Advertisement
১৬ মে ২০২৪

রক্তের অভাবে মৃত্যু কিশোরীর গাফিলতি, তবু শাস্তি হয়নি সাত ডাক্তারের

তিন বছর আগে ওই হাসপাতালে রক্ত না-পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু হয় উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের বছর চোদ্দোর সুহানা ইয়াসমিন মণ্ডলের। অভিযোগ, রক্ত কে দেবে, তা নিয়ে চিকিৎসকদের পারস্পরিক টালবাহানায় রক্ত আর দেওয়াই হয়নি তাকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ০৩:৪৮
Share: Save:

বিভাগীয় প্রধান-সহ এসএসকেএম হাসপাতালের সাত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে। তবু তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল।

তিন বছর আগে ওই হাসপাতালে রক্ত না-পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু হয় উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের বছর চোদ্দোর সুহানা ইয়াসমিন মণ্ডলের। অভিযোগ, রক্ত কে দেবে, তা নিয়ে চিকিৎসকদের পারস্পরিক টালবাহানায় রক্ত আর দেওয়াই হয়নি তাকে। সেই ঘটনার পরে প্রায় তিন বছর কেটে গিয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে। নিজেদের নথিতে কাউন্সিল লিখিত ভাবেই স্বীকার করেছে, ‘ওই কিশোরীর চিকিৎসায় এসএসকেএম হাসপাতালের সাত জন চিকিৎসকের যথেষ্টই গাফিলতি ছিল।’ অভিযুক্ত সাত চিকিৎসকের মধ্যে এক জন আবার একটি বিভাগের প্রধান। তার পরেও কাউন্সিল কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসকদের ওই নিয়ন্ত্রক সংস্থার অন্দরেই।

কাউন্সিল সূত্রে বলা হয়, কয়েক দিন আগে দিল্লিতে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র পক্ষ থেকে এই তদন্তের গতিপ্রকৃতি জানতে চাওয়া হয়েছিল রাজ্য কাউন্সিলের কাছে। এ ক্ষেত্রে গাফিলতিটা যে সংশ্লিষ্ট সাত চিকিৎসকেরই, রাজ্য কাউন্সিলের পক্ষ থেকে তা জানানো হয়েছে লিখিত ভাবে। মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তী এমসিআই-কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, তাঁদের পেনাল এবং এথিক্যাল কমিটি ওই সাত চিকিৎসকের গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কিন্তু এখনও চার্জ গঠন করা হয়নি। কেন হয়নি?

কাউন্সিল সূত্রে বলা হচ্ছে, অভিযুক্তেরা সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার হওয়াতেই সমস্যা হচ্ছে। কাউন্সিলের এক কর্তার কথায়, ‘‘বিষয়টা সামনে এলে সরকারি হাসপাতালে পরিষেবার মান নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠবে। এবং সেটা রাজ্য সরকারকে বিব্রত করতে পারে। তাই সাত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি থমকে আছে।’’

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন স্বাস্থ্য কমিশন তৈরি করলেন, তখনই বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তিটা উঠেছিল।
অনেকেই বলেছিলেন, সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থার দিকেও নজর দেওয়া হবে না কেন? সেই সময়ে সরকারি হাসপাতালের পরিস্থিতি অনেক ভাল বলে দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল পিজি-তে সাত-সাত জন ডাক্তারের গাফিলতি সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ওই দাবির উল্টো কথা বলছে। আর এখানেই আতান্তরে পড়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল।

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজির দাবি, ‘‘অনেক দিকে নজর রেখে চার্জ গঠন করতে হয়। যাতে কোথাও এক চুলও ফাঁক না-থাকে। তাই দেরি হচ্ছে।’’

২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর স্বরূপনগরের বাসিন্দা সুহানা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গুরুতর আহত হয়। প্রথমে বসিরহাট এবং পরে কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএমে। অভিযোগ সেখানে রক্তের অভাবে মারা যায় সে। সুহানার বাবা রুহুল আমিন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার মেয়েটা অত কষ্ট পেয়ে মারা গেল। তা সত্ত্বেও দোষীরা এখনও শাস্তি পেল না কেন? আমার মেয়ের প্রতি কিন্তু সুবিচার হল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Negligence Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE