Advertisement
০৬ মে ২০২৪

থমকে মন্দির সংস্কারের কাজ, ক্ষোভ মেল্ল্যকের বাসিন্দাদের

ভেঙে পড়েছে ছাদ। খসে পড়ছে পলেস্তারা। গজিয়ে উঠেছে আগাছা। প্রায় ধূলিসাৎ হতে বসা বাগনানের মেল্ল্যক গ্রামের প্রাচীন গোপাল মন্দিরটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি গ্রামবাসীদের বহু দিনের। ছ’বছর আগে সেই কাজ শুরুও করেছিল রাজ্যের পুরাতত্ত্ব দফতর।

শেষ হয়নি কাজ। ক্রমশ জীর্ণ হচ্ছে মন্দির। —নিজস্ব চিত্র।

শেষ হয়নি কাজ। ক্রমশ জীর্ণ হচ্ছে মন্দির। —নিজস্ব চিত্র।

রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ০১:২৯
Share: Save:

ভেঙে পড়েছে ছাদ। খসে পড়ছে পলেস্তারা। গজিয়ে উঠেছে আগাছা। প্রায় ধূলিসাৎ হতে বসা বাগনানের মেল্ল্যক গ্রামের প্রাচীন গোপাল মন্দিরটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি গ্রামবাসীদের বহু দিনের। ছ’বছর আগে সেই কাজ শুরুও করেছিল রাজ্যের পুরাতত্ত্ব দফতর। কিন্তু দু’বছর পরেই সংস্কার কাজ থমকে যায়। সংস্কারের জন্য মন্দির ঘিরে রাখা বাঁশের কাঠামোই এখন ভেঙে পড়ার জোগাড়। প্রিয় মন্দিরটির এই হাল দেখে পুরাতত্ত্ব দফতরের বিরুদ্ধেই উদাসীনতার অভিযোগ তুলছেন গ্রামবাসীরা।

রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের তালিকায় হাওড়া জেলার পুরাকীর্তির নিদর্শনগুলির মধ্যে অন্যতম ৫৫ ফুট উঁচু ওই গোপাল মন্দির। এক সময়ে মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার কাজ ছিল। এখন তা প্রায় চোখেই পড়ে না। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে চাঁদা তুলে টুকটাক সংস্কারের কাজ করাচ্ছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় কয়েক বছর আগে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে মন্দিরটি সংস্কারের জন্য পুরাতত্ত্ব দফতরে লিখিত আবেদন জানানো হয়। সেই মতো পুরাতত্ত্ব দফতর সংস্কারের জন্য ১২ লক্ষ টাকা মঞ্জুরও করে। ২০০৮ সালে কাজ শুরু হলেও দু’বছর পরেই তা থেমে যায়। মন্দির কমিটির তরফ থেকে বারবার পুরাতত্ত্ব দফতরে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ। ওই কমিটির সদস্য সরল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ভেবেছিলাম মন্দিরটি সংস্কার হয়ে গেলে মন্দিরে জাঁকজমক করে আবার পুজো শুরু করব। মন্দির ঘিরে আবার আগের মতো নানা উৎসবও হবে। কিন্তু সে সবই স্বপ্ন থেকে গেল। সংস্কার তো হলই না, সরকারের মঞ্জুর হওয়া ১২ লক্ষ টাকাই জলে গেল। উল্টে মন্দিরটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।”

ওই কমিটির তরফে জানা যায়, ১৫৪৯ খ্রিস্টাব্দে মেল্ল্যকের জমিদার মুকুন্দপ্রসাদ রায়চৌধুরী ওই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন নিত্যপুজো ছাড়াও আড়ম্বরের সঙ্গে দোল উৎসব, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী বা রাস উৎসব হত। সেই উপলক্ষে যাত্রা, থিয়েটার, পুতুল নাচ, তরজা বা কীর্তনের আসর বসত। বিশাল মেলা নাগরদোলা, মনোহারি জিনিস, রকমারি খেলনা এবং খাবারের দোকানে জমজমাট হয়ে উঠত। বর্তমানে সে সব প্রায় হারিয়েই গিয়েছে।

উৎসবের দিনগুলিতে ভগ্ন মন্দিরের পাশে একটি ছোট মণ্ডপে কোনও মতে পুজো হয়। মেলাও আকার-প্রকারে ছোট হয়ে এসেছে। বছরের অন্য সময় মন্দিরের রাধাকৃষ্ণের নিত্যপুজো হয় স্থানীয় বাসিন্দা অশোক চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ১২ লক্ষ টাকা একেবারে জলে গিয়েছে। সংস্কারের কাজ তেমন হয়নি বললেই চলে।

পুরাতত্ত্ব দফতরের তরফে মন্দির সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার সমর মুখোপাধ্যায় বলেন, “মন্দিরটির যে এত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায়নি। ১২ লক্ষ টাকায় মাত্র ২০ শতাংশ সংস্কারের কাজ হয়েছে। বাকি কাজ করতে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা লাগবে। টাকার অভাবেই কাজ করা যাচ্ছে না।” রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের অধিকর্তা গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, “মেল্ল্যকের গোপাল মন্দিরটি তো আর ওই ভাবে ফেলে রেখে দেওয়া যায় না। সংস্কারের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ramaprasad gangopadhyay bagnan gopal temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE