Advertisement
০২ মে ২০২৪

জেদই হাতিয়ার, অনটনকে হারাল তাপস ও শুভম

ছেলে ভাল ফল করবে সেই আশায় এ দিন বাড়িতে ছিলেন তাপসের বাবা-মা। খবর শুনেই উৎসবের আমেজ ছড়াল টিনের একচালা ঘরে।

তৃপ্ত: বাবা-মায়ের সঙ্গে তাপস দেবনাথ।

তৃপ্ত: বাবা-মায়ের সঙ্গে তাপস দেবনাথ।

রাজু সাহা  ও দয়াল সেনগুপ্ত
কামাখ্যাগুড়ি ও সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০৫:১৪
Share: Save:

দু’জনের যুদ্ধজয়ের কাহিনি। বিপক্ষে অনটন।

এক জন উত্তরবঙ্গের কামাখ্যাগুড়ির, অন্য জন রাঢ়বঙ্গের সিউড়ির। মাধ্যমিকের প্রথম দশে নাম তুলে দু’জনে বুঝিয়ে দিল, অধ্যবসায় আর জেদের সামনে বাকি সব তুচ্ছ।

কাকা-কাকিমার সঙ্গে টিনের একচালায় থাকে তাপস দেবনাথ। আলিপুরদুয়ারের কামাখ্যাগুড়িতে। ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতে অসমের কোকরাঝাড়ে আনাজ বিক্রি করেন বাবা, মা। ঘরের এক কোণে পড়ার ছোট্ট জায়গা গড়েছিল তাপস। দিনরাত সেখানেই বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকত। ৬৮২ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় অষ্টম সে।

লটারির টিকিট বেচে টানাটানির সংসার। মাসে ৩০০ টাকা টিউশন-ফি শুনে এক গৃহশিক্ষককে অনুরোধ করেছিলেন বাবা— ‘‘একটু কম নিলে ভাল হয়।’’ আর্তি শোনেননি শিক্ষক। মাধ্যমিকের রেজাল্টে এমন অনেক কিছুর জবাব দিল তাঁর ছেলে শুভম রায়। মেধা তালিকার দশম স্থানে ছেলের নাম রয়েছে শুনে চোখ ভিজল সিউড়ির পরিমলবাবুর।

শুভম রায়। —নিজস্ব চিত্র।

কামাখ্যাগুড়ি লাগোয়া মধ্য পারোকাটা গ্রামের পুলপাড় এলাকায় থাকেন তাপসের কাকা-কাকিমা। ছেলে ভাল ফল করবে সেই আশায় এ দিন বাড়িতে ছিলেন তাপসের বাবা-মা। খবর শুনেই উৎসবের আমেজ ছড়াল টিনের একচালা ঘরে।

আনাজ বেচে আর কত টাকাই বা পান! তাপসের বাবা রতনবাবু এ দিন কিন্তু বললেন, ‘‘ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চেয়েছে। ও ডাক্তার হতে চায়। আমি বলেছি, যেমন ভাবে পারি, পড়াব।’’ একটু থেমে যোগ করেন, ‘‘কিন্তু সেটা যে কী ভাবে, তা জানি না।’’ দুই কাকাই দর্জি। কোনও মতে সংসার চালান। ওঁরা বলছিলেন, ‘‘আমাদের তো সব সময়ে চিন্তা, দিনরাত পড়ে ছেলেটার শরীর না খারাপ হয়!’’ তাপস অবশ্য জানিয়েছে, ওই ভাবে না পড়লে এই ফল করতে পারত না।

বীরভূমের সিউড়ির সাজানোপল্লিতে থাকে শুভমরা। ঠাকুরদা দেবীদাস রায় ইসিএলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। অবসরের টাকা ভেঙেই সেখানে একচিলতে বাড়ি গড়েন তিনি। তার বাবা পরিমলবাবু ভীমগড়ে লটারির টিকিট বেচেন। স্ত্রী ছন্দাদেবী গৃহবধূ। দু’জনে ঠিক করেছিলেন, অনটন যেন ছেলের পড়াশোনায় প্রভাব না ফেলে। পরিমলবাবু জানান, মাধ্যমিকে কোনও ভাবে ছেলেকে টিউশন পড়াতে পেরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক গৃহশিক্ষককে বলেছিলাম ৩০০ টাকা দিতে পারব না, একটু কম নেবেন? ওই শিক্ষক মুখ ফেরান। কিন্তু ছেলে আজ সব দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে।’’

৬৮০ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রবীর সেনগুপ্ত বিদ্যালয়ের ছাত্র শুভম। সে বলে, ‘‘অনেক কষ্ট করে পড়িয়েছেন বাবা, মা। মেধা তালিকায় নাম রেখে সেই কষ্ট দূর করার স্বপ্নই দেখতাম।’’

ডাক্তার হতে চায় শুভমও। সে স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, সময় বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik results মাধ্যমিক
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE