Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
কন্যার দুর্গতি নাশ হবে কবে

ছোট্ট মেয়েটির মুখে দেবীদর্শন

পরিবারের শিশুকন্যার আদলে গড়া হচ্ছে মা দুর্গার মূর্তি। যেন তেমনই শ্রদ্ধা থাকে বাড়ির মেয়েদের প্রতিও। দমদমের অর্জুনপুরে পুজোর সব দায়িত্বই কাঁধে নিয়েছেন মহিলারা।পরিবারের শিশুকন্যার আদলে গড়া হচ্ছে মা দুর্গার মূর্তি। যেন তেমনই শ্রদ্ধা থাকে বাড়ির মেয়েদের প্রতিও। দমদমের অর্জুনপুরে পুজোর সব দায়িত্বই কাঁধে নিয়েছেন মহিলারা।

ব্যস্ত শিল্পী পিয়ালি সাধুখাঁ। অর্জুনপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ব্যস্ত শিল্পী পিয়ালি সাধুখাঁ। অর্জুনপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৫৪
Share: Save:

মোদী বলেন, মেয়েদের নিজস্বী তোলার কথা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কন্যাশ্রীর কথা। কিন্তু এত কিছুর পরও সমাজে মেয়েরা অবহেলিত। তাই তো এখনও অনেক জায়গায় কন্যাসন্তান জন্মালে মেরে ফেলা হয়। আবার কোথাও মাঝপথেই মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে বাড়ির ছেলেকে পড়ানো হয়। আর সেই সমাজেই প্রত্যেক বছর দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। কিন্তু দেবীও যে একটি মেয়ে। মেয়ে থেকেই তিনি মা। সে কথা মনে করিয়ে দিতেই এ বার দমদমের অর্জুনপুরের ‘আমরা সবাই’ ক্লাব কন্যারূপে দেবীর আরাধনা করছে। আর সেই পুজোতে প্রধান ভূমিকাও মেয়েদের। মণ্ডপ ও মূর্তি তৈরি করছেন মহিলা শিল্পী, পুজো করবেন মহিলা পুরোহিত, ঢাক বাজাবেন মহিলা ঢাকী।

উদ্যোক্তা মৌসুমী দত্তের কথায়, ‘‘যে সম্মান দেবী দুর্গাকে দিই, সেই সম্মান আমরা আমাদের বাড়ির মেয়েদের আদৌ দিই কি?’’ তিনি জানান, এ বার পুজো এলাকার মহিলারা করছেন।

দেবীর চোখ আঁকতে আঁকতে মহিলা শিল্পী পিয়ালি সাধুখাঁ বলেন, ‘‘এ বার এখানে মাকে একটি ছোট্ট মেয়ে হিসেবে পুজো করা হবে। সেই আদলেই তৈরি করেছি মূর্তি। দেবীর মুখে যেন সবাই নিজের বাড়ির মেয়ের মুখ দেখতে পায়।’’ তাঁর আশা, মেয়ের মুখটি দেবীর মুখে দেখলে বাড়ির মেয়েকেও যথাযথ সম্মান দেওয়া হবে। পিয়ালির স্বামী সৌমিক সাধুখাঁও একজন শিল্পী। স্ত্রীর এই প্রয়াসকে সম্মান জানিয়ে তিনিও ওই মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছেন সহকারীর ভূমিকায়। পুজোর মণ্ডপটিও তৈরি হচ্ছে মায়ের গর্ভের মতো। গ্রাম বাংলার আদলে মণ্ডপের চারিপাশের পরিবেশ গড়ে তোলা হচ্ছে।

পুজোর জন্য হুগলি থেকে মহিলা পুরোহিত অনিতা মুখোপাধ্যায়কে আনা হচ্ছে। তিন বছর ধরে পুজো করছেন অনিতাদেবী। কিছুদিন আগে দমদমে মহিলা-পরিচালিত এক গণেশ পুজোয় তাঁকে ডাকা হয়েছিল। তবে মা দুর্গার পুজো করা তাঁর বহুদিনের সাধ। আগে দু-একটি দুর্গাপুজো করেছেন ঠিকই। কিন্তু তা এত বড় নয়। তাঁর কথায়, ‘‘মহিলা বলে অনেক জায়গায় পুজো করতে দেওয়া হয়নি। আগেও পুজো করেছি। তবে এত সম্মান কখনও পাইনি।’’ মণ্ডপের ভিতরে স্টুডিও তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে মেয়েরা দুর্গা ঠাকুরের সঙ্গে ছবি তুলতে পারবে। ছবিগুলির মধ্যে যাঁর ছবি সবচেয়ে ভাল হবে তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হবে, জানান মৌসুমীদেবী। শুধু তাই নয় বেঙ্গালুরু থেকে একটি অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরি করে আনা হয়েছে। ফিল্মে দেখানো হয়েছে, ছোট্ট একটি মেয়ে দুর্গার রূপ নিয়েছে। যা পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপে চালানো হবে। সব মিলিয়ে এবার কচি দুর্গার জয়জয়কার অর্জুনপুরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE