মশা মারতে...। শনিবার দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র
আতঙ্কটা ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের বহু জায়গায়। ডেঙ্গ ২ কি শুধু শ্রীরামপুরেই সীমাবদ্ধ রয়েছে, নাকি তা ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও? স্বাস্থ্যকর্তারা শনিবার আশ্বাস দিয়েছেন, এখনও তেমন কোনও খবর নেই। কিন্তু তাতেও আতঙ্ক কাটছে না। বরং শ্রীরামপুর মহকুমায় ডেঙ্গি মহামারির আকার নিয়েছে বলে ঘোষণা করার পরে আতঙ্কে অনেকেই এ দিন অন্যত্র চলে গিয়েছেন।
এর কারণ শুধু শ্রীরামপুরেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। তাই প্রিয়জনদের অন্তত শ্রীরামপুরে রাখতে বা পাঠাতে চাইছেন না অনেকেই। তবে এই প্রশ্নটাও ভাবাচ্ছে যে, মশার হাত থেকে পালিয়ে মানুষ যাবেটা কোথায়? আক্রান্তের খবর তো আসছে হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহ, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলা থেকেও! সরকারি হিসেবে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা মোট ১৪২২। মারা গিয়েছেন ১১ জন।
উত্তরপাড়ার ভদ্রকালী থেকে শ্রীরামপুরের নেতাজি সুভাষ অ্যাভেনিউয়ে পড়তে যান শ্রাবণী মল্লিক। সদ্য ডেঙ্গি থেকে সেরে উঠেছেন। শ্রাবণীর মা জানিয়েছেন, মেয়েকে আপাতত আর শ্রীরামপুরে পড়তে পাঠাবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আগে মেয়ে প্রাণে বাঁচুক। জ্বর তো ছিলই, প্লেটলেটও এতটা কমে গিয়েছিল যে ভয়ে আমাদের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল।’’
রেলে চাকরি করেন শম্পা মুখোপাধ্যায়। শ্বশুরবাড়ি শ্রীরামপুরে। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত উত্তরপাড়ায় দোলতলায় মায়ের ফ্ল্যাটে থাকব। দিন কয়েক শ্রীরামপুর ফিরতে চাইছি না।’’ মাহেশের বাসিন্দা আইনজীবী সোমনাথ বালিয়াল জানালেন, ছেলে আর বৌকে কিছু দিন আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেব! ছেলেটা বড্ড ছোট। কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না।’’
শ্রীরামপুর শহরের অন্তত ৬টি ওয়ার্ডে জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। শুক্রবারই রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, তাঁরা শ্রীরামপুর মহকুমায় ডেঙ্গিকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সেখানে ডেঙ্গি আক্রান্ত ২২ জনের রক্তে ভাইরাসের প্রজাতি বিশ্লেষণ ১৬ জনের ডেঙ্গ ২ ভাইরাস পেয়েছিলেন। এর পরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গি নিয়ে সতর্কতা জারি করলেও তাকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না তৃণমূলের চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। তাঁর দাবি, ‘‘শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি নিয়ে অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবন থেকে আদপেই এমন কিছু বলা হয়নি।’’ মহকুমাশাসক রজত নন্দাও বলেন, ‘‘মহামারির পরিস্থিতি এখানে নেই।’’ এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধির্কতা বিশ্বরঞ্জনবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কে কী বলল সে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।’’ বিরোধী দল সিপিএমের দাবি, পরিস্থিতিকে হালকা করে দেখানোর চেষ্টা চলছে।
এ দিন দুপুরে শ্রীরামপুর পুরসভায় ডেঙ্গি নিয়ে জরুরি বৈঠক বসে। কাউন্সিলরদের সঙ্গে এই বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের ডেপুটি ডিরেক্টর (ম্যালেরিয়া) অধীপ ঘোষ এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, মহকুমা শাসক রজত নন্দা, পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, কাউন্সিলরদের মধ্যে
কেউ কেউ জানান, মশার লার্ভা মারার তেল যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ হচ্ছে না। মশা মারতে কামান দাগার
দাবিও ওঠে।
স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গিতে আরও এক জনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছে এ দিন। সিউড়ির রকিবুল ইসলামের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল শুক্রবারই। কিন্তু সেটা ডেঙ্গি বলে তখন মানতে চায়নি স্বাস্থ্য দফতর। এ দিন স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী তা ডেঙ্গি বলে মেনে নেন। তিনি জানান, এই নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১।
ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে অন্য জেলাতেও। পশ্চিম মেদিনীপুরে এ দিন তিন জন নতুন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের এক নার্সও রয়েছেন। জানা গিয়েছে, ওই নার্স দিন কয়েক ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। পরে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। ঘটনায় শোরগোল পড়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে। এই নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ১৭।
উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় এ দিন ৬ বছরের একটি মেয়ের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে রক্ত পরীক্ষায়। শুক্রবার বিকেলে সেখানকার ৩ নম্বর রেল কলোনির বাসিন্দা দীপালি বিশ্বাস তাঁর ৬ বছরের মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে প্রবল জ্বর নিয়ে ভর্তি করেন হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। তিনি জানান, জুলাই মাসের ১১ তারিখ মেয়ে প্রবল জ্বর আসে। চিকিৎসক দেখিয়ে ভালও হয়ে যায়। দু’ সপ্তাহ ভাল ছিল। দিন কয়েক আগে ফের জ্বর আসে। রক্ত পরীক্ষায় মিলেছে ডেঙ্গির জীবাণু।
শনিবার পর্যন্ত হাওড়ায় ১৮ জনের রক্তে ডেঙ্গির ভাইরাস মিলেছে। এঁরা সকলেই হাওড়া হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জেলা হাসপাতালে ইতিমধ্যেই একটি অ্যালাইজা পরীক্ষার মেশিন বসানো হয়েছে। এ দিন বেলুড়ে লালবাবা কলেজে গিয়ে মশার লার্ভা মিলেছে বলে জানান হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘গোটা কলেজ দেখলে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু ছাদে ও
বাথরুমের দুটো ছোট কৌটোর জমা জলেই ছিল মশার লার্ভা। পুরসভা সূত্রের খবর, হাওড়া, সালকিয়া, বেলুড় এলাকায় অনেকেই অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ১ জন, মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ২ জন এবং জলপাইগুড়িতে একটি নার্সিংহোমে ১ জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy