সন্ধ্যার পরে এমনই ভুতুড়ে চেহারায় থাকে কমিউনিটি হল। —নিজস্ব চিত্র।
রাত ন’টা। প্রধান রাস্তার পাশেই সরু গলি দিয়ে বেরিয়ে আসছিল এক দল যুবক। প্রত্যেকেই নেশাগস্ত। ঠিক করে হাঁটতেও পারছে না। নিজেদের মধ্যে নানা বিশেষণ যোগ করে কথা বলার পাশাপাশি রাস্তা দিয়ে যাওয়া মেয়েদেরও উদ্দেশেও কটূক্তি তাদের মুখে। সন্দেহ হওয়ায় গলি দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর প্রায়ান্ধকার একটা জায়গা। চারপাশ জঞ্জালে ভর্তি। কয়েকটা দলে ভাগ হয়ে চলছে মদের আড্ডা। আসলে জায়গাটা বাউড়িয়া কমিউনিটি হল।
উলুবেড়িয়া পুরসভা সূত্রে জানা গেল, ন’য়ের দশকে বাউড়িয়া পঞ্চাননতলার ঠিক আগে গার্লস হাইস্কুল থেকে কিছু দূরে জমি কিনে কমিউনিটি হল ও বাজার তৈরি করে পুরসভা। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পুরসভার নানা বিভাগের কাজ পরিচালনার জন্য কয়েকশো বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছিল কমিউনিটি হলটি। সেইসঙ্গে ঠিক হয়, কোনও অনুষ্ঠান, সভার প্রয়োজনে বাউড়িয়ার মানুষদের আর উলুবেড়িয়ায় ছুটতে হবে না। এই কমিউনিটি হল তাঁরাও ব্যবহার করতে পারবেন। মিলবে সব রকম পরিষেবা। পাশাপাশি স্টেডিয়াম, খেলার মাঠ হওয়ার পরিকল্পনাও ছিল বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
কিন্তু পুরসভার সেই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয়নি। উল্টে সমাজবিরোধীদের আড্ডার জায়গায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সন্ধ্যা নামলেই কমিউনিটি হল ও তার চারপাশ মদ, গাঁজা ও জুয়ার ঠেকের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়।
প্রধান রাস্তা থেকে ঢালাই করা রাস্তা ঢুকে গিয়েছে ভিতরে। দু’পাশে জঞ্জালের স্তুপ। কয়েক মিটার এগোলেই দোতলা কমিউনিটি হল। কোথাও পলেস্তারা নেই। কোথাও খসে পড়ছে চাঙর। আরও কিছুটা এগোলেই পুরসভার একটি অফিস। জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া থেকে পোলিও খাওয়ানোর কাজ হয়। অফিসের দায়িত্বে থাকা শম্ভুনাথ দাস জানান, বিকাল চারটে পর্যন্ত অফিস খোলা থাকে। অফিসের ভিতরে আলোর ব্যবস্থা থাকলেও বাইরে কোনও আলো নেই। ফলে সন্ধ্যার পরে চারপাশটা অন্ধকার হয়ে যায়। অফিসের পাশেই বাজার। যদিও নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি। পুরসভা সূত্রের খবর, বাউড়িয়ার সবচেয়ে বড় বাজার হওয়ার কথা ছিল এটির। যে জন্য প্রায় ৩৫টি দোকান ঘর তৈরি করা হয়। ২০টি দোকান বিক্রিও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাজার আর চালু হয়নি। স্থানীয় এক মিষ্টির দোকানের মালিক দীনবন্ধু বাগ বলেন, “লটারির মাধ্যমে আমিও ওখানে একটি দোকান কিনেছিলাম। কিন্তু সেখানে আলো নেই। ব্যবসার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় আমরা দোকান চালাতে পারিনি। বর্তমান পুরবোর্ডকেও সমস্যার কথা জানিয়েছি। উপযুক্ত পরিবেশ হলে আমরা দোকান চালাতে রাজি।”
কিন্তু কেন চালু করা গেল না বাজার? কমিউনিটি হলেরই বা এমন অবস্থা কেন?
উলুবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবদাস ঘোষ বলেন, “বাম আমলে এই কমিউনিটি হল ও বাজার তৈরি হয়েছিল। তখন থেকেই এই অবস্থা। আমরা পুরবোর্ডে ক্ষমতায় আসার পরে কমিউনিটি হল ও বাজার কী ভাবে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা চলছে।”
জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “ওঁদের ভাবতেই পাঁচ বছর লেগে গেল? বাম আমলে আর্থিক সঙ্কটেও জমি কিনে কিছুটা কাজ হয়েছিল। কিন্তু এরা কিছুই করেননি। ওঁরা ভাবতে থাকুন। বামফ্রন্ট এই কাজ চালু করেছিল, পরের ভোটে বামফ্রন্ট জিতেই বাকি কাজ শেষ করবে।”
পুরসভার বিদ্যুৎ দফতরের চেয়ারম্যান পারিষদ সুরজিৎ দাস বলেন, “ওখানে আলো লাগানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।”
তবে কমিউনিটি হল ও বাজারে অসামাজিক কার্যকলাপ নিয়ে স্থানীয় মানুষের যে অভিযোগ রয়েছে, তা নিয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুখেন্দু হীরা বলেন, “এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy