কলকাতা থেকে সপ্তাহে দু’দিন (মঙ্গল ও শনিবার) ইস্পাত এক্সপ্রেসে ঘাটশিলা ও ঝাড়গ্রাম গিয়ে রোগী দেখেন শল্যচিকিৎসক গোবিন্দলাল দেবনাথ। ‘‘কিন্তু কয়েক মাস ধরে ট্রেনটি এত দেরি করছে যে, সময়মতো চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছনো অসম্ভব হয়ে উঠেছে,’’ অভিযোগ গোবিন্দবাবুর।
ইস্পাত এক্সপ্রেসকেও কেন দেরির রোগে ধরল, ভেবে পাচ্ছেন না কলকাতারই স্ত্রীরোগ-চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। ‘‘আমার গন্তব্য ঝাড়গ্রাম। বাহন ইস্পাত এক্সপ্রেস। কিন্তু ট্রেনটা কোনও দিন ৪০ মিনিট, কোনও দিন দু’ঘণ্টা লেট করছে। অথচ রেলের ওয়েবসাইটে দেখাচ্ছে ‘রাইট টাইম’! এমনটা হবে কেন,’’ রেলের কাছে প্রশ্ন ওই চিকিৎসকের।
গোবিন্দবাবু, সঞ্জীববাবু দু’জনেই চিকিৎসক। কিন্তু রেলের এই দেরির ব্যাধির চিকিৎসা তাঁদের কাছে নেই। কিন্তু সেই রোগের দুর্ভোগটা ভুগতে হচ্ছে তাঁদেরও। লোকাল ট্রেন সময় মানে না, শিয়ালদহ শাখার এই কুখ্যাতির পাশাপাশি হাওড়া শাখায় স্বল্প পাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেনও দেরির রোগে কাবু হয়ে পড়ায় ভুগতে হচ্ছে সব শ্রেণির যাত্রীকেই। টাটানগর, ঘাটশিলা, ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর প্রভৃতি স্টেশন থেকে অনেকেই স্টিল ও ইস্পাত এক্সপ্রেসে নিয়মিত যাতায়াত করেন কলকাতায়। টাটানগর ও কলকাতার মধ্যে নাড়ির যোগ এবং সেই যোগসূত্র ধরে রেখেছে রেলই। কিন্তু বিশেষ করে ইস্পাত এক্সপ্রেস ইদানীং দেরি করতে থাকায় বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। শুধু ইস্পাত নয়, প্রায়ই দেরি করছে শিরোমণি প্যাসেঞ্জার, রূপসী বাংলার মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলিও। যাত্রীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত মালগাড়ি চালাতে গিয়েই দক্ষিণ-পূর্ব রেল এই বিপত্তি ডে়কে এনেছে।
রেল সূত্রে বলা হচ্ছে, হাওড়া থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত লাইন কম। ট্রেন বেশি। তার উপরে ছ’মাস ধরে পণ্য পরিবহণ বাড়াতে নিয়মিত বাড়তি মালগাড়ি চালানো হচ্ছে। তাতেই দেরি হচ্ছে লোকাল ও এক্সপ্রেসের।
হাওড়া-খড়্গপুর হয়ে ঝাড়সুগুদা পর্যন্ত লাইনে ট্রেন-জটের কথা স্বীকার করছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এই শাখায় রেললাইনের যা ক্ষমতা, তার চেয়ে ৩০% বেশি ট্রেন চলছে। ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।
‘‘ট্রেনগুলিকে ফের কয়েক দিন পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। তার পরে ব্যবস্থা হবে,’’ আশ্বাস দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষের।