জ্বর হয়েছিল মঙ্গলবার। আর চার দিনের মধ্যেই শনিবার রাতে মৃত্যু হল দমদমের ৩২ বছরের গৃহবধূ চৈতালি গঙ্গোপাধ্যায়ের। আর মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোমের জেরে দেহের প্রধান অঙ্গগুলির কাজ বন্ধ করে দেওয়া।
গত এক মাসে দমদম, বাগুইআটি বরাহনগর, সল্টলেকের যে সব বাসিন্দার ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে, দেখা গিয়েছে তাঁদের কারও কিন্তু ডেঙ্গির জেরে রক্তপাত হয়নি। শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যাওয়ার ফলে শক সিন্ড্রোমে হঠাৎ করেই একসঙ্গে বিকল হয়ে গিয়েছে শরীরে প্রধান অঙ্গগুলি।
গত বছর পর্যন্ত এ রাজ্যে ডেঙ্গি শকে যে সব রোগীর মৃত্যু হয়েছিল, তাদের অধিকাংশেরই হেমারেজিক ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল। অর্থাৎ দাঁতের গোড়া, নাক থেকে কিংবা মল-মূত্রের সঙ্গে রক্তপাত হয়েই শক হয়েছে। ডেঙ্গি শকের মূল উপসর্গই রক্তপাত শুরু হওয়া। কিন্তু এ বার দমদম, সল্টলেক এলাকার যে সব ডেঙ্গি রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের কারও হেমারেজিক ডেঙ্গি ধরা পড়েনি।
পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এ বার জুলাইয়ে হুগলির শ্রীরামপুর পুরসভায় ডেঙ্গি সংক্রমণ ছড়িয়েছিল ব্যাপক হারে। কলকাতার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজ (নাইসে়ড)-এর পরীক্ষায় জানা গিয়েছিল ডেঙ্গ-২ ভাইরাসের সংক্রমণেই সেখানে গ্রুত ছড়িয়েছে ডেঙ্গি। দক্ষিণ দমদম, বিধাননগর কিংবা সল্টলেক পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তেরা যে ভাবে অল্প দিনের মধ্যেই শকে চলে যাচ্ছেন, তার জন্য ডেঙ্গির অন্য কোনও প্রজাতির ভাইরাস দায়ী কি না, তা জানতে নাইসেডের সাহায্য নেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর।
শুধু ডেঙ্গি নয়, পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা চিন্তিত অজানা জ্বরের প্রকোপ নিয়েও। শনিবারই দমদম এলাকায় ৬৫ বছরের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই মহিলা ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাইপাস সংলগ্ন একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। রক্ত পরীক্ষায় কোনও জীবাণু না মেলায় খাতাপত্রে অজানা জ্বর হিসেবেই থেকে গিয়েছে রোগটি।
চৈতালির মৃত্যু ধরে রাজ্যে চলতি মরসুমে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭। শনিবার রাত দু’টো নাগাদ নাগেরবাজারের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় চৈতালির। তিনি দক্ষিণ দমদম পুরসভায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সুভাষনগরের বাসিন্দা। শনিবারই বরাহনগরের বাসিন্দা বছর আঠারোর এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতে। বুধবার রাতে মৃত্যু হয়েছে বাগুইআটির ২৪ বছরের এক যুবকেরও।
চৈতালির ভাই সুমিত ঘোষাল জানালেন মঙ্গলবার থেকেই জ্বরে ভুগছিলেন দিদি। সঙ্গে অসহ্য মাথা-গা-হাত-পায়ে যন্ত্রণা। বুধবার জ্বরের সঙ্গে রক্তবমিও হয় চৈতালির। তার পরেই নাগেরবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। শনিবার গভীর রাতে মারা যান তিনি। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা আছে, ‘ডেঙ্গি এনএস ১ রিঅ্যাকটিভ ফিভার উইথ শক সিনড্রোম অ্যান্ড মাল্টি অরগ্যান ডিসফাংশন সিনড্রোম।’
কলকাতার উত্তরে ডেঙ্গি যখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তখন শ্রীরামপুর পুরসভায় এলাকায় ডেঙ্গি সংক্রমণ এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রিত বলে স্বাস্থ্য ভবন রবিবার জানিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক নিম্নচাপের বৃষ্টির পরে বিভিন্ন জায়গায় জল জমে ফের পরিস্থিতি ঘোরালো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই নজরদারি শিথিল করতে রাজি নয় পুরসভা। ডেঙ্গি রোধে পুরকর্মী থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের শহরের বিভিন্ন এলাকা সাফাই ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নামানো হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে পুরসভা সূত্রে। সেই কাজ কতটা সফল তা খতিয়ে দেখতে রবিবার শ্রীরামপুর পুরসভায় প্রশাসনিক বৈঠক হয়। বৈঠকে ছিলেন জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল, শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক রজত নন্দা, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। সেখানেই বর্তমান বৃষ্টি পরিস্থিতিতে ডেঙ্গি অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।