Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের উস্কানিতেই বাধা, দাবি অধীরেরও

তৃণমূলের উস্কানিতেই রবিবার পোলবার কামদেবপুর গ্রামে গিয়ে দলীয় নেতৃত্বকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিল কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী নিজেও সোমবার গ্রামে সেই দাবিই করেছেন।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২০:৫৯
আদিসপ্তগ্রামে নিহত কংগ্রেসকর্মী অভিজিৎ রহমানের মায়ের অনশন ভাঙালেন অধীর চৌধুরী। ছবি: তাপস ঘোষ।

আদিসপ্তগ্রামে নিহত কংগ্রেসকর্মী অভিজিৎ রহমানের মায়ের অনশন ভাঙালেন অধীর চৌধুরী। ছবি: তাপস ঘোষ।

তৃণমূলের উস্কানিতেই রবিবার পোলবার কামদেবপুর গ্রামে গিয়ে দলীয় নেতৃত্বকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিল কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী নিজেও সোমবার গ্রামে সেই দাবিই করেছেন। এমনকী অধীরের দাবি, গ্রামবাসীদের একাংশও তাঁকে একই কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ এ-ও বলেছেন, তৃণমূলের কিছু লোক ‘বাড়াবাড়ি’ করেছে। এমনকী, গ্রামের কয়েক জনের উপরে রবিবার চড়াও হয় তারা।

সোমবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী-সহ কংগ্রেসের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল আসে কামদেবপুরে। তাঁরা দেখা করেন নির্যাতিতা মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে। মেয়েটির বাড়িতে দাঁড়িয়েই অধীরবাবু বলেন, “আমরা ওঁদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি। ওঁরা কেন বাধা দেবেন। রবিবারের ঘটনা যে শাসক দলের কর্মীদের দিয়ে ঘটানো হয়েছিল, এ দিন তা স্পষ্ট।” প্রদেশ সভাপতির দাবি, পোলবার ওই গ্রামে রবিবার কংগ্রেস কর্মীদের যাঁরা বাধা দিয়েছিল, তারা ‘বহিরাগত’। তিনি বলেন, “শুধু প্রদেশ নেতৃত্বকেই নয়, ওই বহিরাগত তৃণমূল কর্মীরা মারধর করেছিলেন ওই কিশোরীর আত্মীয়দেরও।”

রবিবার কংগ্রেস নেতৃত্বকে গ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হলেও তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার রবিবার সকালেই নির্যাতিতাকে হাসপাতাল থেকে সঙ্গে করে পৌঁছে দেন গ্রামে। রাজনীতি যদি তাঁরা না-ই চাইবেন, তৃণমূল বিধায়ক তা হলে গ্রামে এলেন কী ভাবে, প্রশ্ন কংগ্রেসের।

অসিতবাবু গ্রামবাসীদের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঁরা যে অভিযোগ করছেন, তা ভিত্তিহীন। এলাকার বিধায়ক হওয়ায় বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াই। তাই মেয়েটির সঙ্গে ছিলাম। ঘটনাটি জেলাশাসক থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, সকলকে জানিয়েছি।” কংগ্রেস নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, “ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে অভিযুক্ত। পুলিশ-প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ করছে। তবু ঘটনার তিন পরে ওঁরা এসে নাটক করছেন।”

রবিবার কংগ্রেস প্রতিনিধি দলকে আটকাতে কালো পতাকা নিয়ে, প্ল্যাকার্ডে ‘রাজনীতি চাই না’ লিখে কামদেবপুর গ্রামে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকশো নারী-পুরুষ। অনেকের হাতে লাঠিসোঁটাও ছিল। শুক্রবার ওই গ্রামেরই এক কিশোরী ধর্ষিতা হয়। গ্রেফতারও হয় এক জন।

এ দিন অবশ্য ছবিটা ছিল একেবারেই আলাদা। কংগ্রেস নেতৃত্বকে ঘিরে ধরে অভাব-অভিযোগের কথা শোনান গ্রামের মহিলারা। নির্যাতিতা মেয়েটির পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন অধীরবাবুরা। গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জন সাউ, মানা সিংহরা অভিযোগ করেন, এলাকায় পানশালার জন্যই মেয়েদের উপরে অত্যচার বাড়ছে। প্রদেশ সভাপতি সমস্যা সমাধানের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেন। দীপালি মাইতি, সুজন লোহার, দিলীপ কোলেরা পরে জানান, খেটে খাওয়া গরিবগুর্বো মানুষের বাস এই গ্রামে। সেখানে কোনও রকম অশান্তি চান না তাঁরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে রাজনীতির লোকেদের দাপাদাপি তাঁরা পছন্দ করছেন না। তবে কেউ সত্যি সত্যি পাশে দাঁড়াতে চাইলে আপত্তি নেই তাঁদের। তবে গ্রামের মেয়ের ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে দলীয় পতাকার তলায় রাজনীতি করা চলবে না। গ্রামের কারও কারও বক্তব্য, রবিবার কংগ্রেস নেতৃত্বের গাড়ি আটকে হামলা তাঁরা ভাল চোখে দেখছেন না। ওই ঘটনার পিছনে ‘তৃণমূলের একাংশের উসকানি’ ছিল বলেও তাঁদের অভিযোগ।

ক’দিন আগে আদিসপ্তগ্রামে দলের সমর্থক অভিজিৎ রহমানকে খুন এবং পোলবায় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন চুঁচুড়ার খাদিনা মোড়ে মৌনী মিছিলে যোগ দেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। ঘড়িমোড়ে ছোট সভা করেন। তবে মাধ্যমিক চলায় মাইক বাজানো হয়নি। সভায় ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী, সদ্য বিদায়ী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, রাজ্যে নিযুক্ত এআইসিসি পর্যবেক্ষক শাকিল আহমেদ, সাংসদ দীপা দাশমুন্সি, মৌসম বেনজির নূর, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান প্রমুখ। ঘড়িমোড়ের সভা সেরে অধীরবাবুরা যান আদিসপ্তগ্রামে। সেখানে ছেলেকে খুনের ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে অনশন করছিলেন অভিজিতের মা লক্ষ্মীরানি। ফলের রস খাইয়ে তাঁর অনশন ভাঙান অধীর। দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন জোরদার করার আশ্বাস দেন। পরে যান কামদেবপুর গ্রামে। সেখানেই বাড়ি ধর্ষিতা কিশোরীর। পোলবায় দিল্লি রোড লাগোয়া একের পর এক গজিয়ে ওঠা পানশালার জন্য রাজ্য সরকারের নীতিকেই দায়ী করেন অধীরবাবু। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আয় বাড়ানোর জন্য অমিত মিত্রকে ঢালাও বারের লাইসেন্স দিতে বলছেন। আর বারে পান করে মহিলাদের উপরে ঝঁপিয়ে পড়ছে শ্বাপদরা। এ রাজ্যে এর চেয়ে ভাল কী হবে?”

adhir chowdhuri adisaptagram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy