Advertisement
E-Paper

সমাজমাধ্যমে ১৬১ জনের গ্রুপ খুলে মাধ্যমিকের প্রশ্ন ফাঁসের চক্রান্ত! ধরা পড়ল ‘অ্যাডমিন’: পর্ষদ

শুক্রবার মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল শনিবার, ইংরেজি পরীক্ষা দিনেও।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৬

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

মাধ্যমিকের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় একটি চক্রের হদিস পেল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পর্ষদ কর্তারা জানতে পেরেছেন, সমাজমাধ্যমে গ্রুপ খুলে মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষার প্রশ্ন ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শনিবার। ওই ঘটনায় বেশ কয়েক জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। তাদের মধ্যে এক জন আবার ওই সমাজমাধ্যম গ্রুপের ‘অ্যাডমিন’ও।

শুক্রবার মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল শনিবার, ইংরেজি পরীক্ষার দিনেও। পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে সমাজমাধ্যমে প্রশ্নপত্রের ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। শুক্রবার প্রশ্ন ফাঁসে যে দুই পরীক্ষার্থীর নাম জড়িয়েছিল, তারা মালদহের। শনিবারও ধরা পড়া ১২ জনের মধ্যে ১১ জন ওই জেলার। পর্ষদ জানতে পেরেছে, মালদহের এনায়েতপুর হাই স্কুল থেকে ইংরেজি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। ওই স্কুলে সিট পড়েছিল গোপালপুর হাই স্কুলের পরীক্ষার্থীদের। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করার পর তাদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। সেই ফোন ঘেঁটে পর্ষদ কর্তারা জানতে পেরেছেন, মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই সমাজমাধ্যমে গ্রুপ খুলে প্রশ্ন ফাঁসের চক্রান্ত করা হয়েছিল।

পর্ষদ সভাপতি রামানুজ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সমাজমাধ্যমের ওই গ্রুপটিতে মোট ১৬১ জন সদস্য রয়েছে। এনায়েতপুর হাই স্কুল থেকে যে ক’জন পরীক্ষার্থীকে ধরা হয়েছে প্রশ্ন ফাঁস করার জন্য, তাদেরই এক জন ওই গ্রুপের ‘অ্যাডমিন’। বাকি সদস্যদের পরিচয় কী, তারা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কি না, সে বিষয়ে পর্ষদের তরফে কিছু জানানো হয়নি। রামানুজের বক্তব্য, ‘‘মালদহে পড়ুয়াদের কাছ থেকে যে সব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষা ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করার জন্য একটা চক্র কাজ করছে। পর্ষদকে কালিমালিপ্ত করার জন্যই এই কাজ। এর বলি হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা।’’

পর্ষদ জানিয়েছে, এনায়েতপুর হাই স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাওয়া ওই সাত পড়ুয়ার পাশাপাশি ভগবানপুর কেবিএস হাই স্কুলের চার জন ও আমগুড়ি রামমোহন হাই স্কুলের এক জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। অভিযোগ, ওই পরীক্ষার্থী এক শিক্ষককে প্রশ্ন পাঠিয়েছিল। শনিবার সব মিলিয়ে ১২টি ফোন বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সব ক’টিই মিলেছে মালদহ থেকে। শুক্রবার বাজেয়াপ্ত হয়েছিল ১৪টি ফোন।

মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রুখতে আগের বছরগুলিতে একাধিক পদক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছিল পর্ষদকে। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ধাঁচে সিরিয়াল নম্বর ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিরিয়াল নম্বর ব্যবহার করা হয় ‘ইউনিক কিউআর কোড’-এর মাধ্যমে। এই কোড সাধারণত যে কোনও মোবাইল বা ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার করে স্ক্যান করা যায় না। বিশেষ সফ্‌টঅয়্যারের মাধ্যমে তা স্ক্যান করতে হয়। প্রশ্নপত্রে থাকা কিউআর কোডের কারণেই শুক্রবার দুই পরীক্ষার্থীকে ধরতে পেরেছিল পর্ষদ।

শনিবার দেখা গিয়েছে, ধরা পড়ার হাত থেকে বাঁচতে কৌশল করে প্রশ্নপত্রে থাকা কিউআর কোড লাল কালি দিয়ে কেটে দিয়েছিল অভিযুক্ত পরীক্ষার্থীরা। তবে তাতে লাভ হয়নি। পর্ষদ জানিয়েছে, বিশেষ প্রযুক্তিতে ওই লাল কালি মুছে ফেলা হয়। এর পর কিউআর কোড স্ক্যান করে পর্ষদের কর্মীরা জানতে পারেন, কোন জায়গার কোন পরীক্ষার্থীর হাতে ওই প্রশ্নপত্র পড়ে। কারণ, ওই কোডে যে সিরিয়াল নম্বরটি ‘এনক্রিপটেড’ রয়েছে, সেই কোড দেখেই বোঝা যায়, প্রশ্নপত্রটি কোন জেলায় গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কোন স্কুলে ওই প্রশ্নপত্র গিয়েছিল, তা-ও জানা যায় সিরিয়াল নম্বর থেকে। তার পর স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গিয়েছে, কোন পরীক্ষার্থীর হাতে সেই প্রশ্নপত্র পড়েছিল।

মাধ্যমিক শুরুর প্রথম দু’দিনেই পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের শিক্ষা মহলের একাংশ। তবে পুরো বিষয়টি চক্রান্ত বলেই মনে করছেন মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ। তাঁর কথায়, ‘‘যারা এই কাজ করছে তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই করছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেমনটা বাংলা পরীক্ষার সময়েও করা হয়েছিল। বিষয়টা আমরা খতিয়েও দেখছি। তার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব পরীক্ষার্থী মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। শুধুমাত্র মালদহ জেলা থেকেই কেন এমনটা হচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। কিউআর কোড মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে মানে স্পষ্ট যে, সচেতন ভাবেই করছে। এটা স্বাভাবিক নয়। মনে হয়, বড় চক্রান্ত চলছে।’’

Madhyamik Exam 2024
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy