মোটেই ভুয়ো ডাক্তার নন তাঁরা। কিন্তু যিনি যে-বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, সেটা বেমালুম চেপে গিয়ে অর্থকরী বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে রোগীদের ঠকিয়ে চলেছেন।
• এমবিবিএস পাশের পরে এক জন মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতকোত্তর (এমডি) করেছেন। অথচ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে চুটিয়ে প্র্যাকটিস করছেন একটি জেলা শহরে!
• এক জন আবার অ্যানাটমিতে এমডি করেছেন। কিন্তু কলকাতার বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে রোগী দেখছেন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে!! রোগী ভর্তিও করাচ্ছেন।
• আরামবাগের এক চিকিৎসক এমডি করেছেন ফার্মাকোলজিতে। অথচ মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআইয়ের রাজ্য শাখা খোঁজ নিয়ে দেখেছে, তিনি প্র্যাকটিস করছেন ডায়বেটোলজিস্ট হিসেবে।
• প্যাথোলজিতে এমডি করে অঙ্কোলজিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন ফুলবাগানের এক চিকিৎসক।
ওই সব চিকিৎসককে নিয়ে বেজায় মুশকিলে পড়েছে রাজ্য এমসিআই। সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগে অভিযোগে আমরা জেরবার। অভিযুক্তদের প্রত্যেকেই এমবিবিএস পাশ করেছেন। তাই ওঁদের ভুয়ো ডাক্তার বলা যাবে না। কিন্তু বাস্তব ঘটনা হল, ওঁরা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছেন।’’
কী ভাবে? ওই এমসিআই-কর্তা বলেন, ‘‘ওই সব চিকিৎসক এক-একটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। কিন্তু তাঁরা অন্য রোগের বিশেষজ্ঞ বলে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন। অথচ সেই বিষয়ে তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রকৃত যোগ্যতা গোপন রেখে তাঁরা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।’’
রাজ্য এমসিআই জানাচ্ছে, গত এক মাসে তারা এমন ১১ জন চিকিৎসককে চিহ্নিত করেছে, যাঁরা নিজেদের প্রকৃত যোগ্যতা লুকিয়ে রোগী দেখছেন। তাঁদের শো-কজ অর্থাৎ কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হচ্ছে। ওই চিকিৎসকদের জবাব এলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে দীর্ঘ সময়ের জন্য তাঁদের লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে।
রোগীদের সঙ্গে সঙ্গে কাউন্সিলের সঙ্গেও কার্যত প্রতারণা করে চলেছেন ওই চিকিৎসকদের অনেকেই। কী ভাবে? কাউন্সিলের অভিযোগ, ওই চিকিৎসকদের বেশির ভাগই নিজেদের এমডি ডিগ্রি কাউন্সিলের খাতায় নথিভুক্ত করাচ্ছেন না। কারণ, নথিভুক্ত করালেই কে কী বিষয়ে এমডি, সেটাও নথিভুক্ত করাতে হবে। কাউন্সিলের এক কর্তার কথায়, যাঁরা মূলত ফার্মাকোলজি, প্যাথোলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, অ্যানাটমির মতো বিভিন্ন ‘নন-ক্লিনিক্যাল’ বিষয়ে এমডি করেছেন, অভিযোগ উঠছে মূলত তাঁদের নিয়েই। প্রেসক্রিপশনে ওঁরা শুধু এমডি লিখছেন। কোন বিষয়ে তাঁরা এমডি করেছেন, তার উল্লেখ করছেন না। কার্ডিওলজি, ডায়বেটোলজি, মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ হিসেবে রোগী দেখছেন। কারণ তাতে পসার এবং ফি দু’টোই মেলে বেশি।
চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ-র নেতারাও এই ধরনের প্রতারণায় সামিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম চিকিৎসক-নেতা তথা আইএমএ-র রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তনু সেন কাউন্সিলে আইএমএ-র কলকাতা শাখার সভাপতি রামদয়াল দুবের বিরুদ্ধে ডিগ্রি লুকিয়ে রোগী দেখার অভিযোগ তুলেছেন। শান্তনুবাবুর অভিযোগ, ‘‘রামদয়াল দুবে প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনে এমডি করছেন। কিন্তু রোগী দেখছেন কার্ডিওলজিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে।’’ দুবে অবশ্য অভিযোগ মানতে চাইছেন না। তিনি বলেন, ‘‘কোনও অনৈতিক কাজ আমি করিনি। যা জানানোর, আমি সেটা এমসিআই-কে জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy