Advertisement
১৭ মে ২০২৪
ঢোলাহাটে অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে

বিজেপি সমর্থকদের ঘর পুড়ল, মারধর ৪ মহিলাকে

সভা ফেরত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা তিন বিজেপি সমর্থকের চালা ঘরে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। বাধা দিতে গেলে চার মহিলাকে মারধর করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে ঢোলাহাট থানার নেতাজি পঞ্চায়েতের কেঁদো রামচন্দ্রনগর গ্রামে। অভিযোগ জানানো হয়েছে থানায়। পুলিশ আসে। জখম মহিলাদের ভর্তি করা হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে।

গ্রামে বিজেপির প্রতিনিধি দল।

গ্রামে বিজেপির প্রতিনিধি দল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢোলাহাট শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

সভা ফেরত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা তিন বিজেপি সমর্থকের চালা ঘরে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। বাধা দিতে গেলে চার মহিলাকে মারধর করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে ঢোলাহাট থানার নেতাজি পঞ্চায়েতের কেঁদো রামচন্দ্রনগর গ্রামে। অভিযোগ জানানো হয়েছে থানায়। পুলিশ আসে। জখম মহিলাদের ভর্তি করা হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে।

শুক্রবার এলাকায় ঘুরে গিয়েছে সিপিএম এবং বিজেপির দু’টি পৃথক প্রতিনিধি দল। যদিও ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ মানেনি তৃণমূল। দলের নেতাদের দাবি, জমিজমা নিয়ে গোলমালের জেরেই এই কাণ্ড। রাজনীতির সঙ্গে যার কোনও সম্পর্ক নেই। সরকারি জমি দখল করা নিয়ে ওই পরিবারগুলির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবারই পুলিশের কাছে পাল্টা অভিযোগ করেছেন গ্রামের কিছু মানুষ। দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। জমি-সংক্রান্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান কাকদ্বীপ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রামের হাসপাতাল মোড়ের কাছে বৃহস্পতিবার বিকেলে সভা ছিল শাসক দলের। বেলা সাড়ে ৪টে নাগাদ সভা শেষ হয়। অভিযোগ, সেখান থেকে বেরিয়ে শ’দেড়েক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক হাজির হয় রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সংলগ্ন এলাকায়। হাসপাতাল-লাগোয়া জমিতেই মাস খানেক হল খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর তৈরি করেছিলেন সামসুল লস্কর, ইজরাফিল লস্কর, ইসমাইল লস্কররা। তাঁরা কেউই সে সময়ে ছিলেন না। বাড়ির মহিলা সদস্য রৌশেনারা বিবি, রেশমা বিবি, রেশমিনা বিবি, হামেশা বিবিদের বক্তব্য, এক সঙ্গে বেশ কিছু লোক এসে হাজির হয় চালাঘরের সামনে। ঘর তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি। সে সব কাজেই ব্যস্ত ছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন আচমকাই ঘর ভাঙতে শুরু করে। মহিলারা বাধা দিলে মারধর করা হয় তাঁদের। পরে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

জখম চার মহিলা বলেন, “ওদের বলেছিলাম, সবে মাত্র ঘর তৈরি করেছি। ভাঙচুর করো না। অনেক অনুরোধ করি। কিন্তু ওরা কথা কানেই তোলেনি। খালি বলছিল, বিজেপিকে কেন ভোট দিয়েছিস তোরা।”

শুক্রবার বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, রবিন চট্টোপাধ্যায়, সহ সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদক রঞ্জিৎ ভুঁইঞারা আসেন গ্রামে। রবিনবাবু বলেন, “এই পরিবারগুলি আগে সিপিএমের সঙ্গে ছিল। কিন্তু ভোটের আগে আমাদের দলে আসে। প্রচারের কাজও করেছে। সেই রাগেই হামলা চালিয়েছে তৃণমূল।” পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরতে না পারলে তাঁরা ঘটনার কথা নবান্নের কর্তাদের কানেও তুলবেন বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেতারা।

অতীতে বিজেপির কোনও প্রভাবই ছিল না এই এলাকায়। কিন্তু লোকসভা ভোটের কিছু আগে থেকে গ্রামে রাজনৈতিক জমি খুঁজে পাচ্ছিল তারা। গ্রামের ১৬৫ নম্বর বুথে এ বার ১৫টি ভোটও পেয়েছে বিজেপি। যদিও তৃণমূলের কাকদ্বীপের বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার কথায়, “যা ঘটেছে, তার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। আমাদের দলের কেউ জড়িত নয়।” মন্টুরামবাবুর দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি জমি দখল করে ওই পরিবারগুলি ঘর তৈরি করছিল। যা গ্রামের কিছু মানুষ ভাল চোখে দেখেনি। গণ্ডগোল এর জেরে।

বস্তুত, ওই জমিতে ঘর করা নিয়ে গ্রামে কিছুটা উত্তেজনা আগে থেকে ছিল। সামসুল, ইজরাফিলদের বক্তব্য, প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ধরে তাঁরা ওই জমিতে চাষবাস করছেন। জমি তাঁদেরই। সেখানেই ঘর বানানো হয়েছিল। তবে গ্রামের কিছু লোক যে তা ভাল চোখে দেখেননি, সে কথাও মেনে নেন ওই পরিবারের সদস্যেরা।


চিকিৎসাধীন মহিলারা।

সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী, দলের কাকদ্বীপ শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক মৃত্তেন্দু ভুঁইঞা সকালে এসেছিলেন এলাকায়। সুজনবাবু বলেন, “গরিব মানুষের উপরে অত্যাচার হচ্ছে। তাঁরা যে দলেরই হোন না কেন, তৃণমূলের এই সন্ত্রাস মেনে নেওয়া যায় না। সে জন্যই এসেছি।”

লোকসভা ভোটের পর থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণের দিন উস্তিতে বিজেপির বিজয় মিছিলে তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায় বলেও অভিযোগ।

শুক্রবার ছবি দু’টি তুলেছেন দিলীপ নস্কর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

set fire on bjp supporters' house dholahat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE