Advertisement
E-Paper

এখনও ভিটেছাড়া আমতায় দুই ধর্ষিতার পরিবার

পাঁজর বের-করা ইটের দেওয়াল ঘেরা দু’খানা খুপরি ঘর। উপরে টালির চাল। বাইরে দাঁড়িয়ে দুই পুলিশকর্মী, জনা তিনেক সিভিক পুলিশ। টিনের দরজা খুলে বালতি হাতে বেরিয়ে এলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলা। পিছনে দু’টি গরু-বাছুর। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে মহিলা ফ্যান-খড়ের বালতি ধরলেন পোষ্যদের মুখে। ফের তাদের গোয়ালে ঢুকিয়ে বেরিয়ে পড়লেন বাড়ি থেকে।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪১

পাঁজর বের-করা ইটের দেওয়াল ঘেরা দু’খানা খুপরি ঘর। উপরে টালির চাল। বাইরে দাঁড়িয়ে দুই পুলিশকর্মী, জনা তিনেক সিভিক পুলিশ। টিনের দরজা খুলে বালতি হাতে বেরিয়ে এলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলা। পিছনে দু’টি গরু-বাছুর। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে মহিলা ফ্যান-খড়ের বালতি ধরলেন পোষ্যদের মুখে। ফের তাদের গোয়ালে ঢুকিয়ে বেরিয়ে পড়লেন বাড়ি থেকে।

পোষ্যদুটি থাকলেও গত দু’মাস বাস্তুভিটেতে নিজে রা রাত কাটান না, জানালেন প্রৌঢ়া। গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে হাওড়ার আমতার মুক্তিরচক গ্রামের এই বাড়িতেই গণধর্ষিতা হন তাঁর বড় জা এবং তাঁর নিজের পুত্রবধূ। ধরা পড়েছে মূল অভিযুক্ত বরুণ মাকাল, রঞ্জিত মণ্ডল-সহ আট জন। কিন্তু তার পরেও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে পরিবারটিকে। গণধর্ষিতা দুই বধূ কোথায় আছেন, তা নিয়ে টুঁ শব্দটি করলেন না প্রৌঢ়া। জানালেন, নিজেরাও ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে এ বাড়িতে আর রাত কাটাচ্ছেন না।

আতঙ্ক কীসের? ধৃত আট জন ছাড়া আরও কয়েক জনের নামে পরে অভিযোগ করেছিলেন নির্যাতিতারা। তাদের মধ্যে এক জন গ্রেফতার হলেও পাঁচ জন এখনও অধরা। সেটাই আতঙ্কের। অভিযোগ, তারা নানা ভাবে শাসানি দিচ্ছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রৌঢ়ার অভিযোগ, হুমকির জেরে তাঁরা বাড়ি ফিরতে না পারলেও অভিযুক্তেরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। নিরাপত্তা চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও করেছে পরিবারটি।

বৃহস্পতিবার সেই মামলায় পুলিশের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। দুই মহিলা ও তাঁদের পরিবার যাতে শান্তিতে গ্রামে বসবাস করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন আমতার সার্কেল ইন্সপেক্টরকে। এই নির্দেশ যথাযথ পালন করা হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে আগামী ৬ মে রিপোর্ট পেশ করতে হবে আদালতে।

হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের অবশ্য দাবি, তদন্তে গাফিলতি নেই। বাড়িতে পুলিশ পিকেটও বসেছে।

আদালতের নির্দেশের পরে অবশ্য এ দিন কোনও পুলিশ কর্তাকে গ্রামে দেখা যায়নি। জেলা পুলিশের তরফে নতুন কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “পরিবারটি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। বাড়িতে পুলিশ পিকেট রয়েছে। ওঁরা বাড়ি ফিরলে নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা হবে না।”

এ দিন মুক্তিরচক গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, এলাকা এখনও সুনসান। সন্ধ্যার পরে বাজার-দোকান কার্যত বন্ধ হয়ে যায় বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নিজেদের বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে শ্বশুরের ভিটেয় আশ্রয় নিয়েছেন নির্যাতিতা এক মহিলার শাশুড়ি। তিনি বললেন, “একটি গরু এবং বাছুর রয়েছে আমার নিজের বাড়িতে। তাদের খাওয়ানোর জন্য এবং সন্ধ্যাবেলায় গৃহদেবতাকে পুজো দেওয়ার সময় বাড়িতে যাই। কিন্তু রাতে ওখানে থাকা সম্ভব নয়।” প্রৌঢ়া জানান, এখনও নানা ভাবে হুমকি আসছে। নির্যাতিতা বধূর স্বামীও ফোনে বলেন, “আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” কোথায় আছেন, সে কথা জানাতে অস্বীকার করেন তিনিও।

নির্যাতিতার পরিবার সিপিএম সমর্থক বলে পরিচিত। ঘটনায় জড়িতরা তৃণমূলের। ধৃত বরুণ মাকাল এবং রঞ্জিত মণ্ডল দু’জনেই তৃণমূল নেতা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য তাঁদের পরিবারের দুই মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন প্রৌঢ়ার দেওর। তাঁর আরও অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজনের বাধায় তাঁরা এ বছর নিজেদের জমিতে চাষও করতে পারেননি। উলুবেড়িয়া উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

amta gangrape
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy