Advertisement
E-Paper

সারদা তদন্তে বস্ত্রমন্ত্রী আজ ইডি-র মুখোমুখি

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের সূত্রে আজ সোমবার কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর অফিসারদের মুখোমুখি হচ্ছেন রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বাঁকুড়ায় একটি লোকসানে চলা সিমেন্ট কারখানা সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনকে বিক্রির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে ইডি বৃহস্পতিবার চিঠি পাঠিয়েছিল শ্যামাপ্রসাদবাবুকে। বলা হয়েছিল সোমবার সল্টলেকে ইডি-র পূর্বাঞ্চলীয় দফতরে হাজির হতে। মন্ত্রী সে দিন জানিয়ে রেখেছিলেন, সিমেন্ট কারখানার হস্তান্তর সংক্রান্ত কাগজপত্র সব হাতে পেলে তিনি সোমবার ইডি-র দফতরে যাবেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪৮
মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ

মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের সূত্রে আজ সোমবার কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর অফিসারদের মুখোমুখি হচ্ছেন রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

বাঁকুড়ায় একটি লোকসানে চলা সিমেন্ট কারখানা সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনকে বিক্রির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে ইডি বৃহস্পতিবার চিঠি পাঠিয়েছিল শ্যামাপ্রসাদবাবুকে। বলা হয়েছিল সোমবার সল্টলেকে ইডি-র পূর্বাঞ্চলীয় দফতরে হাজির হতে। মন্ত্রী সে দিন জানিয়ে রেখেছিলেন, সিমেন্ট কারখানার হস্তান্তর সংক্রান্ত কাগজপত্র সব হাতে পেলে তিনি সোমবার ইডি-র দফতরে যাবেন। রবিবার মন্ত্রী বলেন, “সব কাগজপত্র গুছিয়ে ফেলেছি। সেগুলো নিয়ে সোমবার সল্টলেকে ইডি-র অফিসে যাব।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “সিমেন্ট কারখানায় লাভ হচ্ছিল না। খদ্দের পেয়েছিলাম, বেচে দিয়েছিলাম। তখন সারদার নামও অত শোনা যেত না। ভাবতেই পারিনি এই রকম দিন আসতে পারে।”

শ্যামাপ্রসাদবাবু হলেন রাজ্যের প্রথম মন্ত্রী, যাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থাটি এর আগে তৃণমূলের তিন সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তী, সৃঞ্জয় বসু ও অর্পিতা ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। একাধিক বার জেরা করেছে সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূলের সাংসদ কুণাল ঘোষকে। রাজ্যের আরও কিছু মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়ককে তারা তলব করতে পারে বলেও ইডি সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে। বস্তুত দিন যত গড়াচ্ছে, কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সংস্থা সারদা-তদন্তের ফাঁস তত শক্ত করছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত ২৮ জায়গায় জোরদার তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই, শনিবার যে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২। গুয়াহাটিতে দু’টি টিভি চ্যানেলের অফিস সিল করা হয়েছে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনা সিংহের দু’টো বাড়িও সিল করে দেওয়া হয়েছে।

বস্ত্রমন্ত্রীকে তলবের প্রেক্ষাপটে রয়েছে বাঁকুড়ার ওই সিমেন্ট কারখানা। কী তার বৃত্তান্ত?

ইডি-সূত্রের খবর, সিমেন্ট কারখানা গড়তে শ্যামাপ্রসাদবাবু ২০০৬-এ বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় থানার ধবনীতে জমি কিনেছিলেন। পাঁচিল তুলে কারখানা চালু করতে আরও বছর দেড়েক। কিন্তু ‘ল্যান্ডমার্ক সিমেন্ট’ নামে ওই কারখানা গোড়া থেকেই লোকসানে চলতে থাকে। শেষমেশ শ্যামাপ্রসাদবাবু সেটি সারদা গোষ্ঠীকে বেচে দেন। মন্ত্রীর বক্তব্য, “বেলবনিতে ১৮ বিঘা জমির উপরে ওই কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসা সে ভাবে না জমায় কারখানা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০৯-র জানুয়ারিতে সারদা গোষ্ঠীকে ২ কোটি ৭১ লক্ষ টাকায় কারখানা বিক্রি করা হয়। কারখানার নতুন নাম হয় ‘সারদা ল্যান্ডমার্ক।” বস্ত্রমন্ত্রীর দাবি, ওই কারখানার অংশীদার ছিলেন ছ’জন। ব্যাঙ্কের দেনা বাদ দিয়ে নগদ ৪৬ লক্ষ টাকা বিক্রেতাদের ঘরে উঠেছিল।

এখানেই প্রশ্ন জেগেছে ইডি’র মনে। জন্ম ইস্তক লোকসানে চলা একটা কারখানা সারদা কিনল কেন?

ইডি-সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানা বিক্রির সময়ে তাঁর সঙ্গে সুদীপ্ত সেনের মধ্যস্থতা কে করেছিলেন, মন্ত্রীর কাছে তা জানতে চাওয়া হবে। যাচাই করা হবে, ঠিক কত টাকায় কারখানা হস্তান্তর হয়েছিল। এমন কিছু বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেতেই মন্ত্রীকে বলা হয়েছে, কারখানার মালিক থাকাকালীন সময়কার ব্যালান্স শিট, আয়কর রিটার্ন-সহ বিভিন্ন নথিপত্র নিয়ে আসতে।

বিষ্ণুপুরবাসীর মতে, সারদা-কাণ্ডে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের তদন্তে ডাক পড়বে তা নিয়ে সংশয় না থাকলেও কিন্তু সেই তালিকায় যে মন্ত্রী হিসেবে প্রথম নামই শ্যামাপ্রসাদবাবুর হবে তা অনেকে ভাবেননি। বিষ্ণুপুরে সামনের বছরেই পুরভোট। তার আগে এলাকার মন্ত্রী বিতর্কে জড়ানোয় বিরোধী দলগুলি তার সুযোগ নিতে তৎপর।

সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র এ দিন বলেন, “বিধানসভা ভোটে শ্যামাপ্রসাদবাবু সম্পত্তির যে হিসেব দিয়েছিলেন তাতে এই কারখানা বিক্রি করে পাওয়া টাকার উল্লেখ ছিল না। আমার কাছে সেই নথি আছে। ওই টাকা কোথায় গেল তা জানতে মুখিয়ে রয়েছি।” বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের দাবি, “শ্যামপ্রসাদবাবু সারদা-কাণ্ডে জড়িয়েছেন। আরও বহু নেতা জড়াবেন। পুরভোটের আগে বিষ্ণুপুরবাসীর কাছে শ্যামাপ্রসাদবাবুর আসল চেহারাটা ফাঁস হয়ে গেল।” জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “আমাদের কাছে যা খবর আসছে, সবই সংবাদ মাধ্যম মারফৎ। এর বাইরে কিছু জানি না। তাই কোনও মন্তব্য করতে পারব না।” তবে বিষ্ণুপুর পুরসভার উপ পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “শ্যামবাবু নির্দোষ। শীঘ্রই তা প্রমাণিত হবে।”

saradha scam money laundering ed shyamaprasad mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy