রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোট মেটার পরই রাজনৈতিক অশান্তিতে তেতে উঠল হুগলি এবং হাওড়ার নানা এলাকা। সংঘর্ষ, মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুঠপাট কিছুই বাদ যায়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে। দু’একটি ক্ষেত্রে অভিযুক্ত সিপিএম-ও।
ভোটের একটি পর্ব মেটা এবং অন্য পর্ব শুরুর আগে এই হামলার পিছনে রাজনীতির কারবারিদের কারও পর্যবেক্ষণ হামলাকারীরা মনে করছে, অন্য পক্ষ ভোট ‘করিয়ে নিয়েছে’। সেই হতাশা থেকে হামলা হতে পারে। আবার কেউ কেউ এমনও মনে করছেন, চতুর্থ দফার ভোটের আগে ‘শিক্ষা’ দিতে হামলা হয়েছে।
হাওড়া, হুগলি এবং দুর্গাপুরে ভোট ছিল বুধবার। হুগলির আরামবাগে ভোট চলাকালীন বুথ দখল এবং বাম কর্মী-সমর্থকদের মারধরের একাধিক অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। তার পরে রাত থেকেই শুক্রবার পর্যন্ত মহকুমার বিভিন্ন গ্রামে সিপিএমের প্রায় ৮০ জন কর্মী-সমর্থক জখম হন বলে অভিযোগ। নানা প্রান্তে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর বক্তব্য, “কোথাও হতাশা, কোথাও উল্লাস থেকে হামলা করছে তৃণমূল। আরামবাগের ক্ষেত্রে উল্লাসে ওরা আমাদের মেরেছে।” পক্ষান্তরে, জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘আমরা নয়, হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় সিপিএমই চারিদিকে মারপিট বাধাচ্ছে। যাতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে সরকারকে দোষারোপ করা যায়। দলের ছেলেদের সংযত থাকতে বলেছি।”
শুক্রবার সকালে আরামবাগের মধুরপুর গ্রামের সিপিএম নেতা মান্নান হোসেনের বাড়িতে চড়াও হয়ে মারধর এবং হুমকি দেওয়া হয়। বিকেলে বসন্তপুরের মালিকপাড়ায় দলীয় কর্মী মধুসূদন মালিক এবং কার্তিক মালিককে মারধর এবং তাঁদের স্ত্রীদের হেনস্থা করা হয়েছে। গোঘাটের কুমারগঞ্জের বেলুনদিঘিতে আক্রান্ত হন মসিদবেড়া গ্রামের সিপিএম কর্মী রতন খা।ঁ তাঁর দাবি, ভোটে কারচুপি করা হচ্ছে বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার মাসুল গুনতে হল তাঁকে। হাজিপুর, দিঘরা, মান্দারন, কয়াপাট, বদনগঞ্জ এবং বহড়াশোল গ্রামেও কয়েক জনকে মারধর এবং তাঁদের টাকা, মোবাইল ফোন ছিনতাই করা হয় বলে অভিযোগ। বহড়াশোলের সিপিএম কর্মী শেখ আনিসুরের পা ভেঙেছে মারধরে। বলপাইয়ে সিপিএমের একটি দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর, লুঠপাট হয়েছে। সিপিএমের অভিযোগ, পুড়শুড়ার বিভিন্ন গ্রামে বাড়ি গিয়ে গিয়ে মারধর, হুমকি চলছে। আরামবাগে যে ক’জন তাদের দলের এজেন্ট হয়ে ভোটকেন্দ্রে শেষ পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করেছেন, ভোটপর্ব মিটতেই তাঁদের মারধর করা হয়। খানাকুল-গোঘাটের কয়েকটি এলাকায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপরেও হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল।
শুধু আরামবাগেই নয়, হুগলির গুড়াপের ভাসতারায় বৃহস্পতিবার সকালে সিপিএম সমর্থকদের দু’টি বাড়ি এবং একটি দোকানে রড, টাঙি, বাঁশ নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মহিলাদের টেনে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। ভাঙচুর হয় সিপিএমের ভাসতারা-১ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতেও। অন্য দিকে, বুধবার ভোট মেটার পরে হরিপালের পশ্চিম গোপীনাথপুরে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সিপিএমের লোকজনের সংঘর্ষ বাধে। জখম তিন তৃণমূল সমর্থককে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অশান্তির প্রায় একই ছবি দেখা গিয়েছে হাওড়ার ডোমজুড় এবং সাঁকরাইলে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ডোমজুড়ের দক্ষিণ কলোরার নুনেপাড়া, খালধারপাড়া এবং সাঁকরাইলের কলুপুকুর ধার-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় সিপিএম ও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও বোমাবাজি হয়। একাধিক বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাট হয়। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী, র্যাফ এবং কমব্যট ফোর্স মোতায়েন করা হয়। শুরু হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। শুক্রবার সকালে উত্তর কলোরাতেও সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের ৮-১০টি বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
সিপিএমের অভিযোগ, বুধবার তৃণমূলের হুমকি উপেক্ষা করে ভোট দিতে যাওয়ার অপরাধে ওই হামলা। আতঙ্কে শতাধিক সিপিএম কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। শুক্রবার সকালে ওই এলাকায় যান হাওড়ার সিপিএম প্রার্থী শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়াতেই তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালাচ্ছে।
গোলমালের দায় সিপিএমের ঘাড়ে চাপিয়ে হাওড়া শহর তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়ের দাবি, “ডোমজুড়ে যে সংঘর্ষ হয়েছে, তার পুরো দায় সিপিএমের। তারাই প্রথমে এসে বিনা প্ররোচনায় আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে। তার পরেই সংঘর্ষের বাতাবরণ তৈরি হয়।” পক্ষান্তরে, জেলা সিপিএম সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “যে ভাবে তৃণমূল রিগিং এবং বুথ দখল করে কাজ হাসিল করার কথা ভেবেছিল, সেটা করতে পারেনি আমাদের কর্মীদের প্রতিরোধের ফলে। সেই হতাশা থেকে তারা দলের কর্মীদের মেরেছে, সম্পত্তি নষ্ট করেছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াও সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের দাবিও আমরা কমিশনের কাছে জানিয়েছি।”
অন্য দিকে, ভোটের কাজ সেরে ফেরার পথে দুর্গাপুরে বুধবার সন্ধ্যায় এক মহিলা-সহ সিপিএমের তিন এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। তৃণমূল যদিও এই ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার কথা মানেনি।
আক্রান্ত বিজেপি প্রার্থী, ধৃত ৩
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা
সন্দেশখালির ঝুপখালি গ্রামে ধর্ষিতার বাড়িতে গিয়ে বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ৩ তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে একদল দুষ্কৃতী ঝুপখালি গ্রামে এক ধান ব্যবসায়ীর বাড়িতে লুঠপাট চালিয়ে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করে। পরদিন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী শমীকবাবু ওই গ্রামে যান। সেখানে তাঁকে তৃণমূলের লোকজন হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। কয়েক জন বিজেপি কর্মী এবং একটি আদিবাসী সংগঠনের নেতা-সহ কয়েক জনকেও তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। তৃণমূলের কয়েক জনের নামে এফআইআর দায়ের করে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy