স্বাধীনতার পর থেকে আশপাশের অনেক কিছুই পাল্টে গিয়েছে। কিন্তু আমতা-২ ব্লকের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিত্নান পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার বিস্তৃত রাস্তাটির হাল এখনও ফেরেনি। প্রতি বার ভোটের প্রচারে রাস্তা তৈরি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির আশ্বাস শোনেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। এ বারও ভোটের প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলি একই আশ্বাস দিয়েছে। গ্রামবাসীরা বলছেন, না আঁচালে বিশ্বাস নেই।
হাওড়া জেলার ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিত্নান এই দু’টি পঞ্চায়েত এলাকাই মূলত দ্বীপভূমি। তিন দিক নদী ঘেরা। ফুলিয়া থেকে গায়েনপাড়া ফেরিঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ওই তিন কিলোমিটার রাস্তাটি মাটির। বলাবাহুল্য সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই খানাখন্দে ভরা। তার উপর গরমে ধুলোর দাপটে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় পথচারীদের। বর্ষায় অবস্থা আরও শোচনীয়। কাদা রাস্তায় যাতায়াত প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে।
অথচ, উত্তর ভাটোরা, দক্ষিণ ভাটোরা, পারবাকসি, কাশমলি, ঘোড়াবেড়িয়া, চিত্নান, আজনগাছির মতো কয়েকটি গ্রামের মানুষ ছাড়াও এই রাস্তায় যাতায়াত করতে হয় হাওড়া, হুগলি এবং মেদিনীপুরের বাসিন্দাদেরও। ওই রাস্তাটি নতুন ভাবে তৈরির জন্য গ্রামবাসীরা প্রশাসনের নানা মহলে ইতিমধ্যেই একাধিকবার দরবার করেছেন, কিন্তু কাজ কিছু হয়নি। এলাকার মানুষের ক্ষোভ, পঞ্চায়েত যদি রাস্তা তৈরিতে উদ্যোগী না হয়, তা হলে জেলা পরিষদও তো প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাটি তৈরি করতে পারত। কিন্তু এলাকার মানুষের কথা ভেবে কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
উত্তর ভাটোরা গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চু মণ্ডল বলেন, “হোঁচট খেতে খেতে খারাপ রাস্তা দিয়েই সকলকে যাতায়াত করতে হয়। প্রতি বার ভোটের সময় অনেক প্রতিশ্রুতিই দেন রাজনৈতিক দলগুলির নেতা-নেত্রীরা। কিন্তু ভোট গেলে যে কে সেই।” দীর্ঘদিন ধরেই সামান্য অর্থের বিনিময়ে উত্তর ভাটোরা হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই রাস্তাটুকু নিজের মোটরবাইকে পারাপার করিয়ে দেন গায়েনপাড়ার বাসিন্দা শিবু মণ্ডল। তাঁর কথায়, “রাস্তার যে হাল হয়েছে তাতে চলাফেরা খুব অসুবিধাজনক। খানাখন্দ থাকায় যাত্রিবাহী গাড়ি চলে না। মোটরবাইকই ভরসা। অনেকেই পারেন না। তাই নিজের মোটর সাইকেলে করে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দিই।”
রাস্তাটি তৈরির ব্যাপারে ভাটোরা পঞ্চায়েত অবশ্য জেলা পরিষদের ঘাড়েই যাবতীয় দায় চাপিয়ে দিয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের অর্ধেন্দুভূষণ আলুর অভিযোগ, “জেলা পরিষদকে রাস্তাটি সংস্কারের বিষয়ে অনেকবার জানিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি।”
জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কল্যাণ ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তবে একইসঙ্গে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান। ঘোড়াবেড়িয়া-চিত্নান পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সাবিনা বেগম জানান, রাস্তা মেরামতির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে।