Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রবিবাসরীয় সকালে লম্বা লাইন ব্যাঙ্কে

এ এক অন্য রবিবার। রবিবাসরীয় সকালে ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। কিন্তু প্রায় ফাঁকা কাঁচাবাজার এবং মাংসের দোকান।

কদম্বগাছিতে ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। ছবি: সুদীপ ঘোষ

কদম্বগাছিতে ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:১২
Share: Save:

এ এক অন্য রবিবার।

রবিবাসরীয় সকালে ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। কিন্তু প্রায় ফাঁকা কাঁচাবাজার এবং মাংসের দোকান।

নোটের গেরো যেন আরও পাকিয়ে উঠেছে দুই ২৪ পরগনায়। বিক্ষিপ্তভাবে হলেও শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা তুলতে না পেরে দেগঙ্গা থানার বেড়াচাঁপা এলাকার একটি ব্যাঙ্কের সামনে পথ অবরোধ করেন গ্রাহকেরা। কাকদ্বীপের এসবিআই শাখা বিকেল ৪টের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিক্ষোভ দেখান গ্রাহকেরা।

বাজারের অধিকাংশ দোকানিরা জানিয়েছেন, খুচরো টাকা না পেলে তাঁরা আর জিনিস বিক্রি করবেন না। কয়েকটি দোকানের সামনে নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট নেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ, বেশিরভাগ ওষুধের দোকান এ দিন ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট নিতে অস্বীকার করেছে।

শনিবারের মতো রবিবারেও দুই জেলার কয়েকটি এটিএমে টাকা এলেও সেটি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। ব্যাঙ্কে দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়েও টাকা পাননি অনেকে। মুখ্য ডাকঘরগুলিতে টাকা পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ উপডাকঘরে এ দিনও টাকা আসেনি। তবে টাকা জমা নেওয়া হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ডাকঘর সূত্রে খবর, গত কয়েক দিনে কয়েক কোটি টাকার ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট জমা প়়ড়েছে। ডাকঘরে পুলিশ পাহারার জন্য আবেদন করা হয়। এ দিন কম্পিউটার লিঙ্ক না থাকায় কয়েকটি ডাকঘরে টাকা জমা দেওয়া এবং তোলার কাজ ব্যহত হয়।

বসিরহাট থানা চত্বরে ঘুরছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা পেশায় সাংবাদিক আবু কাজী। তিনি কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। বললেন, ‘‘টাকা পরিবর্তন নিয়ে খুবই সমস্যায় পড়েছিলাম। কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা টাকা ভাঙিয়ে দেওয়ায় কলকাতায় যেতে পারি। কলকাতায় চিকিৎসকও যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।’’ টাকি-হাসনাবাদ এলাকায় কয়েকটি ব্যাঙ্ক এবং এটিএমের সামনে শিবির করে জল, বাতাসা এবং মুড়ি দিচ্ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই শিবির থেকেই প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

দেগঙ্গায় টাকা না মেলায় পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।

একে তো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল হয়ে গিয়েছে, তার উপর ১০ টাকার কয়েন নিয়েও তৈরি হয়েছে সমস্যা। ১০ টাকার কয়েন নিতে চাইছে না অধিকাংশ দোকান। রেল স্টেশন এবং কয়েকটি ব্যাঙ্কেও এই কয়েন নিতে অস্বীকার করা হচ্ছে। বাদুড়িয়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম, বাবুল দাস, স্বরূপনগরের রমেন সর্দারদের ক্ষোভ, ‘‘বাজারে কেউ ১০ টাকার কয়েন নিতে চাইছে না। অথচ বাড়িতে অনেকগুলি ১০ টাকার কয়েন জমে রয়েছে। বাজারে যখন নোটের আকাল তখন আবার কয়েন সমস্যায় আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।’’

বনগাঁ, ক্যানিং, বারাসত, ব্যারাকপুর-সহ জেলার অন্যান্য মহকুমার বেশিরভাগ এটিএম এ দিনও বন্ধ ছিল। ব্যাঙ্কের সামনে ছিল লম্বা লাইন। এ দিন ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের প্রতিবাদে বনগাঁ শহরে মিছিল করে আইএনটিটিইউসি। তবে ব্যতিক্রমী ছবি দেখা যায় বনগাঁ শহরের স্কুল রোডের পাশে একটি দর্জি তথা পোশাক বিক্রির দোকানে। ওই দোকানের সামনে নোটিস টাঙিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘কোট-প্যান্ট বিক্রি। পুরনো ৫০০ ও ১০০০ নোটে।’’ দোকানের মালিক মহম্মদ সাকির বলেন, ‘‘৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের কারণে অনেকেই জামা তৈরি করাতে অথবা কিনতে পারছেন না। তাই আমরা ওই নোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাঙ্কে গিয়ে নোট বদলে নেব।’’ শীতের শুরুতে ওই দোকানে কোট তৈরি করতে গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘‘৫০০ টাকা ভাঙানো এবং কোট তৈরি দু’টোই দরকার ছিল। এখানে এসে দু’টোই হয়ে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Money Rupees Bank ATM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE