উলুবেড়িয়ার বাহিরতফায় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। ছবি: সুব্রত জানা।
প্রচণ্ড গরমে রাজ্যের বেশিরভাগ হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুলে গত ২ মে থেকে গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রগুলিতে পড়াশোনা করতে আসা কচি-কাঁচাদের ছুটি নেই। রোজকার তাপমাত্রা যেখানে ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে সেখানে কেন্দ্রগুলিতে গরমে শিশুদের কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেশ কিছু কেন্দ্রের কর্মী-সহায়াকিরা।
শুধুমাত্র হাওড়া জেলাতেই রয়েছে প্রায় ৪ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। প্রতিটি কেন্দ্রে রয়েছে গড়ে ৪০ জন করে পড়ুয়া। বয়স ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত। পড়াশোনার শেষে তারা এখানে সুষম খাবার খেয়ে বাড়ি যায়। কিন্তু এক নাগাড়ে প্রচণ্ড গরমে অধিকাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পড়ুয়ারা আসছে না বললেই চলে। কেন্দ্রের এই প্রকল্প মূলত শিশুদের সুষম খাদ্য খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে শিশুদের একটা বড় অংশ গরহাজির থাকায় তাদের জন্য যে রান্না করা হচ্ছে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে জানা গিয়েছে। জেলায় প্রায় অর্ধেক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব বাড়ি নেই। এই সব কেন্দ্র চলে প্রাথমিক স্কুল অথবা ক্লাবঘরে। যে সব কেন্দ্রের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে সেখানে পঠন-পাঠন চলে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত। অন্য দিকে স্কুলগুলিতে পঠন-পাঠন চলে সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। গরমের ফলে যে সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে তাদেরও সকালেই পঠন-পাঠন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে জেলার প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এখন খোলা থাকছে সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত।
কিন্তু এতেও সমস্যা কাটেনি। কয়েকদিন ধরে তাপপ্রবাহ ক্রমশ বেড়ে চলায় সকাল ৯ টার পর রাস্তাঘাটে বের হওয়াই দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় বেলা ১১টা পর্যন্ত কেন্দ্রে বসে থেকে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে অভিভাবকদের অভিযোগ। উলুবেড়িয়ার বাহিরতফায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলে প্রাথমিক স্কুলে। সেখানে দেখা গেল টিনের চালের ঘরে জনা কুড়ি খুদে পড়াশোনা করছে। টিনের চালের তাপে ও প্রচণ্ড গরমে দরদর করে ঘমছে তারা। অনেককেই দেখা গেল জামা খুলে খালি গায়ে বসে আছে। শিক্ষিকা এবং সহায়িকা জানালেন, “কী করব। কেন্দ্র বন্ধ রাখতে পারব না। অথচ বুঝতে পারছি এই গরমে ওদের খুবই কষ্ট হচ্ছে।”
শিক্ষিকা আরও জানালেন, “কেন্দ্রে পড়ুয়ার সংখ্যা ৪২। কিন্তু গরমের জন্য অর্ধেকের বেশি পড়ুয়া আসছে না। যারা আসছে তারাও কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।” বাইরে অপেক্ষা করছিলেন প্রতিমা অধিকারী এবং নাসিমা বেগম নামে দুই অভিভাবক। প্রতিমাদেবীর কথায়, “আমার ছেলে এখানে পড়ে। গরমে আসতে চায় না। কিন্তু স্কুল তো খোলা। তাই জোর করে নিয়ে এসেছি। সব স্কুলেই তো গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। অথচ এগুলো চালানো হচ্ছে কেন?” একই প্রশ্ন নাসিমারও।
বাগনানের বাইনানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির নিজস্ব ঘর রয়েছে। এখানে বেলায় পঠন-পাঠন চলত। কিন্তু গরমের জন্য সকালে পঠন-পাঠন চলছে। জনা দশেক পড়ুয়া নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষিকা। টিনের ছাউনির ঘরে যেন আগুনের হল্কা বেরোচ্ছে। শিক্ষিকা বললেন, “ছাত্রছাত্রীরা আসছে না। খাবার নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্র বন্ধ রাখা যাবে না। এটাই সরকারের নির্দেশ।”
শুধু শিশুদের পড়ানো, সুষম খাবার দেওয়াই নয়, কেন্দ্রে প্রসূতিদের সন্তান প্রসবের পর থেকে সাত মাস পর্যন্ত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। একইসঙ্গে গর্ভবতী মায়েদেরও খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে প্রসূতি এবং গর্ভবতী মায়েরাও এ দিকে ঘেঁষছেন না বলে বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রর শিক্ষিকা এবং সহায়িকারা জানিয়েছেন।
প্রচণ্ড গরমে কেন্দ্রগুলিতে এমন চিত্র উঠে এলেও এ ব্যাপারে তাঁদের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন জেলা শিশু ও নারী কল্যাণ সংক্রান্ত প্রকল্প আধিকারিকের দফতরের এক কর্তা। তাঁর কথায়, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। মূলত মা এবং শিশুদের সুষম আহার দেওয়ার জন্য বছরে অন্তত তিনশো দিন প্রকল্পটি চালানো দরকার। ফলে প্রচণ্ড গরমেও দীর্ঘমেয়াদী ছুটি দেওয়ার উপায় নেই।
হাওড়া জেলা পরিষদের নারী ও শিশুকল্যাণ সংক্রান্ত কর্মাধ্যক্ষ আম্বিয়া বেগম বলেন, “আমি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছিলাম। আমাকে জানানো হয়েছে, এটা যেহেতু সুষম খাদ্য সংক্রান্ত কর্মসূচি তাই কেন্দ্র বন্ধ করা যাবে না। গরমে শিশুদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখেও তাই কেন্দ্রগুলি সকালে চালানো হচ্ছে।” একইসঙ্গে অবশ্য তিনি বলেন, “আগামী শিক্ষাবর্ষে গরম পড়ার আগেই সমস্যাটি নিয়ে নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করব। শুধুমাত্র সুষম খাদ্য খেতে পাবে বলে বেলা ১১টা পর্যন্ত গরমের মধ্যে শিশুরা বসে থাকবে এটা খুবই কষ্টকর। বিকল্প পথ খুঁজতেই হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy