Advertisement
E-Paper

কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের হেনস্থার শীর্ষে স্কুল-কলেজ

কখনও মানসিক নির্যাতন, বা প্রকাশ্যে অশ্লীল মন্তব্য। ফলে কাজ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে কেউ ছুটি নিয়ে বাড়িতে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, কেউ আবার মাথা হেঁট করে কাজ করে চলেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৭ ০৩:৪০

কখনও মানসিক নির্যাতন, বা প্রকাশ্যে অশ্লীল মন্তব্য। ফলে কাজ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে কেউ ছুটি নিয়ে বাড়িতে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, কেউ আবার মাথা হেঁট করে কাজ করে চলেছেন। কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের হেনস্থার অভিযোগ নতুন না হলেও সম্প্রতি শহর কলকাতা এবং শহরতলিতে তা বাড়ছে এবং তার বেশিরভাগটাই শিক্ষাক্ষেত্রে।

সম্প্রতি রাজ্যের মহিলা কমিশন সূত্রে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, গত তিন বছরে কর্মক্ষেত্রে হয়রানির যে সব অভিযোগ জমা পড়়েছে তার বেশির ভাগটাই স্কুল-কলেজ থেকে। কমিশন থেকে সব ক’টি ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে সুপারিশ পাঠালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হয়নি। ফলে কোনও উপায় না দেখে নির্যাতনের মধ্যে থেকেই কাজ করতে হচ্ছে বলে দাবি অভিযোগকারিণীদের।

যেমন একটি স্কুলের লাইব্রেরিয়ান এক তরুণীর অভিযোগ, স্কুলের মধ্যে তাঁকে মানসিক নির্যাতন করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক-সহ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। অভিযোগ, ছুটির পরে বাড়িতে তাঁর উপরে নজরদারি চালানোর জন্য এক গ্রুপ-ডি কর্মীকে পাঠানো হতো। এমনকী এক সতীর্থের সঙ্গে তাঁকে জড়িয়ে নানা কুৎসা রটিয়ে শিক্ষক সমিতির মিটিংয়ে তাঁকে হেনস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ। স্কুলেও যেতে পারেননি দীর্ঘদিন। মহিলা কমিশনের পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন সুরাহার দাবিতে।

মহিলা কমিশন সূত্রে খবর, বহু বার স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত রিপোর্ট তলব করেও ফল হয়নি। কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠালেও কমিশনে যাননি কেউ। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ ঘোষ জানান, মহিলা কমিশন থেকে কোনও চিঠি পাননি। তরুণী লাইব্রেরিয়ানকে কোনও হেনস্থা করা হয়নি বলে জানান তিনি।

বেহালার এক হাইস্কুলের দর্শন বিভাগের শিক্ষিকার আবার অভিযোগ, লাইব্রেরিতে ঢুকতে দেওয়া হতো না তাঁকে। সই করতে দেওয়া হতো না হাজিরা খাতাতেও। হেনস্থার মাত্রা বাড়তে থাকায় অভিযোগ জানান মহিলা কমিশনে। কিন্তু সুরাহা তো দূরের কথা, তাঁর ফোন কেড়ে নেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ফকিরচাঁদ কলেজের এক মহিলা আধিকারিককে কটূক্তি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তা-ও জমা পড়েছিল মহিলা কমিশনে। কিন্তু একটি ঘটনাতেও কোনও বিচার পাননি তাঁরা।

আরও পড়ুন: মণিপুরে ধোঁয়াশা অব্যাহত, এনপিপিকে নিয়ে সরকার গড়ার দাবি কং-বিজেপির

ফলে বুকে একরাশ আশা নিয়ে হেনস্থা হওয়া মহিলারা বারবার বিচারের আশায় দ্বারস্থ হয়েও ফিরে আসছেন খালি হাতে। আশ্বাস আর শুকনো সহানুভুতি ছাড়া তাঁদের কপালে আর কিছুই জোটেনি। উল্টে দম বন্ধ করা পরিবেশে ফিরে গিয়ে কাজ করতে হয়েছে মুখ বুজে। কমিশনে যাওয়ার খেসারত দিতে গিয়ে বরং আরও হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। সে রকমই এক মহিলার কথায়, ‘‘আমরা তাহলে কার কাছে গেলে সুবিচার পাব?’’

কমিশনের চেয়াপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আইন মেনে সুপারিশ করতে পারি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠাতে পারি। না এলে পুলিশ দিয়ে সমন পাঠিয়ে ডেকে আনতে পারি। কিন্তু আমাদের তো আইন প্রয়োগের ক্ষমতা নেই।’’

যদিও মহিলা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ভারতী মুৎসুদ্দি জানান, আইন প্রয়োগের ক্ষমতা না থাকলেও বার বার প্রশাসনের উপরে চাপ তৈরি করে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ সব ক্ষেত্রেও সে উপায় নিতে হবে। কিন্তু ঠিক কী বলছে পরিসংখ্যান? কতটা বেড়েছে এই নির্যাতনের হার?

কমিশন সূত্রের খবর, পরিসংখ্যান বলছে মহিলা কমিশনের কাছে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে কর্মক্ষেত্রে যৌন-হেনস্থার অভিযোগ জমা পড়েছিল ২৫ এবং ৩১ টি। তার মধ্যে দু’ বছরেই স্কুল থেকে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা ১২টি। ২০১৬ সালে ২০টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি অভিযোগই আসে স্কুল থেকে।

Women Disgrace Education Sector
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy