সুজন চক্রবর্তীর সচিত্র শুভেচ্ছাবার্তা।
ইদের চাঁদ দেখতে না পেয়ে উৎসব এ বার পিছিয়ে গেল এক দিন। আর নিঃশব্দে নিজেদের নতুন পথে এগিয়ে নিয়ে গেল বঙ্গ সিপিএম!
নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে দলের কোন লাইন কী ভাবে ভাঙা হয়েছে, তা নিয়ে চুলচেরা তর্ক এখনও চলছে সিপিএমে। কোন পথে এগোবেন সীতারাম ইয়েচুরি-প্রকাশ কারাটেরা, তার দিশা এখনও ঠিক হয়নি। কিন্তু সেই বিভ্রান্তির বাজারেই রথ আর ইদের জোড়া উৎসবে নুতন পথে এগিয়ে গিয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তীরা। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এ বার আম জনতার জন্য তাঁদের শুভেচ্ছা সচিত্র। নিজেদের ছবি তো বটেই। এমনকী, বাবা জগন্নাথের শ্রীমুখও দেখা যাচ্ছে সিপিএমের জনপ্রতিনিধিদের শুভেচ্ছার সঙ্গে!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে দলের সাধারণ ব্লক সভাপতি পর্যন্ত, তৃণমূলের নানা স্তরের নেতাদের ছবি দিয়ে দশাসই শুভেচ্ছা-হোর্ডিং দেখতে রাজ্যবাসী অভ্যস্ত। দুর্গা পুজো, ছট পুজো থেকে ইদ, এই পরম্পরার এখন রমরমা। কিন্তু বাংলার সিপিএমে ছবি নিয়ে স্পর্শকাতরতা যুগের হাওয়ায় এ
ভাবে উড়ে যাওয়া এই প্রথম! কেরলের বাম নেতারা অবশ্য অনেক আগে থেকেই প্রচারে নিজেদের ছবি চুটিয়ে ব্যবহার করেন। কিন্তু সে তো দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতি! বঙ্গোপসাগরের তীরে ভোট হোক বা উৎসব, সিপিএমের কিছু নিজস্ব কায়দা ছিল। তবে কি তৃণমূলের জমানায় মমতার প্রবল জনসংযোগের সঙ্গে এঁটে উঠতে পুরনো ধারণা ঝেড়ে ফেলতে হল সিপিএমকে?
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী মানছেন, মমতা এ কাজ অনেক আগেই শুরু করেছিলেন। এটা বাংলার সংস্কৃতি কি না, সেই প্রশ্ন তুলে তাঁরা অনেক দিন সংশয়ে ছিলেন। যাদবপুরের বিধায়কের কথায়, ‘‘এখন বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রেও প্রার্থীর ছবি দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এর পরে আর বাধা-নিষেধ থাকবে কী ভাবে? তা ছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটা জায়গা, যেখানে ছবি দেওয়াটাই স্বাভাবিক রীতি।’’ তবে সুজনবাবুর দাবি, তিনি প্রতি বারই এমন শুভেচ্ছা দিয়ে থাকেন।
যুগের সঙ্গে রীতি পাল্টে এ বার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবুর রথ ও ইদের শুভেচ্ছা তাঁর ছবি সমেতই পোস্ট করেছে দলের সোশ্যাল মিডিয়া টিম। সুজনবাবুর মতোই বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বা সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জোড়া শুভেচ্ছা বিলিয়েছেন সচিত্র। দ্রুত তা আবার হাত ঘুরে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে দেওয়ালে। জনপ্রতিনিধি হিসাবে যাঁরা সরাসরি জনতার সঙ্গে সংযোগে আছেন, তাঁরা সকলেই প্রায় এই পথ নিয়েছেন। বেহালার ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর নীহার ভক্ত যেমন। তাঁর তরফেও রথযাত্রা ও ইদের শুভেচ্ছা ছবিসমেত।
সাত বছর আগে এই কলকাতাতেই লোকসভা ভোটে সিপিএমের প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের ছবি সংবলিত ‘জয় হো’ হোর্ডিং খুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল আলিমুদ্দিনের আপত্তিতে। এখন তারাই হইহই করে ছবি পোস্ট করছে? এখন দলের সাংসদ ও পলিটব্যুরো সাংসদ সেলিমও মানছেন, ‘‘ধর্মকে আগে অন্তরের বিশ্বাস হিসাবে দেখা হতো। এখন সবটাই উৎসব এবং বাইরে প্রদর্শনী করার ব্যাপার। পঞ্চায়েত থেকে সংসদ, নানা স্তরে যাঁরা জনপ্রতিনিধিত্বে আছেন, তাঁরাও চাইছেন উৎসবের মাধ্যমে জনসংযোগে সামিল হতে।’’
চলতি হাওয়ার পন্থী হওয়া নিয়ে সিপিএমের মতো দলে বিরুদ্ধ মত থাকবে না, এ কখনও হয় নাকি! যথারীতি প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য ও প্রাক্তন বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় যেমন সোশ্যাল মিডিয়াতেই কটাক্ষ করেছেন, ‘‘ভারতীয় রীতি অনুসারে বিজয়া, দশেরা, দীপাবলি, রাখিবন্ধন, ভাইফোঁটা, বিহু, পোঙ্গল, ইদ— এ সবের শুভেচ্ছা-বার্তা আমরা প্রায় সবাই সবাইকে দিয়ে থাকি। এ বার আবার দেখছি ‘রথ বাবাজি’কে আসরে নামতে। অতি উত্তম! শুভেচ্ছা চালাচালির অন্দর কি বাত— এ আরাম কা মামলা হ্যায়!’’
খোঁচা যা-ই থাক, সিপিএমে মামলা আসলে সাবেকিয়ানা ছেড়ে আধুনিক জন-সরণিতে পৌঁছনোর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy