Advertisement
০১ মে ২০২৪

প্রতিবেশীকে দেখতে হেঁটে নামলেন প্রৌঢ়

সোমবার বেলা ২টোয় প্রৌঢ় আসার পরে শিলিগুড়ির প্রধাননগরে নার্সিংহোমে হইচই পড়ে যায়। ম্যানেজারই ওই প্রৌঢ়কে আইসিইউ-তে গিয়ে রোগীকে দেখার ব্যবস্থা করে দেন। ওই বৃদ্ধের শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করেন প্রৌঢ় মানুষটি। তখন তাঁর চোখ ভিজে উঠেছে।

পাহাড়-থেকে: প্রতিবেশীকে দেখতে শিলিগুড়ির হাসপাতালে। সোমবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

পাহাড়-থেকে: প্রতিবেশীকে দেখতে শিলিগুড়ির হাসপাতালে। সোমবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ০২:৩৫
Share: Save:

মোর্চার মিছিলে না যাওয়ায় এক বৃদ্ধের মাথায় রড দিয়ে মারা হয়েছিল। শনিবার গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে শিলিগুড়ির হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারপর থেকে তাঁর বাড়ির লোকজনও আর তেমন খোঁজ খবর পাচ্ছিলেন না। প্রতিবেশী পরিবারের এই সমস্যায় ১০ ঘণ্টায় পশুপতি বাজার ঘুরে শিলিগুড়ি পৌঁছন এক প্রৌঢ়। তার মধ্যে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার তিনি হেঁটে নেমেছেন।

দার্জিলিঙের লাডেন লা রোড লাগোয়া জনবসতিতে থাকেন আহত বৃদ্ধ ও তাঁর প্রতিবেশী এই প্রৌঢ়। দু’জনের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের ও খুবই গভীর। ওই বৃদ্ধ এক সময় ওই প্রৌঢ়র বিপদে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাই এ বার ওই প্রৌঢ়ও চেয়েছিলেন বৃদ্ধের পাশে থাকতে। গাড়ি বন্ধ বলে পিছিয়ে আসেননি। গাড়িতে যে দূরত্ব মাত্র আড়াই ঘণ্টা, তা পার করতে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। শুরুটা হয়েছে হেঁটে। ওই প্রৌঢ় বলেন, ‘‘হাঁটছিলাম, কারণ তাতে কারও সন্দেহ হবে না।’’

তাই ভোর চারটেয় উঠে লাঠি হাতে বেরিয়ে পড়েন ঘুমের দিকে। পকেটে ১ হাজার টাকা ও ছোট্ট টর্চ। গোড়ায় কখনও কুকুরের পাল তাড়া করেছে। কাকঝোর এলাকায় সামনে পড়ে দশাসই চেহারার কুকুরের পাল। তাদের লাঠি উঁচিয়ে তাড়াতে গিয়ে পা পিছলে গিয়েছে। সুখিয়াপোখরির কাছে গিয়ে ক্লান্তিতে বসে পড়েছেন পাহাড়ি ঝোরার ধারে। সেখানে আঁজলা ভরে জল খেয়ে ফের হেঁটেছেন।

ভোরের আলো ফুটলে মানেভঞ্জনের কাছে দোকানে বসে চা-বিস্কুট খেয়ে ফের হাঁটা। দরদর করে ঘামতে ঘামতে বেলা ১১টা নাগাদ ভারত-নেপাল সীমান্তের পশুপতি বাজারের অদূরে সীমানা-ফটকে এসএসবির ছাউনির কাছে গিয়ে বসে পড়েন। নেপালের এক নিরাপত্তা রক্ষী তাঁকে বাইকে চাপিয়ে পশুপতি বাজারে পৌঁছে দেন। সেখান থেকে ট্রেকারে কাঁকরভিটা। হেঁটে মেচি পেরিয়ে খঢ়িবাড়ির বাসে উঠে শিলিগুড়ি।

সোমবার বেলা ২টোয় প্রৌঢ় আসার পরে শিলিগুড়ির প্রধাননগরে নার্সিংহোমে হইচই পড়ে যায়। ম্যানেজারই ওই প্রৌঢ়কে আইসিইউ-তে গিয়ে রোগীকে দেখার ব্যবস্থা করে দেন। ওই বৃদ্ধের শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করেন প্রৌঢ় মানুষটি। তখন তাঁর চোখ ভিজে উঠেছে।

কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করলেন না কেন? জবাব মিলল, অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া নিতে গেলে প্রথমে মোর্চার স্থানীয় নেতার কাছে আবেদন করতে হবে। তা জেলা অফিসে যাবে। কে কে গাড়িতে থাকবে, কত ক্ষণে ফিরবে সেটাও ঠিক করে দেওয়া হয়। মোর্চার অফিস থেকে লিখিত অনুমতি পত্র নিয়ে রওনা হতে হবে। তারপরেও কখনও কাউকে নামিয়ে রাস্তায় অন্যকে উঠিয়ে দেওয়াও হয়। তাই ঝুঁকি নিতে চাননি। মোর্চা নেতারা এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। মোর্চার সেই দাবি পাহাড়ের অনেক সাধারণ মানুষ মানতে নারাজ।

তাই আজ, মঙ্গলবার একই পথে পিরবেন প্রৌঢ় মানুষটি। হাতে লাঠি নিয়ে সকাল ৯টায় হাঁটা শুরুর ইচ্ছে রয়েছে তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE