এই চাল ভেঙেই বিপত্তি। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
থানার চাল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে, অনেক আগে থেকেই এই আশঙ্কা ছিল পুলিশ কর্মীদের একাংশের মধ্যে। সেই চাল ভেঙেই তার নীচে চাপা পড়ে জখম হলেন দুই পুলিশ কর্মী এবং এক পঞ্চায়েত প্রধান। বুধবার রাতের এই ঘটনায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাট জখম সাব ইনস্পেক্টর রবীন্দ্রনাথ রায়, এএসআই আয়ুব আলি সর্দার ও রবীন্দ্র পঞ্চায়েতের প্রধান জামমেদ হক মোল্লাকে বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিত্সার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মাথায়-বুকে-কাঁধে চোট আছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই থানাটি ২০০৮ সালে ৩ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন তত্কালীন জেলা পুলিশ সুপার অজয় রানাডে। তবে থানার কোনও নিজস্ব ভবন এখনও তৈরি হয়নি। কাজ চলে ঢোলাহাট বাজারের পাশে মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাড়ার একটি দোতলা বাড়িতে। বতর্মানে থানার পুলিশ কর্মী প্রায় ৫০ জন। থানা এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ।
নামেই দোতলা থানা ভবন। একতলায় ১০ বাই ২০ ফুটের একটি ঘরে বসেন ওসি। পাশেই বারান্দা ঘিরে তৈরি হয়েছে লক আপ, মাল খানা ও পুলিশ কর্মীদের বসার জায়গা। আর ওই স্বল্প পরিসর ঘরের মধ্যে গাদাগাদি ভাবে কাটাতে হয় পুলিশ কর্মীদের। নানান অভাব অভিযোগ নিয়ে যাঁরা আসেন, তাঁদেরও হাঁসফাঁস দশা। ছাদের নীচে ফাটল ধরেছে। অপরিসর সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয় দোতলায়। এক জনের বেশি দু’জন পাশাপাশি ওঠা যায় না। বৃহস্পতিবার সকালে থানায় গিয়ে দেখা গেল, গত রাতের বৃষ্টির জল ধাপে ধাপে জমে রয়েছে। একটু অসাবধানে উঠতে গেলেই বিপদ অনিবার্য। সিঁড়ি ধাপে এখনও প্লাস্টার পড়েনি বলে দেখা গেল।
উপর তলায় অ্যালবেসটসের ছাউনি দেওয়া আই ও ( তদন্তকারী অফিসারের) বসার ঘর ও কর্মীদের থাকার জায়গা। কাগজপত্র রাখার মতো ভাল আলমারি নেই। টেবিলের উপরে এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে দরকারি কাগজপত্র। ছাদের উপরে পাশেই অ্যাসবেসটসের ছাউনি দিয়ে তৈরি হয়েছে পুলিশের থাকার আরও একটি ঘর। ওই ঘরে ৮ জন পুলিশকর্মীর শোওয়ার জন্য ছোট ছোট খাট পাতা। ঘুপচি ঘরের মধ্যে চলাফেরা করাই দায়। তবু তারই মধ্যে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে হয় সকলকে। রাতে বৃষ্টি হলে জল পড়ে ঘরে। এ দিনও গিয়ে দেখা গেল সেই দৃশ্য। জল কিছু কিছু জমে মেজেতে। ঘরের চাল ও দেওয়ালের অবস্থাও ভাল নয়। সারা ঘরে চাপা গন্ধ।
বুধবার রাত ১১টা নাগাদ দোতলার ঘরে রবীন্দ্রনাথ রায়, আয়ুব আলি সর্দার এবং জামমেহ হক মোল্লা বসেছিলেন। সে সময়ে বৃষ্টি পড়ছিল। সঙ্গে দমকা হাওয়ার দাপট। আচমকা ঘরের অ্যাসবেসটসের চাল ও প্লাইউডের সিলিং হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। পাশের ঘর থেকে সহকর্মীরা এসে উদ্ধার করেন সকলকে। চিকিত্সকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চাল ভেঙে পড়ায় ঘরের মধ্যে রাখা দরকারি কাগজপত্র বৃষ্টির জলে ভিজে-লেপ্টে একসা। এ দিন থানায় গিয়ে দেখা গেল, থানার সামনে বেঞ্চ পেতে সে সব শুকোতে দেওয়া হয়েছে।
এমন বিপজ্জনক ভবনে কাজ চলছে বছরের পর বছর ধরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যাঁরা থানায় নিয়মিত যাতাযাত করেন, তাঁদের বক্তব্য, এই ভবনটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছে। পুলিশের কাছে কোনও দরকারে দল বেঁধে গেলে বসার জায়গাটুকুও পাওয়া যায় না। মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া যাঁদের কাজ, তাঁদেরই জীবনের নিরাপত্তা নেই। অস্বাস্থ্যকর, অব্যবস্থার মধ্যে রাত-দিন কাটাতে হয়। তবে এ সব নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ কোনও পুলিশ কর্মী। হাবে-ভাবে অবশ্য কেউ কেউ বুঝিয়ে দিলেন হতাশার কথা। থানার ওসি জগদীশ দাস নাম নিজেও কোনও কথা বলতে চাননি।
এ দিন সকালে পুলিশ কর্মীরাই নতুন ভবন খোঁজার তোড়জোড় করেছিলেন। কিন্তু মাঝপথে রণে ভঙ্গ দিতে হয়। কেন, তা নিয়েও মুখ খুললেন না কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’এক জন জানালেন, উপর মহলের সায় নেই।
এ দিন ভবনের অবস্থা দেখতে এসেছিলেন জেলা পুলিশ কর্তারা। সমস্যা খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেন তাঁরা।
এ দিকে, থানা অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হচ্ছে, রটে যেতেই সকালে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করে থানার সামনে। তাঁরা দাবি তোলেন, এই ভবন থেকে থানা সরানো যাবে না। ভবন সরছে না জেনে তখনকার মতো ক্ষান্ত দেন সকলে। ফলে আপাতত বেহাল ভবনে থেকেই ডিউটি করতে বাধ্য পুলিশ কর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy