Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Sonagachi

Trafficking Bill: সোনাগাছিতে শপিং মল হবে কি! কেন্দ্রের বিল নিয়ে চিন্তা যৌনকর্মীদের, ‘দিল্লি চলো’র প্রস্তুতি

কেন্দ্রের পাচার বিরোধী বিল নিয়ে বিভিন্ন দলের সাংসদদের সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছে দুর্বার। কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ভাবনাও রয়েছে।

দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে যৌনকর্মীদের।

দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে যৌনকর্মীদের। প্রতীকী চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২১ ১৪:৩২
Share: Save:

মানবপাচার রোধে কেন্দ্রীয় সরকারের বিল যৌন পেশায় সমস্যা তৈরি করবে বলে অভিযোগ তুলে আগেই সরব হয়েছে যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি। এ বার সেই বিল যাতে আইনে পরিণত না হয় তার দাবি নিয়ে দিল্লিতে দরবারের পরিকল্পনা করছেন কলকাতার যৌনকর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা, এই বিলে যা বলা হয়েছে তাতে যৌনকর্মীদের উচ্ছেদের সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্বারের মুখপাত্র মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমরাও মানবপাচারের বিরুদ্ধে। কেউ যাতে পাচারের শিকার হয়ে যৌন পেশায় না আসেন তা নিশ্চিত করতে আমরা অনেক উদ্যোগের শরিক। কিন্তু কেন্দ্র যা চাইছে তাতে এই পেশাই বিপদে পড়বে। আগামী দিনে হয়তো দেখা যাবে সোনাগাছিতে শপিং মল তৈরি হয়ে যাবে। বিপদে পড়বেন যৌন কর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সন্তনরাও।’’

এই বিল যাতে আইনে পরিণত না হয়, তার জন্য যৌনকর্মীদের প্রতিনিধি দল নিয়ে দিল্লিতে দরবারের পরিকল্পনা চলছে বলেও জানিয়েছেন মহাশ্বেতা। একই সঙ্গে দুর্বার বিভিন্ন বিরোধী দলের সাংসদদের সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছে। জানা গিয়েছে, কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদের বক্তব্য জানানো যায় কিনা তার ভাবনাও রয়েছে। মহাশ্বেতা আরও জানান, দুর্বারের সঙ্গে যুক্ত যৌনকর্মীরাই আশঙ্কা করছেন, নতুন আইন কার্যকর হলে এই পেশা, এই পাড়া থাকবে না। সব প্রোমোটারদের হাতে চলে যাবে। যৌনপল্লি ভেঙে তৈরি হবে শপিং মল, বহুতল।

প্রসঙ্গত ‘ট্র্যাফিকিং পার্সনস (প্রিভেনশন, প্রোটেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলেটশন) বিল ইতিমধ্যেই লোকসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে। এখন রাজ্যসভার অনুমোদন পেলেই তা আইনে পরিণত হবে। দুর্বার চাইছে, তার আগেই বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক। দুর্বারের আইনজীবী অভিজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের দেশের আগের পাচারবিরোধী আইন রয়েছে। সেটির পরে এই বিলে কোথাও ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক যৌনকর্মীদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবেও যাঁরা এই পেশায় আসবেন তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা স্বেচ্ছায় এই পেশায় এসেছেন তাঁদের তো বাধ্য করা যায় না। মানবপাচার রোধের নামে আসলে যৌনকর্মীদের পেশাটাকেই তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র।’’

দুর্বারের বক্তব্য, কেন্দ্রের সরকার নানা ভাবে এই পেশাকে বিপদে ফেলছে। দীর্ঘ সময় যৌন পেশায় থাকা দুর্বারের সম্পাদক কাজল বসু বলেন, ‘‘পুনর্বাসন মানে কী? স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিয়েছেন যাঁরা, তাঁরা সরকারি হোমে গিয়ে ডাল ভাত খাবেন কেন? দয়ার দান নিয়ে থাকবেন কেন? সরকার তো আর এককালীন বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেবে না!’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘নোট বাতিলের সময়ে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে এই পেশার মানুষদের। এর পরে করোনা বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এখন এই বিল পাশ হলে দেশের লক্ষ লক্ষ যৌনকর্মীই শুধু নয়, এই পেশার সঙ্গে পরোক্ষে যুক্ত বহু মানুষই কর্মহীন হবেন। যদিও তাঁরা কেউ পাচার হয়ে পেশায় আসেননি। আসলে সরকার চায়, যৌনকর্মীরা বিপদে পড়ুক। তাঁদের সন্তানরা চোর, ডাকাত হোক। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেব না। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাব। পেশাকে বাঁচাতে পথে নামব। দিল্লিতে যাব প্রতিবাদ জানাতে। সাধারণ মানুষকে পাশে নিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান হবে।’’

দুর্বারের বক্তব্য, শুধু এই রাজ্যেই লক্ষাধিক মানুষ স্বেচ্ছায় এই পেশায় যুক্ত। নতুন বিলে যে প্রস্তাব রয়েছে তাতে পুলিশের হাতে যথেচ্ছ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পাচারকারীদের মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। আইনজীবী অভিজিৎ বলেন, ‘‘দুর্বার পুলিশের হাতে যা খুশি করার ক্ষমতা দেওয়া এবং মৃত্যুদণ্ড দুয়েরই বিরোধী। আর এই বিলে এমন কথাও বলা রয়েছে যে যৌনকর্মীদের কোনও চিকিৎসক দেখতে গেলে তিনিও অপরাধের আওতায় পড়বেন।’’ তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের এই বিলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আইনজীবীদের সংগঠিত করার কাজও চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Narendra Modi Kolkata Sonagachi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE