আদিবাসী বিক্ষোভের জেরে বৃহস্পতিবারও খনন কাজ শুরু করা গেল না ডেউচা-পাঁচামিতে। এই তিন দিন ধরে কাজ বন্ধ সেখানে। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে গত মাসে খনি গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল ডেউচায়। কিন্তু প্রথম দিনেই স্থানীয়দের বাধা পায় প্রশাসন। গ্রামে-গ্রামে শিবির করে সেই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হয়। প্রাথমিক বাধা কাটিয়ে পুরোদমেই কাজ চলছিল। কিন্তু মঙ্গলবার মহম্মদবাজারের চাঁদা মৌজায় খনির প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ বন্ধ করিয়ে দেন প্রকল্প এলাকা ঘেঁষা আদিবাসী-প্রধান সাগরবান্দির বাসিন্দাদের একাংশ (মূলত মহিলারা)। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ‘জট’ কাটেনি। ফলে কাজ শুরু করা যায়নি।
তৃণমূল অবশ্য এই বিক্ষোভকে ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ বলে মনে করছে না। শাসকদলের দাবি, কিছু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে অশান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই অশান্তি ‘সাময়িক’ বলেই দাবি তৃণমূলের। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ডেউচা-পাঁচামিতে ইচ্ছাকৃত গোলমাল পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে। ওই প্রকল্প যে হেতু রাজ্যের একটা সম্পদ, যে হেতু ভবিষ্যতের সমৃদ্ধির আকর, তাই মানুষকে ভুল বুঝিয়ে কাজ আটকে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যারা রাজ্যের সমৃদ্ধি চায় না, তারা এ সব করছে। এ সব কেটে যাবে। বেশি দিন মানুষকে ভুল বুঝিয়ে রাখতে পারবে না।’’
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ৩৪০০ একর জমিতে কয়লা উত্তোলনের জন্য ২০টি গ্রাম উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই গ্রামগুলিতে সব মিলিয়ে প্রায় ২১ হাজার মানুষের বসবাস। তাঁদের অধিকাংশই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। পরিবেশ ধ্বংসের আশঙ্কায় তাঁরা ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ। বোলপুর থেকে আদিবাসী নেতারা ডেউচা যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের আটকে দিয়েছে বলেও অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনার চেষ্টা চালানো হলেও গ্রামবাসীরা তাতে রাজি হননি। বীরভূম জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিকের দাবি, ‘‘মানুষের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে সরকার এখানে কিছু করছে না। কেউ ভুল বুঝিয়েছেন। তা ভাঙিয়ে কাজ শুরু করা যাবে। এত বড় প্রকল্পে এমন ঘটনা ঘটতেই পারে।’’ প্রশাসন সূত্রের দাবি, সমস্যা এড়াতেই এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি মহম্মদবাজারে প্রস্তাবিত ডেউচা-পাঁচামিতে খনি গড়ার কাজ শুরু করেছিল প্রশাসন। প্রাথমিক ভাবে চাঁদা মৌজায় সরকারি জমিতে কয়লা ভান্ডারের উপরে মজুত কালোপাথর (ব্ল্যাকস্টোন) উত্তোলনের কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম দিনই স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল প্রশাসনকে। তখন স্থানীয়েরা জানিয়েছিলেন, তাঁদের জমির নথি-সহ নবীকরণ-সহ বেশ কিছু দাবি রয়েছে। বার বার আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরা ছাড়াও ওই আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আলোচনার পরে জেলা ও ব্লক প্রশাসন গ্রামে গ্রামে শিবির করে ওই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করে। প্রাথমিক বাধা কাটিয়ে কাজও শুরু হয়েছিল। তার পর আবার এ ভাবে বাধা আসার কারণ এখনও স্পষ্ট নয় বলেই প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের মত। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। তাঁদের অনুমান, কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে।