Advertisement
E-Paper

সংস্কারের অভাবে মজা খালে বেহাল নিকাশি

কোথাও কচুরিপানার ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে জল, কোথাও পাড়ের জমি চলে গিয়েছে জবরদখলকারীদের হাতে। এক সময় ডানকুনি থেকে হিন্দমোটর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষিকাজে জলসেচের মূল মাধ্যম ছিল যে মাখলা চাষখাল, কালের নিয়মে তা হয়ে গিয়েছিল নিকাশি-নালা।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০১:৩৪
খাল না ডোবা বোঝা মুশকিল। ছবি: দীপঙ্কর দে।

খাল না ডোবা বোঝা মুশকিল। ছবি: দীপঙ্কর দে।

কোথাও কচুরিপানার ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে জল, কোথাও পাড়ের জমি চলে গিয়েছে জবরদখলকারীদের হাতে।

এক সময় ডানকুনি থেকে হিন্দমোটর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষিকাজে জলসেচের মূল মাধ্যম ছিল যে মাখলা চাষখাল, কালের নিয়মে তা হয়ে গিয়েছিল নিকাশি-নালা। কিন্তু সেই নালাও কার্যত মজে যাওয়ায় ওই বিস্তীর্ণ এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা প্রায় বেহাল। ফি-বর্ষায় নালা উপচে জল ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। নালার দু’পাশের এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, নানা মহলে বহুবার দরবার করা হলেও এখনও নালা সংস্কার করা হয়নি।

উত্তরপাড়া পুরসভার দাবি, খাল সংস্কারের দায়িত্ব তাদের নয়। সেচ দফতর অবশ্য খাল সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু তা কবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।

বালিখাল থেকে শুরু হয়ে হিন্দমোটর, কানাইপুর, বাঁশাই হয়ে ডানকুনির খড়িয়ালে চলে গিয়েছে এই খাল। মাঝে একটি শাখা বেরিয়ে গিয়েছে রঘুনাথপুর পঞ্চায়েতের কালিরচক, বসুপোঁতার দিকে। এক সময় খালের দু’ধারে বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষবাস হত। এলাকার প্রবীণেরা জানাচ্ছেন, এক সময়ে জলে রীতিমতো স্রোত ছিল। স্বচ্ছ জলে অনেকে মাছ ধরতেন। পুঁটি, খলসে, চিংড়ি, পাঁকাল, সরপুঁটি-সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ খেলে বেড়াত খালে। ক্রমে ক্রমে অবশ্য চাষবাস কার্যত উঠে যায়। খালের দু’ধারের জমিতে গড়ে উঠেছে কংক্রিটের জঙ্গল। বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে খাল মজে গিয়েছে। কোথাও কচুরিপানায় ঢেকে গিয়েছে। অনেক জায়গায় জবরদখল হয়ে সংকীর্ণ হয়েছে খালের চেহারা।

কোন্নগর, হিন্দমোটর, উত্তরপাড়ার একাংশ-সহ বিভিন্ন এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নির্ভর করত এই খালের উপর। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এই খালের জলধারণ ক্ষমতা অনেকটাই কমেছে। এর ফলে, ফি-বর্ষায় অনেক জায়গাতেই জল দাঁড়িয়ে যায়। রাস্তাঘাট জলে থইথই করে। চলাচল করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, খালের জল এখন মশা-সহ অন্যান্য পোকা-মাকড়ের খাসতালুক। তার উপর আশপাশের কারখানার বর্জ্য জলে মিশে পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়েছে। কেউ দেখার নেই। উত্তরপাড়ার টিএন মুখার্জি রোডের ধারে খালের একটি লকগেট আছে। অফিসঘর আছে একটি। আগে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মী সেখানে বসতেন। এখন আর কেউ থাকেন না। জায়গাটি ঝোপ-জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে।

বর্তমানে উত্তরপাড়া পুরসভা লকগেটটি রক্ষণাবেক্ষণ করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সেটিও ঠিকমতো দেখভাল করা হয় না। সিপিএমের উত্তরপাড়া জোনাল কমিটির সদস্য তথা মাখলা গণতান্ত্রিক নাগরিক সমিতির সভাপতি রামপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, “দিনের পর দিন চোখের সামনে খালটি নষ্ট হয়ে গেল। চার দশক আগে এক বার সংস্কার হয়েছিল। আর দু’দশক আগে বালতি করে পাঁক তোলা হয়েছিল কিছু জায়গায়। ব্যস, ওই পর্যন্ত। আর কেউ ফিরে তাকায়নি খালের দিকে।” তাঁর সংযোজন, “খাল সংস্কারের জন্য পুরসভায় অনেক চিঠিচাপাটি দিয়েছি। ওরা কিছু করেনি।”

পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল, তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদব অবশ্য সেই অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, “খাল সংস্কারের দায়িত্ব সেচ দফতরের। কিন্তু এলাকার মানুষের সুবিধার্থে পুরসভাই লকগেটটির দিকে নজর রাখে। কিছুদিন আগেই সেখানে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়েছে পুরসভার তরফে।”

খালের দুর্দশার কথা অস্বীকার করেননি জেলা পরিষদের সেচ কর্মাধ্যক্ষ মানস মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, “আগের জমানায় জেলা জুড়ে প্রায় সবক’টি খাল অস্তিত্ব হারিয়েছে। এটিও তার একটি। সেচ দফতর ওই খাল সংস্কারের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করবে। শুধু সংস্কার নয়, ওই খালকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিতে চাই আমরা।”

জেলা সেচ দফতরের আধিকারিক ভাস্বরসূর্য মণ্ডল বলেন, “ওই চাষখালটি ডানকুনি খালের সঙ্গে মিশেছে। ডানকুনি খালের সঙ্গেই এটিও সংস্কার করা হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে।”

sewarage uttarpara prakash pal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy