আরও পড়ুন: দেশজ রাজনীতির সৌরমণ্ডলে কেডি হলেন আধুনিক মগনলাল মেঘরাজ
দ্বিতীয় জন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। কে ডি-র জিজ্ঞাসার কথা শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রশ্নটা বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উনি করুন। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীই ওঁকে সাংসদ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই তাঁকে বিমান, হেলিকপ্টারে দেখা যেত। মুখ্যমন্ত্রী যাঁকে সাংসদ করেছিলেন, তিনি কী কাজ করেছেন যে, তাঁকে ইডি গ্রেফতার করছে? জবাব মুখ্যমন্ত্রীকে দিতে হবে।’’
তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য যে কাউকে সিবিআই বা ইডি গ্রেফতার করলে বলা হত, ভোটের আগে ফের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তৃণমূল অভিযোগ তুলত, সিবিআই, ইডি-কে রাজনৈতিক উদ্দেশে কাজে লাগাচ্ছে মোদী সরকার। কিন্তু কে ডি-র গ্রেফতার হওয়া নিয়ে তৃণমূল সেই অভিযোগ তুলছে না। কারণ, ২০১৬-য় রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে নারদ কেলেঙ্কারির ‘স্টিং অপারেশন’-এর পিছনে কে ডি-র হাত থাকার ‘অভিযোগ’ সামনে আসার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ বন্ধ। দলের সাংসদ সৌগত রায়ের মন্তব্য, ‘‘কে ডি সিংহ অনেক দিন ধরেই আমাদের সঙ্গে নেই, সংসদেও নেই। তাই এই বিষয়ে কিছু বলার নেই।’’
কিন্তু তা সত্ত্বেও এ বার বিধানসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে যাওয়ার পরে আচমকা কে ডি গ্রেফতার হওয়ায় অনেকের প্রশ্ন, এর পিছনে কি রাজনৈতিক খেলা রয়েছে? নাকি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র? কে ডি-র জবাব, ‘‘এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’’
আরও পড়ুন: চেনটা ছিঁড়ে গেল, বকলসটা এখনও গলায় আটকে, বলছেন শিশির
নারদ-কাণ্ডে তৃণমূল নেতাদের ঘুষের টোপ দিতে কে ডি-ই ৮০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল। তার পরই তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক যোগাযোগ, এমনকি কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ করে দেন তৃণমূল নেতারা। তবে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। কারণ, তা হলে কে ডি-র পক্ষে অন্য দলে যোগ দেওয়া সহজ হত। দলত্যাগ বিরোধী আইনের জন্য কে ডি নিজেও দল ছাড়তে পারেননি। যাতে সাংসদ পদ খোয়াতে না-হয়।
বিশেষ প্রয়োজনে রাজ্যসভায় হাজির থাকার জন্য কে ডি-কে দলের তরফে ‘হুইপ’ দেওয়া হত। তাঁকে কিছুটা চাপে রাখতে। কিন্তু মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে অধিকাংশ সময়ে গরহাজির থাকতেন তিনি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাকে হুইপ দেওয়া হয়েছে। কে ডি নিজেও কখনও সংসদে তৃণমূলের দফতরে যাননি। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে এলেও তাঁর আশেপাশে দেখা যায়নি কে ডি-কে। এই সব কিছুর পরেও এ দিন ফের তাঁর নাম ভেসে উঠল।
পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া মামলায় প্রধান অভিযুক্তের তালিকায় তিন নম্বরে কে ডি-র নাম ছিল। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘সাত বছর আগে মামলা হয়েছিল। এত দিন পরে ভোটের সময়ে কে ডি সিংহকে গ্রেফতারের কথা মনে পড়ল। এগুলো ‘গট আপ’। ভোট এলেই অর্থ লগ্নি সংস্থা নিয়ে তদন্তে বিজেপি নড়েচড়ে বসে। এই নাটক বন্ধ হোক। দোষীরা শাস্তি পাক, আর প্রতারিতরা ফেরত পান টাকা।’’ ২০১৬ সালে কে ডি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। তাঁর প্রতিক্রিয়াও এ দিন সাংবাদিকদের কাছে জানতে চেয়েছেন কে ডি।
সাংসদ থাকাকালীন কে ডি অন্য সাংসদদেরও বাড়ি থেকে আনা খাবার খাওয়াতেন। বুধবার কোর্টে তাঁর বাড়ি থেকে স্যান্ডউইচ এসেছে। আইনজীবী জানান, কে ডি-র বয়স ষাটের বেশি। সত্তর রকমের খাবারে অ্যালার্জি। তাই ইডি-র হেফাজতে থাকাকালীন বাড়ির খাবারে অনুমতি দেওয়া হোক। কোর্টের নির্দেশ, মেডিক্যাল নথি দেখাতে পারলে, অনুমতি মিলবে।