দাগ কাটার মতো কোনও আন্দোলন নেই। সংগঠনের হালও ন়ড়বড়ে। তার উপরে গোষ্ঠী-বিভাজন! এই অবস্থার মধ্যেও মাসদুয়েক আগে পুরভোটে কলকাতায় সামান্য ভোট বেড়েছে। এ বার সেই কলকাতা জেলা সিপিএমের প্রতিই বিশেষ নজর দিল আলিমুদ্দিন। বাংলা থেকে সিপিএমের পলিটব্যুরোর তিন সদস্যই কলকাতা জেলা দলের কাজ দেখভাল করবেন। তাঁদের সঙ্গেই দায়িত্বে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
এ রাজ্য থেকে পলিটব্যুরোর সব সদস্য একটি জেলার সংগঠনের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন— পশ্চিমবঙ্গের ২০টি জেলার মধ্যে আর কোথাও এমন নজির নেই! দলে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের দায়িত্ব এ বার নতুন করে যে ভাবে বণ্টন করেছে আলিমুদ্দিন, তাতে কলকাতা সিপিএমের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পাঁচ জনকে। বুদ্ধবাবু ছাড়াও আছেন পলিটব্যুরোর তিন সদস্য— রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সাংসদ মহম্মদ সেলিম। তাঁদের সঙ্গেই দায়িত্বে আছেন রবীন দেবও। যদিও রবীনবাবু এখন আর সরাসরি কলকাতা জেলার সঙ্গে যুক্ত নন, জেলার সম্পাদকমণ্ডলী থেকেও তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘বুদ্ধদা’র শরীর এখন একটু ভাল। কলকাতার মূল কাজ তিনিই দেখবেন। অন্য নেতারা তাঁকে সহযোগিতা করবেন।’’
আলিমুদ্দিন এ ভাবে কলকাতা জেলার উপরে নজর দেওয়ায় সিপিএমের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, পারফরম্যান্সের বিচারে কলকাতা অন্য অনেক জেলার থেকে পিছিয়ে। তৃণমূল-পরিচালিত কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে অজস্র হাতিয়ার পেয়েও শহরে আন্দোলন দানা বাঁধেনি। এমনকী, রঘুনাথ কুশারী জেলা সম্পাদক পদ থেকে সরে যাওয়ার পরেও তরুণ মুখ আনা যায়নি। গোষ্ঠী-বিবাদ মেটাতে না পেরে জেলা সম্পাদক করতে হয়েছে সত্তরোর্ধ্ব নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে। এমন হতশ্রী দশা যে জেলা সংগঠনের, সদর দফতরের দোরগোড়ায় বলেই কি সেখানে নজর দিচ্ছে আলিমুদ্দিন?
রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের ব্যাখ্যা, ‘‘কলকাতায় আন্দোলনের খামতি আছে ঠিকই। এমনও নয় যে, আগামী বিধানসভা ভোটে রাতারাতি কলকাতায় সব ঠিক হয়ে যাবে! কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতা এবং নজিরবিহীন সন্ত্রাসের মধ্যেও কলকাতা পুরভোটে দলের ফল উৎসাহজনক হয়েছে। তাকেই আরও সংহত করে আমরা এখন থেকে পাঁচ বছর পরের পুরভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে চাইছি।’’ বস্তুত, কলকাতার পুরভোট যে পশ্চিমবঙ্গের জন্য তাঁদের কাছে নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। তাঁর যুক্তি, ‘‘২০০৯ থেকে প্রতি বছরই প্রায় বাংলায় কোনও না কোনও নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু ২০০৯-এর পরে এই ২০১৫-তেই আমরা কলকাতা পুরসভার ভোটে প্রথম দেখলাম, আমাদের ভোট আগের চেয়ে একটু বেড়েছে।’’ ইয়েচুরির বক্তব্য, ভোটব্যাঙ্কে ধস ঠেকিয়ে জনসমর্থন পুনরুদ্ধার করে দলকে নতুন করে গড়তে হবে। সাধারণ সম্পাদকের মতে, ‘‘প্রথম কাজটা একটু হয়েছে, এ বার বাকিগুলোয় নজর দিতে হবে।’’
আন্দোলনের নিরিখে তেমন অবদান রাখতে না পারলেও দলের নয়া রাজ্য কমিটিতে ৬ জন প্রতিনিধি পেয়েছে কলকাতা সিপিএম। নিরঞ্জনবাবু, মানব মুখোপাধ্যায়, অনাদি সাহুর মতো পুরনোদের পাশাপাশি গত রাজ্য সম্মেলন থেকে রাজ্য কমিটিতে সুযোগ পেয়েছিলেন রূপা বাগচি। পরে আবার কল্লোল মজুমদারকে কমিটিতে আনা হয়েছে, স্থায়ী আমন্ত্রিত করা হয়েছে এসএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রী মধুজা সেন রায়কে। মধুজা এ বারই প্রথম কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য হয়েছেন। দু’মাসের মধ্যেই রাজ্য কমিটিতে। যেখানে সম্পাদক-কেন্দ্রিক সংগঠন হয়েও এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক রাজ্য কমিটিতে জায়গা পাননি! এক দিকে মধুজা এবং অন্য দিকে দলে কট্টরপন্থী বলে পরিচিত, প্রয়াত চিত্তব্রত মজুমদারের ভ্রাতুষ্পুত্র কল্লোলকে রাজ্য কমিটিতে পাঠিয়ে কলকাতা জেলা সিপিএমের সব শিবিরকে ‘খুশি’ রাখার চেষ্টা হয়েছে বলে দলের একাংশের ব্যাখ্যা।
একাংশ অবশ্য বলছেন, এ বারই প্রথম কলকাতার জেলা সম্পাদক সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা পাননি। সেই অভাবই পুষিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য কমিটিতে সব মহলের প্রতিনিধিত্ব রেখে! নামে ভারী হওয়ার পরে এ বার কলকাতার কাজের ধার দেখার অপেক্ষা দলে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy