পিপিই কিট পরে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে কলকাতার একটি পুজো মণ্ডপে। ছবি: এএফপি
দুর্গাপুজোর মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখার রায় বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, ‘দর্শক’ বলতে ‘বহিরাগত’ দর্শকের কথাই বোঝানো হয়েছে। মঙ্গলবারের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করলেও বুধবার রায়ে আংশিক পরিবর্তন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বড় পুজোয় মণ্ডপের ভিতরে ঢোকার জন্য পুজো কমিটির সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা মিলিয়ে ৬০ জনের তালিকা বানানো যাবে। তবে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪৫ জনই মণ্ডপে থাকতে পারবেন। অন্যদিকে, ছোট পুজোর ক্ষেত্রে ‘নো এন্ট্রি জোন’-এ ঢোকার জন্য ৩০ জনের তালিকা রাখা গেলেও একসঙ্গে ১৫ জনের বেশি ঢুকতে পারবেন না।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চের রায় ছিল ছোট পুজোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ জন এবং বড় পুজোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ জন পুজোর জন্য ‘নো এন্ট্রি জোন’-এ ঢুকতে পারবেন। দর্শকদের ওই এলাকায় ঢোকা নিষিদ্ধ। সেই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটি’। বুধবার শুনানির দু’টি ক্ষেত্রে সামান্য ছাড় দিয়ে কার্যত আগের রায়ই বহাল রেখেছেন দুই বিচারপতি।
বড় ও ছোট পুজোর মাপকাঠি কী? আগের রায়েই বিচারপতিরা জানিয়েছিলেন ৩০০ বর্গমিটারের বেশি এলাকা জুড়ে যে সব প্যান্ডেল তৈরি হয়েছে, সেগুলিকে ‘বড় পুজো’ হিসেবে ধরা হবে। তার কম এলাকা হলে সেগুলি ‘ছোট পুজো’। এ দিনের রায়ে ঢাকিদের ‘নো এন্ট্রি জোন’-এ ঢোকার অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট। হইহই করে সিঁদুর খেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে দশমীর দিন প্রতিমাকে সিঁদুর-সহ অন্যান্য উপাচার দিয়ে বরণ করা যাবে বলেই মনে করছেন পুজো উদ্যোক্তারা।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বোনাস ঘোষণা, পাবেন ৩০ লাখ কর্মী
রায়ের পর ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটি’-র সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘এটা আমাদের নৈতিক জয়। আগের রায়ে মাত্র ২৫ জনের ঢোকার অনুমতি ছিল। এত কম লোক নিয়ে কী ভাবে মণ্ডপে পুজো হবে? নতুন নির্দেশে সেই সংখ্যাটা বেড়ে একসঙ্গে বড় মণ্ডপের ক্ষেত্রে ৪৫ জন এবং ছোট পুজোয় ১৫ জন ঢুকতে পারবেন। এই তালিকা প্রতিদিন পাল্টানো যাবে। ফলে অনেক বেশি মানুষ মণ্ডপে ঢোকার সুবিধা পাবেন।’’
আরও পড়ুন: গৃহঋণে সুদ কমাল স্টেট ব্যাঙ্ক, উৎসবের এই উপহারে থাকছে একটাই শর্ত
তবে পুজোর সঙ্গে জড়িতরা মনে করছেন, ওই সংখ্যা স্থানীয় বাসিন্দা এবং উদ্যোক্তা মিলিয়েই। উদ্যোক্তারা স্থানীয় বাসিন্দাই হন। সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৫ জনের মধ্যে ‘উদ্যোক্তা’ বলে ৫ জনকে চিহ্নিত করা হলে বাকিরা তো ‘দর্শক’ হিসেবেই পরিগণিত হবেন। ফলে বিচারপতিরা তাঁদের রায়ে একেবারে ‘দর্শকশূন্য’ মণ্ডপ বা প্যান্ডেল রাখার কথা বলেননি বলেই তাঁদের দাবি।
দ্বিতীয়ত, এই রায় বিভিন্ন আবাসন, কমপ্লেক্স বা শোভাবাজার রাজবাড়ি অথবা মল্লিকবাড়ির পুজোর ক্ষেত্রেও বলবৎ থাকবে।
বিচারপতিদের বক্তব্য:
চিকিৎসকেরা বলেছেন পঞ্চমীতেই শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুজো। আগের নির্দেশ যেন বদল না হয়। রাজ্য সরকারের কথাও আমরা শুনেছি। সবার কথা শুনে আমরা দু’টো বিষয়ে সামান্য কিছু পরিবর্তন করছি।
১। ঢাকিদের ‘নো এন্ট্রি জোন’-এ রাখা যাবে। ‘নো এন্ট্রি জোন’-এর ঘেরা জায়গায় তাঁরা ঢাক বাজাতে পারবেন। তবে মূল মণ্ডপের ভিতরে ঢুকতে পারবেন না। মাস্ক পরা-সহ অন্যান্য করোনা বিধি মেনে চলতে হবে তাঁদের।
২। ফিক্সড চার্ট সকাল ৮ টায় টাঙাতে হবে। ছোট পুজোয় একসঙ্গে ১৫ এবং বড় পুজোয় ৪৫ জন ‘নো এন্ট্রি জোন’-এ ঢুকতে পারবেন। বড় পুজোয় ৬০ জনের তালিকা রাখা যাবে। ছোট পুজোর ক্ষেত্রে এই সংখ্যা হবে ৩০।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সওয়াল:
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়: একটা ছোট মডিফিকেশন (বদল) চাইছি আমরা।
বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়: কত ছোট?
কল্যাণ: সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এই তিন দিন শুধু এলাকাবাসীকে ধাপে ধাপে ঢোকার অনুমতি দিন। সন্ধিপুজো ৪৮ মিনিটের। সেই সময় আগ্রহীদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি দিন। সন্ধের দিকে ধাপে ধাপে কিছু মানুষ যাতে ঢুকতে পারেন, তার ব্যবস্থা করুন। তাঁরা একদিক দিয়ে ঢুকে একদিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবেন। ঢাকিদের আমরা প্যান্ডেলের বাইরে রাখতে পারি। এই ক’দিন কারও নামের তালিকা আলাদা করে দেওয়া সম্ভব নয়। সিঁদুর খেলা বিবাহিত নারীর আবেগ। সেটার অনুমতি দেওয়া হোক। সংবাদমাধ্যমে এত বলা হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা তো পুজো প্যান্ডেলে যাচ্ছেন। আপনারা সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে নির্দেশ দিন, তারা যএন সকলকে প্যান্ডেলে যেতে নিষেধ করে। তাদের প্রতিনিধিরাও যাতে ঘন ঘন প্যান্ডেলে না যান। দ্বিতীয়ত, প্যান্ডেলের ১০ মিটার বা ৫ মিটার দূরত্বের বাইরে যে ভিড় হবে, তার থেকে করোনা না ছড়ানোর গ্যারান্টি কি আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য দিতে পারবেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy