Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ধর্ষণে দণ্ডিত ওসির জামিনের আর্জি খারিজ

রক্ষকের ভূমিকায় থেকেও তিনি ধর্ষক, প্রমাণ পেয়ে তাঁকে সাজা দিয়েছে নিম্ন আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে জামিনের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। তিনি যে-সে লোক নন, এক জন পুলিশ অফিসার। তাঁর সাজা বহাল রেখে বিচারপতি তপেন সেন ও বিচারপতি রণজিৎ বাগের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, এক জন ওসি-র কাছে একটি মেয়ে যদি সুরক্ষা না-পায়, তা হলে সে কোথায় যাবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৮:৪৯
Share: Save:

রক্ষকের ভূমিকায় থেকেও তিনি ধর্ষক, প্রমাণ পেয়ে তাঁকে সাজা দিয়েছে নিম্ন আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে জামিনের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। তিনি যে-সে লোক নন, এক জন পুলিশ অফিসার। তাঁর সাজা বহাল রেখে বিচারপতি তপেন সেন ও বিচারপতি রণজিৎ বাগের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, এক জন ওসি-র কাছে একটি মেয়ে যদি সুরক্ষা না-পায়, তা হলে সে কোথায় যাবে?

নাবালিকা মেয়ের খোঁজে ২০০৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা গিয়েছিলেন জয়নগর থানায়। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর ১৬ বছরের মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে। যার সঙ্গে পালিয়েছে, তার নাম অশোক বৈদ্য। পরের দিনই মেয়েটিকে উদ্ধার করে দু’জনকেই থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। থানায় ডেকে আনা হয় মেয়ের বাবাকেও। মেয়েটির সিঁথিতে ছিল সিঁদুর, হাতে লোহা ও শাঁখা। ছেলে ও মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেছে। পুলিশ আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেলেটির কাছ থেকে চার হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। মেয়ের বাবার কাছ থেকে নেয় এক হাজার টাকা।

সরকারি আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল জানান, থানার ওসি স্বরূপপ্রকাশ ধাড়া তার পরে মেয়ে আর তার বাবাকে নিজের কোয়ার্টারে নিয়ে যান। সেখানে নিজেই মেয়েটির সিঁদুর মুছে, শাঁখা ভেঙে দিয়ে বলেন, ‘এ-সব ভুল কেউ করে? বাবার সঙ্গে থাকো। ভাল থাকো।’ মেয়েটিকে এক জোড়া নতুন জুতোও উপহার দেন ওসি। তার পরে বাবা ও মেয়েকে মিষ্টি খাইয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। তার আগে মেয়ের বাবাকে ওসি বলেন, ‘কাল থানায় একটা ফোন করবেন।’

ওসি-র ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে যান বাবা। মেয়েকে বলেন, সব থানার ওসি যদি এমন হতেন, তা হলে মানুষের সুরক্ষার কোনও অভাব হতো না। কল্লোলবাবু জানান, মেয়েটির বাবা পরের দিন থানায় ফোন করেন। মেয়েকে নিয়ে বাবাকে তাঁর কোয়ার্টারে যেতে বলেন ওসি। সে-দিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মেয়েকে নিয়ে ওসি-র কোয়ার্টারে পৌঁছে যান বাবা। দু’-একটি কথার পরেই ওসি বাবাকে বলেন, তিনি যেন থানায় গিয়ে কিছু কাগজপত্রে সই করে আসেন। দু’বার না-ভেবে ওসি-র কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে যান বাবা। আর তার পরেই মেয়েটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন ওই ওসি। তার পরে মেয়েটিকে হুমকি দেন, এ কথা কাউকে বললে তার প্রেমিক অশোককে খুন করা হবে।

প্রায় তিন মাস আতঙ্কে কাটায় মেয়েটি। তার পরে ওসি-র বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করা হয়। মেয়েটি বিচারকের সামনে জবানবন্দিও দেয়। দীর্ঘদিন সেই মামলা চলার পরে আলিপুর আদালত ২০১১ সালের মে মাসে অভিযুক্তকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছেন ওসি। তার শুনানি এখনও শুরু হয়নি।

এই অবস্থায় জামিনের আবেদন জানিয়ে ওসি এ দিন হাইকোটের্র্ বলেন, কারাদণ্ডের আদেশ খারিজ করে দেওয়া হোক। তিনি জেল খাটছেন। আপাতত তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হোক। ওসি-র বক্তব্য, নিম্ন আদালত যে-রায় দিয়েছে, তাতে অনেক অসঙ্গতি আছে। সেই জন্যই তিনি আপিল মামলা করেছেন।

শুনানিতে সরকারি আইনজীবী বলেন, মেয়েটি ও তার বাবা থানার ওসি-কে অভিভাবক হিসেবেই দেখেছিলেন। কিন্তু যা ঘটেছে, তাতে গোটা পুলিশমহল সম্পর্কে মেয়েদের মনে একটা ভুল ধারণার সৃষ্টি হবে। তাই কোনও মতেই ওই ওসি-র শাস্তি খারিজ বা জামিনের প্রশ্ন ওঠে না।

ওসি-র জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেনি হাইকোর্ট। তাঁর শাস্তিও খারিজ করেননি দুই বিচারপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

joynagar swaroop dhara oc rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE