গা গরম, ম্যাজম্যাজ করছে। গলায় ব্যথা। এমনকি জল গিলতেও কষ্ট! সঙ্গে অনবরত কাশি! কারও কারও আবার কাশতে কাশতে দম আটকে যাওয়ার জোগাড়! ঘরে ঘরে কমবেশি এমন ছবিই দেখা যাচ্ছে। অনেকেই ভয় পাচ্ছেন, ‘করোনা নয় তো’! ছুটছেন কোভিড পরীক্ষা করাতে। কিন্তু চিকিৎসকদের মত, ভয়ের কারণ নেই। জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই কোভিড— সব সময় তেমনটা নয়।
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ঘরে জ্বর, কাশি, সর্দিতে ভুগছেন অনেকে। এক জনের হওয়া মানেই তা ছড়িয়ে যায় অন্যদের মধ্যে। কখনও দু’-তিন দিন, কখনও আবার পাঁচ-ছ’দিন কাহিল করে দিচ্ছে জ্বর, কাশি, সর্দি। করোনা-আতঙ্কে ভুগছেন অনেকেই। চিকিৎসকদের মত, কারও জ্বর, সর্দি, কাশির মতো উপসর্গ দেখা দেওয়া মানেই তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, সেটা বলা ঠিক নয়। ভাইরাল কিংবা নিউমোনিয়াও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই ঘরেই প্রতিকার মিলতে পারে। তবে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অযথা আতঙ্কিত না-হওয়ার বার্তাই দিচ্ছেন তাঁরা। একই সঙ্গে সতর্ক থাকতে বলছেন।
জ্বর, সর্দি, কাশি ছাড়াও পেটের সমস্যায় ভুগছেন, এমন রোগীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এ ছাড়া শ্বাসকষ্টও ভোগাচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, আতঙ্কিত না-হয়ে উপযুক্ত ওষুধ এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ দেবরাজ যশের কথায়, ‘‘সপ্তাহ তিন আগেও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু এখন সেই পরিমাণ অনেকটাই কমেছে।’’ তবে এখন নিউমোনিয়া, টাইফয়েড কিংবা জন্ডিসের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। হাসপাতালে এই সব রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে ভর্তিও করে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, জ্বর, সর্দি, কাশি কিংবা পেটেব্যথার মতো উপসর্গ তাপমাত্রার তারতম্যের কারণেও হয়ে থাকে। একই সঙ্গে ঋতু পরিবর্তনও অন্যতম কারণ। কখনও রোদ আবার কখনও বৃষ্টিতে ভাইরাসের উপদ্রপ বাড়ছে! দেবরাজের মতো অনির্বাণও বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে কোভিড বাড়ছিল। পরে কয়েক দিন অনেকটাই সেই প্রবণতা কমে যায়। তবে আবার এখন অনেকেই জ্বর, পেটখারাপ নিয়ে আসছেন।’’
কোভিড আক্রান্ত না কি সাধারণ জ্বর
জ্বর, সর্দি, কাশি কিংবা করোনার উপসর্গ থাকলেই তিনি যে কোভিড আক্রান্ত— তা সবসময় বলা চলে না। সব ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করলে কোভিড ‘পজ়িটিভ’ হচ্ছে, তা-ও নয়। সেই সব ক্ষেত্রে অন্য রোগের পরীক্ষা করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া বাড়ছে। সেই মতো চিকিৎসা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক অনির্বাণের কথায়, ‘‘যদি আমরা দেখি কোনও রোগীর কোমর্বিডিটি রয়েছে বা সমস্যা খুব বেশি, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি সেই ক্ষেত্রে কোভিড পরীক্ষা করানো হচ্ছে।’’ তবে শুধু কোভিড হলেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে, তা নয়। নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়ার মতো রোগেও অনেকের শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসক যশ।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে তবে তাঁর থেকে বয়স্কদের থেকে দূরে রাখুন। বাইরের খাবারের পরিবর্তে বাড়িতে রান্না করা খাবারের উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। যেখান সেখান থেকে জল না-খাওয়ার কথাই বলছেন তাঁরা।
কখন চিকিৎসক দেখাবেন?
চিকিৎসকদের মতে, যখন দেখবেন জ্বর ১০২-১০৩ ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তীব্র জ্বরের সঙ্গে বুকে সাঁই-সাঁই ভাব, কখনও কখনও ওআরএস খেয়েও পেটের সমস্যা মিটছে না, কিংবা প্রস্রাব ঘোলাটে এবং মূত্রত্যাগে সমস্যা হচ্ছে, আবার কাশির কারণে অস্বস্তি বাড়ছে, শ্বাসকষ্ট বাড়ছে— সেই সব ক্ষেত্রেই চিকিৎসকদের কাছে যাওয়া বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক যশ।
ঘরেও মিলতে পারে প্রতিকার
জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মত চিকিৎসকদের। জ্বর হলে অ্যান্টিবায়োটিক না-খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। চিকিৎসকদের মতে, জ্বর হলে পরিচিত ওষুধ খেতে পারেন রোগীরা। গলাব্যথা হলে গার্গল করলে মিলতে পারে প্রতিকার। আবার কাশি হলে গরম ভাপ নেওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।