অফ অনার জানানো হয়।

নিহত সেনা জওয়ানের স্ত্রী রুমি বড়ো বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালেই আমার সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে ছুটি পাবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সে রাতেই শ্রীনগরের সেনা ছাউনি থেকে ফোন আসে যে, শ্রীনগরে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে সংর্ঘষ হয়েছে। উনি গুরুতর ভাবে আহত। পরে সেনা বাহিনীর তরফে মৃত্যুর খবর জানানো হয়।’’

Jawan kashmir jammu dhupguri dhubri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy