পানীয় জল, নিকাশি, রাস্তা— পরিকাঠামোগত সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন হাওড়ার সাঁকরাইলের একটি আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা। সেই সমস্যা কারা মেটাবে তা নিয়ে জেলা পরিষদ ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে ওই আবাসনের সমবায়ের কর্তাদের চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে।
সমবায়ের কর্তাদের বক্তব্য, পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার দায়িত্ব জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতেরই। কিন্তু পাল্টা জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতের বক্তব্য, পরিকাঠামো গড়ে তোলার দায়িত্ব সমবায়ের নিজেদেরই।
দক্ষিণ পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার সাঁকরাইল স্টেশনের দক্ষিণ দিকে রামচন্দ্রপুর, সাঁকরাইল-জলা এবং সাঁকরাইল এই তিনটি মৌজায় ৭৪ একর জমিতে ১৯৮৪ সালে আবাসন প্রকল্পটি গড়ে ওঠে। যাঁদের নিজেদের বাড়ি নেই, এমন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরাই ওই আবাসনের বাসিন্দা। তাঁরাই সমবায়টি গঠন করেন। সমবায়ের উদ্যোগেই জমি কেনা হয়। তার পরে মাটি ফেলে জমি ভরাট করা হয়। প্রত্যেক সদস্য সমবায় থেকে দু’কাঠা করে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন। সব মিলিয়ে ওই আবাসনে প্রায় ৮০০টি পরিবার বাস করে।
সমবায়ের কর্তাদের অভিযোগ, তাঁরা পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যন্ত স্মারকলিপি দিয়েছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কিছু দফতর এখানে গড়া হয়েছে। এমনকী, একটি বাসস্ট্যান্ডও করা হয়েছে তাঁদের জমিতে। পঞ্চায়েতকে তাঁরা নিয়মিত করও দিচ্ছেন। অথচ, পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার কথা উঠলে জেলা পরিষদ বা গ্রাম পঞ্চায়েত এড়িয়ে যাচ্ছে।
আবাসিকদের বক্তব্য, প্রকল্প এলাকায় প্রায় ৪০ ফুট চওড়া তিনটি মোরাম রাস্তা তাঁরা নিজেরাই সমবায়ের তহবিল থেকে তৈরি করেছেন। কিন্তু প্রয়োজন আরও বেশি রাস্তার। আর তা করার কথা পঞ্চায়েতের। কিন্তু পঞ্চায়েত উন্নয়ন থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে।
সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থারও দাবি জানান বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, এই কাজেও পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদের ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। বর্ষার সময় আবাসন প্রকল্পের পুরো এলাকা জলে ডুবে যায়। যাতায়াতে দুর্ভোগ হয়।
সমস্যা রয়েছে পানীয় জল নিয়েও। এলাকায় কোনও নলকূপ নেই। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর পাশের গ্রামগুলিতে জল সরবরাহ করলেও আবাসন প্রকল্পে তাদের জল সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে, বাসিন্দারা নিজেদের খরচেই বাড়িতে গভীর নলকূপ বসিয়ে নিয়েছেন। অনেকে আবার পাশের গ্রামের নলকূপ থেকে জল নিয়ে আসেন। সমবায়ের পক্ষে অর্ণবকুমার দাম বলেন, “গত ১৬ জানুয়ারি একটি চিঠি দিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাওড়া ডিভিশন আমাদের জানিয়েছিল আবাসনে জল দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। তবে, পাম্প হাউস বসানোর খরচ আমাদেরই দিতে হবে। আমরা এই প্রস্তাবে রাজি আছি। কিন্তু তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় তিন মাস। ওই দফতর আর উচ্চবাচ্য করেনি।”
সমবায়ের অন্যতম কর্তা অমরেশকুমার পানি জানান, জীবনধারণের নূন্যতম কোনও পরিকাঠামো না-থাকায় প্রকল্প থেকে অনেকে বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যেতে চাইছেন। কিন্তু এই সব বাড়ি কেউ কিনতেও চাইছেন না। তিনি বলেন, “শেষ বারের মতো মুখ্যমন্ত্রীকে একবার আমরা সব কথা জানাব। তার পরেও সমস্যার সমাধান না-হলে আমরা পঞ্চায়েতকে কর দেওয়া বন্ধ করে দেব।”
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক কর্তা অবশ্য জানান, এই আবাসনে জল সরবরাহের ব্যবস্থা হবে। যাবতীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাস্তার সমস্যা নিয়ে জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্যের দাবি, “আমি যত দূর জানি, জমি কেনার সময় বলে দেওয়া হয় সমবায়ই সব পরিষেবার ব্যবস্থা করবে।” সংশ্লিষ্ট সাঁকরাইল পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের সুমিতা সিংহও বলেন, “আমরা আবাসনের বাসিন্দাদের থেকে তাঁদের বসবাসের জন্য কর নিই ঠিকই। কিন্তু রাস্তাঘাট-সহ যাবতীয় পরিকাঠামো গড়ার কথা তো সমবায়েরই। তবে, সমবায়ের মালিকানাধীন রাস্তাঘাট যদি পঞ্চায়েতের হাতে আসে, তা হলে নিশ্চয়ই আমরা তা তৈরি করব।”
সহ-সভাধিপতি আশ্বাস দিয়েছেন, “সমস্যাগুলি নিয়ে লিখিত ভাবে আমাদের কাছে জানালে কী ভাবে সমাধান করা যায় তা আলোচনা করা যাবে।” অজয়বাবু দাবি করেন, “আগের বোর্ড থাকাকালীন কী হয়েছিল জানি না। আমরা সমবায়ের কাছ থেকে কোনও চিঠি পাইনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy