Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন দেবীর মন্দিরে

ঐতিহাসিক এই মন্দিরটিতে এক সময় সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল৷ কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দশ বছর তা খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে৷ এই অবস্থায় মন্দিরের কর্মীরা প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই রাস্তার পাশে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি থেকে হুকিং করে মন্দিরের ভিতরে একটি ও বারান্দায় একটি আলো জ্বালাতেন বলে অভিযোগ৷

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৩
Share: Save:

প্রশাসনের বিভিন্ন মহল থেকে আগেই সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল৷ বাস্তবেও সেটাই মিলে গেল৷ কোনও অন্তর্ঘাত নয়৷ বরং হুকিং করে নেওয়া সংযোগ থেকে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের ফলেই আগুনে পুড়ে গিয়েছে শিকারপুরের ঐতিহ্যবাহী দেবী চৌধুরানি মন্দির৷ কলকাতার রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি সূত্রের খবর, শুক্রবার, অর্থাৎ ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ পর সেখান থেকে এই ঘটনার তদন্তের একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জলপাইগুড়ি জেলার পুলিশ কর্তাদের কাছে পাঠান হয়েছে৷ সেখানে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটকেই এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ি করা হয়েছে৷ যদিও জেলার পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, এখনও তাদের হাতে রিপোর্ট পৌঁছয়নি৷ রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির কর্তাদের আশা, আজ, এক-দু’দিনের মধ্যেই এই রিপোর্ট জেলায় পৌঁছে যাবে৷

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ আগুন লাগে প্রায় আড়াইশো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী শিকারপুরের দেবী চৌধুরানি মন্দির৷ জলপাইগুড়ি থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই মন্দিরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়৷ ঘটনার জেরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখতে পরের দিন সেখানে যান জলপাইগুড়ির ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা৷ পোড়া জায়গা থেকে বেশ কিছু নমুনাও সংগ্রহ করেন তাঁরা৷

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঐতিহাসিক এই মন্দিরটিতে এক সময় সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল৷ কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দশ বছর তা খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে৷ এই অবস্থায় মন্দিরের কর্মীরা প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই রাস্তার পাশে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি থেকে হুকিং করে মন্দিরের ভিতরে একটি ও বারান্দায় একটি আলো জ্বালাতেন বলে অভিযোগ৷ মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শিকারপুর চা বাগানের কর্তারাও তা মেনে নেন৷ ফলে বিভিন্ন কারণের সঙ্গে প্রথম থেকে তদন্তকারীদের মধ্যে এমন সন্দেহও দানা বাধে, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে এই ঘটনা ঘটতে পারে৷

এই সন্দেহ আরও জোরাল হয় গত রবিবার৷ নবান্নের নির্দেশে ওই দিন ঘটনার তদন্তে শিকারপুর আসেন রাজ্য ফরেন্সিক বিভাগের বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জেলার পুলিশ কর্তারাও ওই দিন মোটের উপর এক প্রকার নিশ্চিত হন, শর্ট সার্কিটের ফলেই এই অগ্নিকাণ্ড৷

কলকাতার রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তের পর তাঁরাও নিশ্চিত বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের ফলেই এই অগ্নিকাণ্ড৷ ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি সূত্রের খবর, সম্ভবত মন্দিরের ভিতরে থাকা বাল্বটি যে হোল্ডারে লাগানো হয়েছিল, সেখানেই এই শর্ট সার্কিটের ফলে আগুন ধরে৷ তদন্তে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা জানতে পেরেছেন, একে মন্দিরটি কাঠের, তা ছাড়া মন্দিরের উপরে একটি ফলস সিলিং-ও ছিল৷ ফলে আবদ্ধ ওই ঘরের ভেতরে প্রথমে আগুনটা বেশ কিছুক্ষণ জ্বলে৷ তারপরই তা বাইরের দিকে আসে৷ ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটারি সূত্রের খবর, শুক্রবার এই প্রাথমিক রিপোর্টটি জলপাইগুড়িতে পাঠান হয়েছে৷ তবে কিছু দিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত রিপোর্টও দেবেন তারা৷ তবে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘এখনও রিপোর্ট হাতে পাইনি৷’’ ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি সূত্রের খবর, এক-দুইদিনের মধ্যেই পুলিশ সুপারের দফতর ও রাজগঞ্জ থানায় এই রিপোর্ট পৌছে যাবে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Short circuit Devi Chaudhurani Temple Burnt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE