Advertisement
E-Paper

পাশে আছি, মহিলাদের ভরসা দিল গ্রাম

দরজা ঠেলে ঢুকেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন দুই মহিলা। চোখেমুখে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। একটু ধাতস্থ হওয়ার পরে বসলেন বাড়ির দাওয়ায়। নিয়মিত যাতায়াত হয় না বাড়িতে। সাফসুতরো দরকার। এদ্দিন বাদে ফিরে ঘরের বউয়েরা সে দিকেই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন। কিন্তু চোখের জল বাঁধ মানতে চাইছিল কই!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২৪

দরজা ঠেলে ঢুকেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন দুই মহিলা। চোখেমুখে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। একটু ধাতস্থ হওয়ার পরে বসলেন বাড়ির দাওয়ায়। নিয়মিত যাতায়াত হয় না বাড়িতে। সাফসুতরো দরকার। এদ্দিন বাদে ফিরে ঘরের বউয়েরা সে দিকেই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন। কিন্তু চোখের জল বাঁধ মানতে চাইছিল কই!

আর কান্না থামবেই বা কী করে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি আমতার মুক্তিরচক গ্রামের এই বাড়িতেই দুষ্কৃতীরা ঢুকে রাতের অন্ধকারে বাড়িতে ঢুকে এই দুই মহিলাকে গণধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ। মাস খানেক উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাঁরা। তারপর থেকে আর ভিটেয় পা রাখেননি আতঙ্কে। ফিরলেন এত দিনে। তবু ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা ভেবে এখনও শিউরে ওঠেন। তাই এ দিনও বলতে চাইলেন না, এত দিন কোথায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।

সোমবার বেলা আড়াইটে নাগাদ কড়া পুলিশ প্রহরায় দুই মহিলা বাড়ি আসেন। আধ ঘণ্টা বাড়িতে কাটিয়ে ওই বধূ ও তাঁর জ্যাঠশাশুড়ি চলে গেলেন কিছুটা দূরে তাঁদের শ্বশুরের ভিটেয়। সেখানে গিয়ে ঘনিষ্ঠদের দেখতে পেয়ে ফের আর একপ্রস্থ কান্নাকাটি চলল। প্রচুর গ্রামবাসীরাও চলে এলেন। গ্রামের মহিলারা দু’জনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, “এই ঘটনা পুরো গ্রামের লজ্জা।” পাশে আছি আমরা, আশ্বাস মিলল গ্রামের মহিলাদের তরফে।

গণধর্ষণের ঘটনার পরে বরুণ মাকাল নামে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-সহ ৮ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে তদন্ত চলাকালীন আরও ছ’জনের নামে ওই দুই নির্যাতিতা মহিলা অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতে রঞ্জিত মণ্ডল নামে স্থানীয় আরও এক তৃণমূল নেতাকে পুলিশ ধরে। কিন্তু বাকিদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। যাদের ধরা যায়নি তারা ওই দুই নির্যাতিতাকে ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এক নির্যাতিতার শাশুড়ি এই মর্মে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত পুলিশকে নির্দেশ দেন, ওই দুই মহিলার বাড়িতে যেন উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।

এ দিন সকালে দুই নির্যাতিতাকে নিয়ে পুলিশ আগে যায় মুক্তিরচক গ্রামেই মহিলাদের শ্বশুরের ভিটেয়। সিপিএম পরিবারের দুই মহিলার সঙ্গে ছিলেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কয়েক জন সদস্য এবং ওই পরিবারের আইনজীবীরা। খানিক দূরেই দুই মহিলার বাড়ি, যেখানে ঘটেছিল গণধষর্ণের ঘটনা। বাড়িটি এখনও অগোছালো অবস্থায় পড়ে। ঘটনার দিন দুষ্কৃতী হানায় জিনিসপত্র ভাঙচুর হয়েছিল। সে সব ওই অবস্থাতেই পড়ে। মহিলারা জানান, গ্রামে ফিরলেও ওই বাড়িতে রাত কাটানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই থাকবেন শ্বশুরের ভিটেতেই। পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। এ ব্যাপারে তাঁরা সন্তুষ্ট বলে মন্তব্য করেন নির্যাতিতা এক বধূ। বলেন, “এত দিন ভয়ে আসতে পারছিলাম না। এখন পুলিশ বলেছে নিরাপত্তা থাকবে। সেই আশাতেই ফিরেছি।”

এ দিন আমতা থানা থেকে দুই মহিলাকে কিছু ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য উলুবেড়িয়া হাসপাতালেও নিয়ে যায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তাঁদের রক্তের নমুনা সংগ্রহের কথা ছিল। এর আগে পুলিশ তাঁদের চিঠি পাঠিয়ে এ জন্য ডাকলেও হাজিরা দেননি দুই মহিলা। তাঁদের পরিবারের তরফে জানানো হয়, দুষ্কৃতীরা সকলে এখনও ধরা পড়েনি। গ্রামে ফিরতে পারছেন না তাঁরা। এক মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরেও পুলিশ কেন সে সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেনি, সে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। এক মহিলার স্বামী জানিয়ে দেন, আইনজীবীর পরামর্শেই তাঁরা পরীক্ষা করাতে হাজিরা দেননি। এ দিন অবশ্য সে সব নিয়ে আর কোনও সমস্যা হয়নি। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, আইনজীবীদের পরামর্শ মতোই তাঁরা পরীক্ষা করাতে রাজি হয়েছেন।

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ সব রকম পদক্ষেপ করছে। বেশিরভাগ অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রামে থাকাকালীন যাতে ওই দুই মহিলা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা পান, সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

শ্লীলতাহানি, ধৃত যুবক। কলেজ পড়ুয়া এক তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে রিষড়া স্টেশনের কাছে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম দিলীপ দে। সে অটো চালায়। তরুণী জানিয়েছেন, রাত দেড়টা নাগাদ তিনি ঘুমোচ্ছিলেন। সে সময়ে জানলার কাচ ভেঙে ওই যুবক হাত ঢুকিয়ে তাঁর শ্লীলতাহানি করে। টানাহ্যাঁচড়ায় পোশাক ছিঁড়ে যায় তরুণীর। তাঁর চিৎকারে পাড়-পড়শির ঘুম ভেঙে যায়। যুবকটি পালায়। পরে মেয়েটির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

amta gangrape
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy