Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja

কুমারীর মুখে মাস্ক নেই, উদ্বেগের জবাবে ‘আধ্যাত্মিক’ যুক্তি বেলুড় মঠের

কুমারী পুজোর জন্য মনোনীত মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা সাড়ে পাঁচ বছরের কন্যার করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছিল আগেই। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল।

দেবীরূপে পূজিতা শিশুকন্যার মুখ ছিল নিরাবরণ। ছবি: বেলুড় মঠের ইউটিউব ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

দেবীরূপে পূজিতা শিশুকন্যার মুখ ছিল নিরাবরণ। ছবি: বেলুড় মঠের ইউটিউব ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২০ ১৮:৪৭
Share: Save:

বেলুড় মঠে মহাষ্টমীর কুমারী পুজোয় কুমারীর মুখে মাস্ক না থাকা নিয়ে শনিবার দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেন নেটাগরিকদের একাংশ। পুজোয় অংশ-নেওয়া বাকি সকলে মাস্ক পরলেও দেবীরূপে পূজিতা শিশুকন্যার মুখ ছিল নিরাবরণ। তা নিয়ে এ দিন সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তোলা শুরু হয়। সঙ্গে উদ্বেগ। তবে বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ এতে কোনও ভুল দেখছেন না। মঠের দাবি, যাঁকে ‘চিন্ময়ী মা’ হিসেবে পুজো করা হয়েছে, তাঁকে মাস্ক পরানো দরকার বলে মনে হয়নি। তবে বিধিসম্মত সতর্কতা অবলম্বন করে আগেই কুমারীর করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছিল। রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরেই পুজোর আয়োজন হয়। মঠের বক্তব্য, মাস্ক নয়, করোনা পরীক্ষাই প্রধান। সেটা করা হয়েছে।

বেলুড় মঠের পুজোয় বড় আকর্ষণ অষ্টমীর কুমারী পুজো। অন্যান্যবার সেই পুজো দেখতে উপচে পড়ে ভিড়। ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের জমায়েত হয়। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতিতে সে দৃশ্য ছিল না। পরিকল্পনা মতোই পুজোর কাজে নিযুক্ত সন্ন্যাসীরা ছাড়া কেউই পূজাস্থলের কাছাকাছি যাননি। কুমারী পুজোও বড় মণ্ডপ বেঁধে হয়নি।

কুমারী পুজোর জন্য মনোনীত মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা সাড়ে পাঁচ বছরের কন্যার করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছিল আগেই। কুমারীর অভিভাবকদেরও করোনা পরীক্ষা করানো হয়। পুজোয় অংশ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সন্ন্যাসীদেরও করোনার নেগেটিভ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। অন্যান্যবারের মতো সন্ন্যাসীদের কোলেও ওঠেননি কুমারী। অভিভাবকরাই কুমারীকে মণ্ডপে নিয়ে এসেছেন এবং ফেরত নিয়ে গিয়েছেন।

আরও পড়ুন: অলীক কুনাট্য রঙ্গ বঙ্গ বিজেপিতে, নাম: সৌমিত্রবাবুর প্রত্যাবর্তন

করোনাকালের বিশেষ বিধি সবই মেনে চলা হয়েছে। কিন্তু দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কুমারীর মুখে মাস্ক না থাকা। তবে মঠের সাধারণ সম্পাদক সুবীরানন্দজি মহারাজ সরাসরিই বলেছেন, ‘‘আমরা দেবীকে মাস্ক পরাই না। কুমারী মানুষ নন। তিনি দেবী। যতক্ষণ পুজোর আসনে বসে আছেন, ততক্ষণ তিনি মানুষ নন। তিনি মা দুর্গার প্রতিরূপ। তাঁর মধ্যে জগন্মাতা আছেন ভেবেই আমরা তাঁর পুজো করি।’’ তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ঈশ্বর রয়েছে বলে যে বিশ্বাস, তারই প্রতীক এই পুজো। বালা-সুন্দরীর মধ্যে জগন্মাতার কল্পনা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটাগরিকদের প্রশ্ন এবং উদ্বেগ নিয়ে সুবীরানন্দজির জবাব, ‘‘প্রশ্ন করার জন্য এক ধরনের লোক থাকেন। বিনা কারণেই প্রশ্ন করেন। সব প্রশ্নের উত্তর তো আমরা দেব না! আর যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা সকলে কি পুজোর মণ্ডপে যাওয়ার আগে করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন? মাস্ক হল সেকেন্ডারি। পরীক্ষাটাই আসল। সেটা আমরা করিয়েছি।’’ পাশাপাশিই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কারও যদি করোনা হয়ে থাকে, তবে তাঁর সামনে মাস্ক পরে যাওয়াও কি নিরাপদ? আমরা তাই কুমারী-সহ সকলের করোনা পরীক্ষা করিয়েছি। অন্য কোনও পুজো কমিটি এটা করেছে কি না জানি না। শুধু কুমারী পুজোই নয়, দুর্গামায়ের পুজো যাঁরা করেছেন, পুরোহিত, তন্ত্রধারক থেকে ঢাকি— সকলের করোনা পরীক্ষা করিয়েছি।’’

আরও পড়ুন: রাজনীতির দাবায় দিদির গুরুং-চাল, মাত না হলেও কিস্তি তো বটেই

কুমারীর মুখে মাস্ক থাকলে কি সমাজকে এই সঙ্কটসময়ে একটা বার্তা দেওয়া যেত না? সুবীরানন্দজির জবাব, ‘‘আমরা বার্তা দিতে চাই না। আমরা বিজ্ঞানে বিশ্বাস করি। বিজ্ঞান বলছে, পরীক্ষা করাও। সারা পৃথিবীতে বলা হচ্ছে, যত বেশি পরীক্ষা হবে, তত বেশি রোগীকে শনাক্ত করা যাবে। এটাই করোনা রোখার একমাত্র উপায়। বেলুড় মঠে ১০০ শতাংশের করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। আর বার্তা দেওয়া আমাদের কাজ নয়। আমরা সামাজিক প্রতিষ্ঠান নই। আমরা আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান। বিজ্ঞানের সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার মিলন দরকার। মাস্কের থেকে বেশি বৈজ্ঞানিক করোনা পরীক্ষা। তাতেই আমরা বেশি জোর দিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid-19 Belur Math Kumari Puja Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE