Advertisement
E-Paper

ভোট-প্রচারের কোপে বাদ গিয়েছে সকাল ৬টায় নিজের হাতে চা তৈরির অভ্যাস

তিনি কেউ নন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সব। নির্বাচনে জিতলে তার কৃতিত্বও মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর কোনও মূল্য নেই। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি বীণাপানি দেবীর (বড়মা) বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে এ ভাবেই নিজেকে জনতার সামনে তুলে ধরছেন।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০৫
এক ফুলবিক্রেতার অভিযোগ শুনছেন তৃণমূল প্রার্থী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

এক ফুলবিক্রেতার অভিযোগ শুনছেন তৃণমূল প্রার্থী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

তিনি কেউ নন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সব। নির্বাচনে জিতলে তার কৃতিত্বও মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর কোনও মূল্য নেই।

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি বীণাপানি দেবীর (বড়মা) বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে এ ভাবেই নিজেকে জনতার সামনে তুলে ধরছেন। যে সব এলাকা দিয়ে প্রচার মিছিল যাচ্ছে সব জায়গাতেই জনতার উদ্দেশে প্রার্থীর বার্তা, “একা আমি নই, প্রার্থী আপনারা সকলেই। আমি প্রতীক মাত্র। ভোটে জয়ী হলে সে জয় হবে তৃণমূলের। জয় হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রার্থীর কোনও দাম নেই।”

বিরোধীরা তাঁকে ‘অরাজনৈতিক’ লোক বলে তকমা লাগিয়ে দিয়েছেন। এমনকী এও বলে বেড়াচ্ছেন ঠাকুর পরিবারের বড় ছেলে হওয়ার সুবাদেই তাঁর প্রার্থীপদ লাভ। শুধু বিরোধীদের কটাক্ষই নয়, তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, “ওঁর তো কোনও রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডই নেই।” যদিও সে কথা একেবারেই অস্বীকার করছেন না কপিলকৃষ্ণ। বৃহস্পতিবার বাগদার হেলেঞ্চায় এক জনসভায় তৃণমূল প্রার্থী বলেন, “কোনও প্রার্থী খেলোয়াড়, কেউ বা ফিল্মস্টার, কেউ অর্থনীতিবিদ। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড আমি মতুয়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন বনগাঁয় মতুয়াদের মধ্যে থেকে কাউকে প্রার্থী করতে। বড়মা তাঁর কাছে আমার নাম প্রস্তাব করায় তিনি রাজি হয়ে যান। বড়মার ইচ্ছাতেই প্রার্থী হয়েছি।”

লোকসভা ভোটে এই প্রথম। কিন্তু দেখে যে কারও মনে হতে বাধ্য আগের অভিজ্ঞতা রয়েছে। রোজ সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠেই তৈরি হয়ে নিচ্ছেন। তারপর দলের তরফে ঠিক করে দেওয়া একটানা মিটিং-মিছিল-কর্মিসভা, প্রচার সেরে রাত বারোটায় ঘরে ফেরা। এতদিন রোজ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে নিজের হাতে চা তৈরি করে খাওয়ার অভ্যাস ছিল। প্রার্থী হওয়ার সুবাদে সে অভ্যাস চৌপট। তবে ভোট-ব্যস্ততার মধ্যে অনেক কষ্টে টিকিয়ে রেখেছেন রোজ বাড়ির পুকুরে ৬৫ থেকে ৭০টা ডুব দিয়ে স্নান। বয়স পঁচাত্তর ছুঁয়েছে। ঋজু দেহে মেদ থাবা বসাতে পারেনি। ১৯৭৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এক সময় তাঁকে বামপন্থী তকমা দেওয়া হয়েছিল। যদিও তাঁর দাবি, রাজনীতির সঙ্গে কোনও কালেই তাঁর সম্পর্ক ছিল না। অবসর সময়ে সাইকেল চালাতে ভালবাসেন। যদিও এখন ভোটের প্রচারে গাড়িই একমাত্র বাহন।

রাজ্যের অন্যতম বড় ফুলের বাজার রয়েছে ঠাকুরনগরে। দোকানের সংখ্যা প্রায় হাজারের মতো। এত বড় বাজার হওয়া সত্ত্বেও তার পরিকাঠামো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অভিযোগ জানিয়ে আসছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন সময়ে ভোটের প্রচারে বাজারের উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘুরে গিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। ফুলবাজারে তৃণমূল প্রার্থীকে সামনে পেয়ে সব ক্ষোভ উগরে দিলেন ফুলবিক্রেতা দশরথ বালা। জানালেন, “বাজারের নিকাশি ব্যবস্থা ভাল নয়। বর্ষায় জলে ভরে যায়। ঠাকুরনগরে একটা বেসরকারি হিমঘর থাকলেও সরকারি হিমঘর নেই।” সমস্ত অভিযোগ মন দিয়ে শুনে তৃণমূল প্রার্থীর আশ্বাস, “আপনারা জমির ব্যবস্থা করে দিন। এখানে সরকারি হিমঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।”

ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে বিরোধীদের প্রচার নিয়ে কপিলের মন্তব্য, “সব পরিবারেই ভাইতে ভাইতে সম্পত্তি নিয়ে বেিাধ থাকে। আবার তা মিটেও যায়। মঞ্জুল মন্ত্রী হিসাবে অনেক কাজ করেছে। আমার হয়েও প্রচার করছে। কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই।”

তিনি মতুয়া। কিন্তু নির্বাচনে তাঁকে লড়তে হবে আর এক মতুয়ার বিরুদ্ধে (বিজেপি প্রার্থী কেডি বিশ্বাস)। এতে কি মতুয়া ভোট ভাগ হয়ে যাবে না? প্রশ্নকে পাত্তা না দিয়ে প্রার্থীর সগর্ব ঘোষণা, “দেখবেন, সব মতুয়া ভোট আমিই পাব।’’ নিজের জয় নিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসী কপিল কর্মীদের নিয়ে ফের হাঁটা দিলেন।

simanta maitra bonga
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy