বর্ষা একটু তেড়ে-ফুঁড়ে উঠতেই হাজির ঝাঁকে ঝাঁকে মশা। ঝাঁকের মধ্যে এডিস ইজিপ্টাইয়ের দলও মজুত। যারা কিনা ডেঙ্গি রোগের বাহক।
সেই বাহকের ডানায় ভর করে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গি। মোকাবিলার উপায় খুঁজতে সোমবার স্বাস্থ্যভবনে বৈঠকে বসেছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। আজ, মঙ্গলবার মহাকরণে বৈঠক ডেকেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে কলকাতা ও বিধাননগর পুরসভার মেয়রদের থাকতে বলা হয়েছে।
২০১৪-য় ব্যাপক দাপট দেখিয়ে ২০১৫-য় ডেঙ্গি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল। ম্যালেরিয়াও বিশেষ মাথা তুলতে পারেনি। তবে বিশেষজ্ঞেরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, এক বছরের মধ্যে ডেঙ্গি ভাইরাস শক্তি সঞ্চয় করে ফের আঘাত হানতে পারে। হেনেছেও। কলকাতা ও আশপাশে তার জোরালো কামড় ইতিমধ্যে মালুম। হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরও বাদ নেই।
স্বাস্থ্যভবনের খবর: কলকাতায় বাইপাসের এক হাসপাতালে গত তিন দিনে ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন চার জন— সল্টলেকের একটি শিশু (বিধাননগর পুরসভা অবশ্য মানতে নারাজ), দমদমের এক মহিলা, দমদমের এক তরুণী ও দমদমেরই একটি শিশু। উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ দমদমে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪। হুগলির শ্রীরামপুরে ২৫৬। আর কলকাতায় ২০১৬-র জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সরকারি ভাবে মোট ১১২ জন ডেঙ্গির কবলে পড়েছেন।
গত বছরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গত বছর জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন ২৮৪ জন। এ বার ৭৪৮। এ বছর এ পর্যন্ত মৃত ৫। গত বছর প্রথম সাত মাসে কেউ মারা যাননি। হাওড়া ও বরাহনগরেও ডেঙ্গি সংক্রমণের খবর মিলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় জ্বরে মৃত্যুর কারণ জানা না-গেলেও ওই তল্লাটে ডেঙ্গি এখন মারমুখী।
কেন ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত?
স্বাস্থ্যকর্তাদের পর্যবেক্ষণ, মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও আক্রান্তের খবর সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনে পৌঁছানো— দু’টোতেই ঘাটতি থেকে গিয়েছে।। পাশাপাশি এ বার সংক্রমণের চরিত্রও বিচিত্র। যে কারণে রোগ নির্ণয় পদে পদে ধাক্কা খাচ্ছে। কী রকম?
পরজীবী-বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘‘জুলাই থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তেরা জ্বর, শরীরে যন্ত্রণা, ফুসফুস বা পেটে জল জমার মতো সমস্যা নিয়ে এসেছেন।’’ পতঙ্গবিদ অমিয়কুমার হাটির দাবি, সাধারণত কলকাতায় জুলাইয়ে এত ডেঙ্গি রোগী আসে না। ‘‘উপরন্তু অনেক রোগীর শ্বেত রক্তকণিকা (ডব্লিউবিসি) ব্যতিক্রমী ভাবে কমে গিয়েছে।’’— বলছেন অমিয়বাবু।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে শুধু জুলাইয়ে ২৪ জন রোগীর খোঁজ মিলেছে। সেখানকার মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, অনেকের হেপাটাইটিসের মতো উপসর্গ, কারও ডায়েরিয়া। অনেকেরই হার্টবিট কমে যাচ্ছে। ‘‘রোগনির্ণয়ে সময় লাগছে। এই সময় জ্বর ও গায়ে ব্যথা হলে পেনকিলার খাওয়া উচিত নয়। ডেঙ্গির জীবাণু থাকলে এতে রক্তের আরবিসি আরও বেশি ভেঙে যাবে।’’— সতর্ক করেছেন অরুণাংশুবাবু।
স্বাস্থ্যভবন সবচেয়ে চিন্তিত শ্রীরামপুর নিয়ে। অভিযোগ, পুরসভা দেরিতে গা ঝাড়া দেওয়ায় ওখানে পরিস্থিতি গুরুতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য-আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘গত ক’দিনে হাসপাতালে জ্বরের রোগী বেশ কমেছে। ফিভার ক্লিনিকেও রোগী আসছেন কম।’’
এ দিকে সপ্তাহখানেক আগে গড়বেতা ৩ নম্বর ব্লকের নবকোলায় জ্বরে ভুগে ৭ ও ১২ বছরের দু’টি মেয়ের মৃত্যু হয়। বেশ ক’জন জ্বরে আক্রান্ত হন। ১৮ জনের রক্তের নমুনা কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হয়।
স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: পরীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট এসেছে। ১১ জনেরই ডেঙ্গি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy