Advertisement
E-Paper

Ausgram: ভোরে মজুর, বেলায় পঞ্চায়েতের কাজে সুনীল

দ্বারিয়াপুর বাউরিপাড়ার বাসিন্দা সুনীল। অর্থাভাবে প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরোনো হয়নি। পরিবারে স্ত্রী, দুই পুত্র, দুই পুত্রবধূ এবং এক নাতি রয়েছে তাঁর।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২২ ০৭:৫২
ধানের বস্তা নিয়ে উপপ্রধান সুনীল (সামনে)। নিজস্ব চিত্র

ধানের বস্তা নিয়ে উপপ্রধান সুনীল (সামনে)। নিজস্ব চিত্র

রাজ্যের নানা প্রান্তে শাসক দলের নেতাদের প্রাসাদোপম বাড়ি, সম্পত্তি নিয়ে লোকে যেখানে নানা কথা বলে, সেখানে ব্যতিক্রম বলাই যায় সুনীল বাউরিকে। অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া মাটির এক চিলতে ঘরে বাস। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ধান মাপার শ্রমিকের কাজ। তার পরে পঞ্চায়েতের। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ১ ব্লকের দিগনগর ২ পঞ্চায়েতের দু’বারের নির্বাচিত তৃণমূল সদস্য তথা এ বারের উপপ্রধান সুনীলের প্রশংসায় অকৃপণ বিরোধীরাও।

দ্বারিয়াপুর বাউরিপাড়ার বাসিন্দা সুনীল। অর্থাভাবে প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরোনো হয়নি। পরিবারে স্ত্রী, দুই পুত্র, দুই পুত্রবধূ এবং এক নাতি রয়েছে তাঁর। ছেলেরা দিনমজুর। তবে সংসারের অনেকটা ভারই বছর পঁয়তাল্লিশের সুনীলের কাঁধে। তিনি প্রায় বছর পনেরো ধরে এক আড়তদারের হয়ে ধান মাপা শ্রমিকের কাজ করেন। প্রতি বস্তা ধান মাপলে ১০ টাকা করে মজুরি মেলে। দৈনিক উপার্জন নির্ভর করে কত বস্তা ধান সে দিন মাপা হবে, তার উপরে। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে মালিকের ট্রাক্টরে চেপে ধান মাপার কাজে বেরিয়ে পড়েন উপপ্রধান। বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে যে ভাতা পাই, তা দিয়ে সংসার চলে না। এ পদে চিরকাল থাকব না। তাই পেশা ছাড়ার কথা ভাবি না।’’

দুপুরে বাড়ি ফিরে যান পঞ্চায়েতে। স্থানীয় বাসিন্দা রানি বাউরি, পারুল আঁকুড়েরা জানান, তাঁদের কারও বাড়ি ছিল না, কেউ ভাতা পেতেন না। ব্যবস্থা করেছেন উপপ্রধান। সুনীলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকের কাজ করেন মানিক বাউড়ি। তিনি বলেন, ‘‘বস্তা ভর্তি ধান মাথায় নিয়ে গাড়িতে তুলতে হয়। কিন্তু উপপ্রধান হওয়ার পরেও, ওঁর মধ্যে সে কাজ করতে কুণ্ঠা দেখিনি।’’ ওই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা সিপিএমের গুসকরা পশ্চিম এরিয়া কমিটির সদস্য সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘উপপ্রধান হিসাবে সুনীল খুব স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেন।’’ বিজেপির বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি সুশান্ত বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘ওঁর সততা প্রশ্নাতীত। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরও যথেষ্ট সম্মান দেন।’’ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সরস্বতী মুর্মু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের সব কাজেই ওঁকে পাওয়া যায়।’’ আউশগ্রাম ১ ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি দেবাঙ্কুর চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘এমন মানুষ দলের সম্পদ।’’

সুনীলের স্ত্রী অমি বাউরি বলেন, ‘‘উনি দলের কাজ, পঞ্চায়েতের কাজ এবং পরিবার—সব কিছুকেই সমান গুরুত্ব দেন। কিছুই বাদ পড়ার জো নেই।’’ সুনীলের বক্তব্য, ‘‘মজুরির পয়সায় হয়তো কখনও খেটেখুটে বাড়িটা বাড়াব। কিন্তু দলের দৌলতে বাড়ি হয়েছে, এমন কথা যেন কেউ বলতে না পারে।’’

Ausgram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy