Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
প্রচারে পরিবেশবান্ধব জিনিস ব্যবহারের জন্য দলগুলিকে অনুরোধ করেছে নির্বাচন কমিশন

ফ্লেক্সের বদলে কাগজ, সাড়া মিলবে কি?

প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলির পরিবেশ বান্ধব জিনিস ব্যবহারে কোনও আপত্তি নেই। বরং তারা খুশি মনেই নির্বাচন কমিশনের ভাবনাটিকে  সমর্থন জানাচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও বিষয়টিকে মাথায় রেখে ফিরে গিয়েছেন পুরনো দিনের রাজনৈতিক প্রচারের সামগ্রীগুলিতে।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৬
Share: Save:

প্রথম বারের জন্য ভোটে পরিবেশ নিয়ে ভাবার অনুরোধ এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের সাত দফা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণাকালে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছে পরিবেশ বান্ধব প্রচার সামগ্রী ব্যবহারে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলি কি আদৌ তাদের প্রচারে বিষয়টিকে সে ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে? আপাতত, সে প্রশ্ন নিয়েই ভোটের প্রচারে চোখ রাখছেন পরিবেশপ্রেমীরা।

প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলির পরিবেশ বান্ধব জিনিস ব্যবহারে কোনও আপত্তি নেই। বরং তারা খুশি মনেই নির্বাচন কমিশনের ভাবনাটিকে সমর্থন জানাচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও বিষয়টিকে মাথায় রেখে ফিরে গিয়েছেন পুরনো দিনের রাজনৈতিক প্রচারের সামগ্রীগুলিতে। তাঁরা চাইছেন, রাজনৈতিক প্রার্থীরা ফ্লেক্সের পরিবর্তে কাপড় বা কাগজের ব্যানারই ব্যবহার করুন, যাতে পরিবেশের ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।

পরিবেশকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে অনেক আগেই আন্দোলন শুরু হয়েছে। সেখানে নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়ায় পরিবেশ সচেতনতা বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করার ভাবনাটি প্রশংসিত হচ্ছে সব মহলেই। কিন্তু কী ভাবে তার বাস্তবায়ন সম্ভব, তা নিয়েই প্রাথমিক ভাবে সংশয় তৈরি হয়েছিল মানুষের মনে। তবে পরে স্থির হয়, এ বারের ভোটের প্রচারে আগেকার সাবেক নিয়মে ফিরে যাওয়া হবে। পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে প্লাস্টিকের পতাকা, দেওয়াল জুড়ে ফ্লেক্স ব্যবহারের পরিবর্তে ফিরে যাওয়া হবে দেওয়াল লিখনের সাবেক ঐতিহ্যে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে এ বারের নির্বাচনী প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলিকে ঝোঁকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কাগুজে পতাকা বা কাপড়ের ফেস্টুন-ব্যানারে। ফলে, ভোটের বাজারে খানিক হলেও পরিবেশকে দূষণ থেকে দূরে রাখা যাবে, এমন আশা করছেন পরিবেশকর্মী ও সচেতন নাগরিকেরা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আগেকার সময়ের চুন-গোলা দিয়ে দেওয়ালে লেখা প্রার্থীর নাম-প্রতীক এবং বিরোধীর উদ্দেশে লেখা সমালোচনা অনেক সময় দৃশ্যদূষণের নজির গড়লেও আর যাই হোক পরিবেশ দূষণ বাড়াত না। তাই নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে খুশি মনেই স্বাগত জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। বরং এ বার কিছুটা আশার আলোই দেখছেন পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নাগরিকেরা।

তাঁদের মতে, সাবেকি যে দেওয়াল লিখন বা কাগজ-কাপড়ের পতাকা এসবের ব্যবহার এখন কমে এসেছে। ফ্লেক্স অনেক তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে যায়। কাগজের ব্যানার হাতে লেখাটা বেশ কষ্টসাধ্য। যে কারণে বর্তমানে সহজসাধ্য জিনিসের দিকেই ঝুঁকেছে রাজনৈতিক দলগুলি। তা ছাড়াও, অনেক সময় দেওয়াল লিখনের জন্য সুন্দর হস্তাক্ষরযুক্ত শিল্পীকেও সব সময়ে পাওয়া যায় না। সে দিক থেকে মেশিনে ছাপানো ফ্লেক্স অনেক সুবিধাজনক। তবে তা পরিবেশের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদি হিসাবে ক্ষতিকারক।

চাকদহ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার বিবর্তন ভট্টাচার্য, শান্তিপুরের পরিবেশ ভাবনা মঞ্চের সুব্রত বিশ্বাসেরা বলছেন, “সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। কিন্তু এটা যেন বাস্তবায়িত হয়, তা দেখতে হবে।’’ অন্য দিকে, তাঁদের দাবি নির্বাচনী প্রচারে মাইক বা বক্স বাজিয়ে যে শব্দদূষণ হয়, তা-ও নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত।

ফ্লেক্স নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তের পক্ষে দাড়াচ্ছেন। শিমুরালির লক্ষণ সূত্রধর বলেন, “আমরাও জানি, এটা দূষণ ছড়ায়। কিন্তু কারও কারও আবদার মেটাতে তৈরি করে দিতে হয়। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তটি ভাল। আমি এটা সমর্থন করছি। বস্তা বা কাপড়ের ব্যানার, ফেস্টুন তৈরি করে দিতে আমাদের আপত্তি নেই।”

ইতিমধ্যে কেউ কেউ দোকানে এসে ফ্লেক্সের দরদামও করে গিয়েছেন। তবে এখনও অর্ডার আসেনি বলেই জানাচ্ছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।

করিমপুরের বাপ্পাদিত্য চৌধুরী যেমন বলছেন, “এখনও কেউ অর্ডার দেয়নি। কমিশনের আবেদনের পরে দলগুলো কী করবে, জানি না। তবে এখন বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে ফ্লেক্স ব্যাপক ভাবে চলছে।”

প্রাথমিক ভাবে জেলার রাজনৈতিক দলগুলিও পরিবেশবান্ধব প্রচার সামগ্রী ব্যবহারের পক্ষেই কথা বলছে। তবে পরিবেশপ্রেমীদের শঙ্কা এখনই কাটছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE