Advertisement
E-Paper

গয়নার লোভেই খুঁচিয়ে খুন অপর্ণাকে

সোনাদানা লুঠ করতেই খুন করা হয়েছিল গাইঘাটার চাঁদপাড়া বিএম পল্লি এলাকার বধূ অর্পণা মণ্ডলকে। অর্পণাদেবীর ভাড়াটিয়া দম্পতি-সহ ধৃত তিন জনকে জেরা করে এই দাবি করল পুলিশ। তদন্তকারী অফিসারদের আরও দাবি, ধৃতেরা খুনের কথা কবুলও করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০১:১৩

সোনাদানা লুঠ করতেই খুন করা হয়েছিল গাইঘাটার চাঁদপাড়া বিএম পল্লি এলাকার বধূ অর্পণা মণ্ডলকে। অর্পণাদেবীর ভাড়াটিয়া দম্পতি-সহ ধৃত তিন জনকে জেরা করে এই দাবি করল পুলিশ। তদন্তকারী অফিসারদের আরও দাবি, ধৃতেরা খুনের কথা কবুলও করেছে।

গত ৯ মে সন্ধ্যায় ওই অপর্ণাদেবীর বাড়ির শৌচাগার থেকে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, চুমকি বিশ্বাস এবং গঙ্গা বিশ্বাস। সকলেই এখন পুলিশি হেফাজতে আছে। বিশ্বজিৎ ও চুমকি অপর্ণাদেবীর বাড়িতেই ভাড়া থাকত। তবে বাড়ি দু’টি আলাদা।

তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, অর্পণাদেবীর স্বামী গৌতমবাবু সল্টলেকে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায় কর্মরত। তিনি সকালে বেরিয়ে যান। ফেরেন রাতে। এক ছেলে বাইরে থেকে পড়াশোনা করে। দোতলা বাড়িতে দীর্ঘ সময়ে অর্পণাদেবী একাই কাটাতেন। অনেক সময়ে চুমকিকে ডেকে এনে লুডো খেলতেন। দু’জনে এক সঙ্গেও টিভিও দেখতেন। প্রতিবেশী গঙ্গাও তাঁর বাড়িতে আসত। সে পাশেই অন্য একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। পড়শিদের এই আড্ডা থেকেই অর্পণাদেবীর ঘরে থাকা সোনার গয়নার কথা জানতে পারে চুমকিরা। অর্পণার গায়েও বেশ কিছু গয়না ছিল।

পুলিশের দাবি, সোনাদানা হাতানোর লোভেই অপর্ণাকে খুনের ছক কষেন বিশ্বাস দম্পতি এবং গঙ্গা। লুঠ করা গয়না বিক্রি করে অন্যত্র জমি-বাড়ি কেনার কথাও ঠিক হয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সাত দিন আগে খুনের পরিকল্পনা হয়।

কী ভাবে খুন করা হয়েছিল ওই বধূকে?

পুলিশ জানিয়েছে,ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গঙ্গা অর্পণাদেবীকে ডাকে। তিনি তখন স্নান করছিলেন। গঙ্গা বলে, “বৌদি, খুব দরকার। তাড়াতাড়ি দরজা খুলুন।” প্রতিবেশীর প্রয়োজন শুনে তড়িঘড়ি গায়ে গামছা জড়িয়েই বেরিয়ে আসেন অপর্ণাদেবী। গেট খুলে দেন। চুমকি, গঙ্গা এবং বিশ্বজিৎ তিন জনেই ঘরে ঢোকে। অর্পণার মুখ চেপে ধরে শৌচাগারের ভিতরে নিয়ে গিয়ে সেখানেই লোহার ৮ ইঞ্চি ছেনি দিয়ে খুঁচিয়ে খুন করা হয় তাঁকে। বুকের বাঁ দিকে ওই ছেনি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। রক্তাক্ত অপর্ণার গা থেকে গয়নাগাটি খুলে নেয় আততায়ীরা। এরপরে ঘরে গিয়ে আলমারি খোলে তারা। তবে লকার ভাঙতে পারেনি।

এ দিকে, অন্য এক ভাড়াটিয়া মহিলা কিছু ক্ষণ পরে অর্পণাদেবীর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তিনিই চিৎকার-চেঁচামিচি করে লোক জড়ো করেন। বিশ্বজিতের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এলাকার লোকজন। অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ আরও গাঢ় হয়। বিশ্বজিৎকে আটকে রেখে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। অপর্ণারর উপরে হামলার সময়ে হাতে চোট পেয়েছিল চুমকি। সে তড়িঘড়ি গিয়ে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যায়। হাসপাতালে সে জানিয়েছিল, দুর্ঘটনায় চোট পেয়েছে। পরে পুলিশ সেখান থেকেই তাকে ধরে। গঙ্গাকেও গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, অর্পণাদেবীর গয়না চুমকির বাপের বাড়ি, বনগাঁর ট্যাংরা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা নিহত মহিলার বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সংগ্রহ করা হয়েছে হাতের ছাপের নমুনাও।

এলাকার বাসিন্দারা ভাবতেই পারছেন না, অর্পণাদেবীর ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীরাই তাঁকে খুন করতে পারে। চুমকির সঙ্গে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের সম্পর্ক ছিল না অপর্ণার। রীতিমতো আত্মীয়তা গড়ে উঠেছিল দুই পরিবারের মধ্যে। উৎসব-অনুষ্ঠানে অপর্ণাদেবীর বাড়িতে ওই দম্পতিকে নিমন্ত্রণ করা হত। ভাল খাওয়া-দাওয়া হলেও তা পৌঁছে যেত বিশ্বাস দম্পতির ঘরে।

gaighata aparna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy